বৃহত্তর বামফ্রন্ট অধরা। উল্টে জলপাইগুড়ি পুরসভা নির্বাচনে যে বামফ্রন্ট রয়েছে সেটা রক্ষা করতে শরিক দলের চাপের মুখে আসন ছেড়ে কর্মীদের ক্ষোভ সামাল দিতে প্রার্থী তালিকায় নতুন মুখ এনে চমক দেওয়ার চেষ্টা করল সিপিএম। শুক্রবার বিকেলে ২৫টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৩টির প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেন বামফ্রন্ট নেতৃত্ব। সেখানে সিপিএমের তালিকায় ছাত্র নেতা, শ্রমিক নেতা থেকে দলীয় গাড়ির চালকের নাম রয়েছে। একই ভাবে নতুন মুখে ভরা প্রার্থী তালিকায় তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ নেতা ও কর্মীদের গুরুত্ব দিয়ে ঘাসফুল শিবিরকে অস্বস্তিতে রাখল কংগ্রেস।
বামফ্রন্টের আসন রফার ম্যারাথন আলোচনার শুরু থেকে বৃহত্তর বামফ্রন্ট সম্ভাবনার প্রসঙ্গ উঠলেও তা বেশি দূরে গড়াতে পারেনি। আসন ছেড়ে দেওয়ার দাবি পাল্টা দাবির জটে আটকে স্বপ্ন ভঙ্গ ঘটে। এদিকে সিপিএমের গলায় কাটার মতো বিঁধে ছিল ২৪ নম্বর আসন। ওয়ার্ডের দলীয় সমর্থকরা নিশ্চিত ছিলেন এবারও তাঁদের প্রার্থী হচ্ছে। সেভাবে এলাকার যুব নেতাকে সামনে রেখে প্রস্তুতির শুরু হয়। দেওয়ালে প্রার্থীর নাম ফাঁকা রেখে দলীয় প্রতীক আঁকা হয়। কিন্তু বাদ সাধে শরিক দল। আরএসপি নেতৃত্বের দাবির কাছে নতিস্বীকার করে শেষ পর্যন্ত দেওয়াল মুছে আসনটি ছেড়ে দিতে স্থানীয় সিপিএম কর্মীদের ক্ষোভের পারদ চড়তে শুরু করে।
এসএফআই-এর রাজ্য কমিটির সদস্য প্রদীপ দে, শ্রমিক নেতা কৃষ্ণ সেন, দলীয় গাড়ির চালক, সঞ্জয় পাসোয়ান, গৌরী পাল, কাবেরি চক্রবর্তীর মতো নতুন মুখ তুলে এনে চমক দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। যদিও আসন রফা নিয়ে দলীয় কর্মীদের ক্ষোভের কথা অস্বীকার করেন জেলা বামফ্রন্ট আহ্বায়ক তথা সিপিএম সম্পাদক সলিল আচার্য। তিনি বলেন, “আসনের কিছু পরিবর্তন হয়েছে। সবদিক খতিয়ে দেখে নতুন প্রজন্মকে গুরুত্ব দিয়ে প্রার্থী তালিকা তৈরি করা হয়েছে। তালিকা নিয়ে ক্ষোভ নেই।’’
এদিকে আরএসপি একটি আসন থেকে দুটিতে এগিয়ে গেলেও ফরওয়ার্ড ব্লককে ৪ টি আসন নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। গত নির্বাচনে আরএসপি শুধুমাত্র ১৯ নম্বর আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছে এবার তাঁদের সিপিএম ২৪ নম্বর আসন ছেড়ে দেয়। ফরওয়ার্ড ব্লক লড়াই করছে ১, ১২, ১৬, এবং ১৮ নম্বর আসনে। তবে এদিন ১৬ নম্বর আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি ফরওয়ার্ড ব্লক। তাঁদের ৪ নম্বর আসনে প্রার্থী দিয়েছে সিপিএম। ওই দলের তরফে ১৪ নম্বর আসনটি ফাঁকা রাখা হয়েছে। সিপিআই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে ৫ নম্বর ওয়ার্ডে। ফরওয়ার্ড ব্লকের জেলা নেতা গোবিন্দ রায় দাবি করেন, “পরিচ্ছন্ন তালিকা হয়েছে।”
এদিনই রাজীব ভবন থেকে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে দলীয় প্রার্থী না দিয়ে তালিকা প্রকাশ করে চমক দিয়েছে কংগ্রেস। ওই ওয়ার্ডের সম্ভাব্য তৃণমূল প্রার্থী পুরসভার বিদায়ী চেয়ারম্যান মোহন বসু। তাঁর বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থী হচ্ছেন বিক্ষুব্ধ তৃণমূল নেতা মনোতোষ রায়। কংগ্রেস থেকে মনোতোষবাবুকে সমর্থনের কথা ঘোষণা করা হয়েছে। এর বাইরে এদিন ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল নেতা এদিন অনুগামীদের নিয়ে কংগ্রেসে যোগদান করেন। জেলা কংগ্রেস সভাপতি নির্মল ঘোষ দস্তিদার বলেন, “যে ২৪টি আসনে প্রার্থী দেওয়া হয়েছে তাঁর মধ্যে ১৮টিতে নতুন মুখ রয়েছে। একটি আসনে নির্দল প্রার্থীকে সমর্থন করা হয়েছে।”