নির্দেশই সার, হেলমেট ছাড়াই অবাধে যাতায়াত

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে ‘সেফ ড্রাইভ, সেফ লাইফ’ কর্মসূচি পরে রাজ্যের মতো মালদহ জেলাতেও ব্যাপক হইচই শুরু হয়েছিল হেলমেট নিয়ে। ডিএসপি পদমর্যদার অফিসারেরা নিজেরাই রাস্তায় নেমে ধরপাকড় শুরু করেছিলেন।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

মালদহ শেষ আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৩৯
Share:

গাঁধীগিরি: সেফ ড্রাইভ সেভ লাইফ সচেতনতায় ফোয়ারা মোড়ে স্বেছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা। নিজস্ব চিত্র

মালদহের কালিয়াচকের নওদা যদুপুর। জাতীয় সড়কের ধারেই রয়েছে একটি পেট্রোল পাম্প। আর পাম্পে ঢুকতেই সাইন বোর্ডে লেখা রয়েছে ‘নো হেলমেট, নো পেট্রোল’। সেই সাইন বোর্ডের নিচেই দাঁড়িয়েই বিনা হেলমেটে আসা এক মোটরবাইক চালককে পেট্রোল দিচ্ছেন এক কর্মী।

Advertisement

ওই ব্যক্তি যেতেই মোটরবাইকে হাজির তিন যুবক। তাঁদেরও অবাধে পেট্রোল দিলেন ওই কর্মী। কেন হেলমেট ছাড়া পেট্রোল দেওয়া হচ্ছে? ওই কর্মীর জবাব বলেন, “শুধু এই পাম্পই, কালিয়াচকের সমস্ত পাম্পেই বিনা হেলমেটে তেল দেওয়া হয়। আর সেই পাম্পে গিয়েই ছবি তুলবেন।” সেই সঙ্গে তিনি এও বলেন, “কালিয়াচকের বহু বাইক চালককে হেলমেট প়রাতে ব্যর্থ পুলিশই।”

যদিও কালিয়াচকে হেলমেট পড়ার রেওয়াজ না থাকার পেছনে পুলিশকেই দুষেছেন সাধারন মানুষের একাংশ। তাঁদের দাবি, কালিয়াচকে হেলমেট নিয়ে সচেতনতা মূলক প্রচার নেই বললেই চলে। যার জন্য প্রায় হেলমেটহীন মোটর বাইক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির মতো ঘটনা ঘটছে।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে ‘সেফ ড্রাইভ, সেফ লাইফ’ কর্মসূচি পরে রাজ্যের মতো মালদহ জেলাতেও ব্যাপক হইচই শুরু হয়েছিল হেলমেট নিয়ে। ডিএসপি পদমর্যদার অফিসারেরা নিজেরাই রাস্তায় নেমে ধরপাকড় শুরু করেছিলেন। শহরের সঙ্গে গ্রামগঞ্জেও নিয়ম করে চলছিল ধরপাকড়। হেলমেট ছাড়া পাম্পগুলিতে পেট্রোল দেওয়ার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল। এখনও সেই বোর্ড ঝুলছে জেলার সমস্ত পাম্প গুলিতে। পুলিশ প্রশাসনের এমন কড়া পদক্ষেপের ফলে হেলমেট কেনার হিড়িক পড়ে গিয়েছিল জেলা জুড়ে। এখনও ইংরেজবাজার, পুরাতন মালদহ সহ বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৭০ শতাংশ মানুষই হেলমেট প়রে বাইক চালাচ্ছেন বলে দাবি পুলিশের। তবে ব্যতিক্রম যেন শুধু কালিয়াচক। এখানে যেন নিয়ম ভাঙায় রেওয়াজ হয়ে উঠেছে। কালিয়াচকের চৌরঙ্গি মোড়, সুজাপুর, জালালপুর, মোজমপুর, নওদা যদুপুর, ১৬ মাইল ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের এই মোড় গুলিতে থাকলেই দেখা যাবে তিনজন যাত্রী নিয়ে ছুটছে বাইক। শুধু তিনজনই নয়, চারজন নিয়েও বাইক ছুটতে দেখা যায়। যদিও চালক কিংবা আরোহী কারও মাথাতেই নেই হেলমেট।

হেলমেটহীন মোটর বাইক দুর্ঘটনায় তাই প্রাণহানির ঘটনাও ঘটছে। গত, মঙ্গলবার ভোরে কালিয়াচকের নওদা যদুপুরে মর্মান্তিক পথ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় দুই মোটরবাইক চালকের। তাঁদের কারও মাথাতেই হেলমেট ছিল না। যদিও এর জন্য পুলিশ প্রশাসনের ভূমিকাকেই দায়ী করেছেন সাধারন মানুষ। অভিযোগ, নিয়মিত ধরপাকড়ের পাশাপাশি সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন।

কেন তাঁরা হেলমেট ছাড়া তেল দেন? কালিয়াচকের এক পেট্রোল পাম্পের মালিক বলেন, “হেলমেট ছাড়া পেট্রোল দিতে অস্বীকার করলে জুটবে গালিগালাজ। এমনকী, মারধরও করার হুমকি দেওয়া হয়। তাই তেল না দেওয়া ছাড়া উপায় নেই আমাদের।” মালদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) দীপক সরকার বলেন, “সারা বছরই আমাদের অভিযান, সচেতনতামূলক প্রচার চলে। প্রয়োজনে কালিয়াচকে আরও প্রচার, অভিযান চালানো হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন