হাত তুলে ভোট অন অ্যাকাউন্ট সমর্থন করছেন বাম ও কংগ্রেস কাউন্সিলরেরা। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।
বাম কংগ্রেস জোট চিত্র ফুটে উঠল শিলিগুড়ি পুরসভার ‘ভোট অন অ্যাকাউন্টস’ পাশের বৈঠকেও।
বৃহস্পতিবার বিরোধী তৃণমূল শূন্য বৈঠকে বাম এবং কংগ্রেস কাউন্সিলররা মিলিত ভাবে হাত তুলে ‘ভোট অন অ্যাকাউন্টস’ পাশ করলেন শিলিগুড়ি পুরসভায়। ওই বৈঠক অবৈধ বলে অভিযোগ তুলে বয়কট করেন বিরোধী তৃণমূল কাউন্সিলররা। তৃণমূল পরিষদীয় দলনেতার অফিসে বসে ছিলেন। বৈঠকে উপস্থিত দুই বিজেপি কাউন্সিলর অবশ্য ভোট অন অ্যাকাউন্টের প্রস্তাব সমর্থন করেননি। বরং তারা বাম পুরবোর্ডের কাজকর্ম নিয়ে সরব হয়েছেন। তৃণমূল কাউন্সিলরেরা এ দিন বৈঠকে এসে বিরোধিতা করলে বা হইচই করতে চাইলে শাসক দলের কাউন্সিলরদের একাংশ অবশ্য প্রস্তুত হয়েছিলেন মোবাইলে নারদের প্রচার করা তৃণমূল নেতামন্ত্রীদের টাকা নেওয়ার ভিডিও ফুটেজ নিয়ে পাল্টা সরব হওয়ার। তৃণমূল কিছু বলতে তারা সে সব নিয়ে হইচই করতেন বলে কাউন্সিলরদের একাংশই জানিয়েছেন।
এ দিন ভোট অন অ্যাকাউন্টস-এ ৪৪ কোটি ৪৩ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা আয় এবং ৩২ কোটি ৭১ লক্ষ ৬০২৬৪ টাকা খরচের হিসেব পাশ করা হয়। বিরোধী দলনেতা নান্টু পালের অভিযোগ, ‘‘মেয়র এবং চেয়ারম্যান উভয়েই ভোটে দাঁড়িয়েছেন। তাই এই পরিস্থিতিতে মেয়র ভোট অন অ্যাকাউন্টস পেশ করতে পারবেন কি না, আমরা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে পুর কমিশনারকে চিঠি দিয়েছিলাম। মহকুমার রিটার্নিং অফিসারকেও চিঠি দিয়েছিলাম। বুধবার তা জানতে পুর কমিশনারের কাছে গেলেও তিনি স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি। নিয়ম না মেনে মেয়রের ভোট অন অ্যাকাউন্ট পেশ করা আইন বিরোধী বলে আমরা বয়কট করেছি।’’
বিরোধী দলনেতার দাবি, ভোট অন অ্যাকাউন্ট নিয়ে কোনও রকম সমস্যা বা প্রশ্ন উঠলে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়ার নিয়ম রয়েছে পুর আইনে। মেয়র সেই অনুমতি নেননি বলে অভিযোগ। মেয়র, চেয়ারম্যান, পুর কমিশনাররা মিলিত ভাবে এই কাজ করেছেন বলেও অভিযোগ। পুর কমিশনার সোনম ওয়াংদি ভুটিয়া অবশ্য এ নিয়ে কিছু বলতে চাননি। পুরসভার একটি সূত্রেই জানা গিয়েছে, মহকুমার রিটার্নিং অফিসারের দফতর থেকে নান্টুবাবুর অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে পুর কমিশনারের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশিকার যে অংশ মেনে তা করা হয়েছে, তা জানিয়ে উত্তর দেওয়া হয়েছে। রিটার্নিং অফিসারের দফতর থেকে এর পর ভোট অন অ্যাকাউন্ট-এর বৈঠক নিয়ে কোনও বিধি নিষেধের কথা জানানো হয়নি।
এ দিন ভোট অন অ্যাকাউন্টের বাজেট পাশ করতে বেশি সময় লাগেনি। ১৫ মিনিটের মধ্যেই পেশ এবং পাশ হয়ে যায়। পরে মেয়র বলেন, ‘‘বিরোধী তৃণমূলের সৎসাহস থাকলে তারা বৈঠকে উপস্থিত হয়ে বলতে পারতেন। আমি নথি নিয়ে তৈরি ছিলাম। কলকাতার মেয়র প্রার্থী নন? কলকাতা পুরসভার ভোট অন অ্যাকাউন্ট হয়নি? বিরোধী বন্ধুদের দেখে দুঃখ হয়। তাঁরা আইন কানুন কিছু না জেনে যা ইচ্ছে তাই বলছেন। আজ তাদের এই বিরোধিতা ‘ফ্লপ শো’ তে পরিণত হয়েছে।’’
শাসক দল তৃণমূলের ২৩ জন কাউন্সিলর এবং কংগ্রেসের চার জন হাত তুলে বাজেট সমর্থন করেন। কংগ্রেস কাউন্সিলরদের তরফে বরো চেয়ারম্যান সুজয় ঘটক বলেন, ‘‘ভোট অন অ্যাকাউন্ট-এ কর্মীদের বেতন ও প্রতিদিনের কাজের বিষয় জড়িত। এ ক্ষেত্রে বিরোধিতার কোনও জায়গা নেই।’’ বিজেপি’র দুই কাউন্সিলর সমর্থন জানাননি। বিজেপি’র কাউন্সিলরদের পক্ষে খুশবু মিত্তাল জানান, এই বোর্ড শিলিগুড়িতে মডেল করার যে স্বপ্ন দেখছে তা কথাতেই রয়ে যাবে, বাস্তবায়িত হবে না। তিনি নিজে ওয়ার্ডে বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের জন্য গত কয়েক মাস ধরে যে বিভিন্ন দাবি করেছেন তার মধ্যে একটি নিকাশি নালা ছাড়া আর কিছু হয়নি। তাই এ দিন তারা মেয়রের এই ভোট অন অ্যাকাউন্টস প্রস্তাবকেও সমর্থন জানাননি।