আজ, শনিবার গোটা রাজ্যে প্রায় ২৫ লক্ষ পরীক্ষার্থী গ্রুপ ডি পরীক্ষা দেবেন। উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে এই সংখ্যাটা কম নয়। সে জন্য সব ক’টি জেলা প্রশাসনই জানিয়েছে, তারা তৈরি। প্রয়োজনমতো যেমন বাস, টোটো বা অন্যান্য যানবাহনের ব্যবস্থা থাকবে, তেমনই থাকবে সবরকম সাহায্যের সুযোগ। বিভিন্ন জেলায় জেলাশাসক ও মহকুমাশাসকের দফতরে খোলা হচ্ছে কন্ট্রোল রুমও। সরেজমিনে দেখল আনন্দবাজার।
মালদহ
গ্রুপ-ডি পরীক্ষায় মালদহ জেলায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লক্ষ ৩৬ হাজার ৭০৭ জন। ভিন জেলার পরীক্ষার্থী রয়েছেন ৪০ হাজার। জেলার ৩৪৩টি সেন্টারে পরীক্ষা নেওয়া হবে বেলা আড়াইটে থেকে পৌনে চারটে পর্যন্ত। প্রতিটি সেন্টারে এক জন করে ‘ভেনু সুপারভাইজার’ এবং এক জন করে আধিকারিক থাকবেন পরীক্ষায় নজরদারির জন্য। বিশেষ পর্যবেক্ষক থাকছেন একশো জন। জেলা স্তরে ১০ জন আধিকারিককেও রাখা হয়েছে মনিটরিংয়ের জন্য। পরীক্ষাকেন্দ্র ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে ১৬৮৭ জন পুলিশকর্মী মোতায়েন করা হবে। এ ছাড়া থাকছেন ১৪২ জন এসআই ও এএসআই। পরীক্ষার্থীদের সুবিধার্থে জেলার প্রধান সব রেল স্টেশন, বাসস্ট্যান্ডে হেল্প ডেস্ক খোলা হচ্ছে। জেলাশাসক তন্ময় চক্রবর্তী বলেন, ‘‘পরীক্ষা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। শনিবার সমস্ত বাস যাতে জেলার নির্দিষ্ট রুটে চলে, সে ব্যাপারে বাসমালিক সংগঠনগুলিকে বলা হয়েছে।’’ এ দিকে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, শনিবার জেলার সমস্ত প্রাইমারি স্কুল খোলা থাকলেও পড়ুয়ারা যাবে না। একই পদক্ষেপ হয়েছে হাই স্কুলের ক্ষেত্রেও।
শিলিগুড়ি
শিলিগুড়ি মহকুমায় গ্রুপ ডি পরীক্ষায় ১০৪ সেন্টারের দুপুর আড়াই থেকে পৌনে ৪টা অবধি পরীক্ষা হবে। মহকুমার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৫১ হাজারের মতো। মহকুমাশাসক পানিক্কর হরিশঙ্কর জানান, পুলিশের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। ট্র্যাফিক থেকে কেন্দ্রগুলির নিরাপত্তায় আলাদা ফোর্স রাখা হচ্ছে। রাস্তাঘাটে যাতে যানজটে পরীক্ষার্থীদের আটকাতে না হয়, তাই সে দিকে নজর রাখার দায়িত্ব ট্র্যাফিক পুলিশের। পুলিশ সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে প্রশ্নপত্র বিভিন্ন থানায় পৌঁছেছে। সেখান থেকে পরীক্ষার আগে পুলিশি নিরাপত্তায় সেগুলি কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।
উত্তর দিনাজপুর
এই জেলায় ৭৬ হাজার পরীক্ষার্থীর গ্রুপ ডি চাকরির লিখিত পরীক্ষায় বসার কথা রয়েছে। জেলার রায়গঞ্জ, কালিয়াগঞ্জ, হেমতাবাদ, ইটাহার, করণদিঘি, ইসলামপুর, চোপড়া, গোয়ালপোখর-১ ও ২ ব্লকের স্কুল-কলেজ মিলিয়ে ২১২টি কেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়া হবে। পরীক্ষার্থীদের যাতে কেন্দ্রে যেতে সমস্যা না হয়, তার জন্য এ দিন জেলার প্রতিটি ব্লকের বিভিন্ন জায়গা থেকে পরীক্ষাকেন্দ্র সংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত সরকারি বাস চালানো হবে। পরীক্ষার্থীদের কথা মাথায় রেখে বেসরকারি বাস ও ট্রেকারকে বিভিন্ন জায়গায় স্টপেজ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোথাও রাজ্য ও জাতীয় সড়কে যাতে যানজটের সৃষ্টি না হয়, সে জন্য এ দিন জেলাজুড়ে প্রায় ৫০০ পুলিশকর্মী রাস্তায় নামবেন। পরীক্ষার্থী বা তাঁদের অভিভাবকেরা আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়লে বা কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে যাতে অসুস্থ ও জখমদের সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়, তার জন্য জেলার নয়টি ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালকে দ্রুত অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। জেলার সমস্ত ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও হাসপাতালের চিকিত্সক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক আয়েশা রানি বলেন, বিপুল সংখ্যক পরীক্ষার্থী ও তাঁদের অভিভাবকদের সামাল দিয়ে সুষ্ঠু ভাবে পরীক্ষা শেষ করাই প্রশাসনের উদ্দেশ্য।
আলিপুরদুয়ার
আলিপুরদুয়ার জেলায় গ্রুপ ডি পরীক্ষা দেব প্রায় ৪৯ হাজার পরীক্ষার্থী। জেলার ১৪৬টি স্কুলে চলবে পরীক্ষা। দুপুর আড়াইটে থেকে তিনটে বেজে পয়তাঁল্লিশ মিনিট পর্যন্ত চলবে পরীক্ষা। জেলাশাসক দেবীপ্রসাদ করণম জানান, কড়া নজরদারি চলবে। প্রশাসন জানিয়েছে, পরীক্ষার্থীদের জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা থাকবে।
দক্ষিণ দিনাজপুর
জেলার ৮টি ব্লক এবং ৩টি পুরসভা এলাকায় ১৪৪টি স্কুল-কলেজে আজ গ্রুপ ডি চাকরির পরীক্ষায় বসছেন ৫৪ হাজার ২৪ জন। প্রার্থী ও অভিভাবক মিলিয়ে লক্ষাধিক মানুষ যাতে নির্বিঘ্নে পরীক্ষাকেন্দ্রগুলিতে পৌঁছতে পারেন, তার জন্য জেলার সমস্ত সরকারি এবং বেসরকারি বাসের পাশাপাশি অটো, ম্যাজিক গাড়ির মতো ছোট যান নামানো হচ্ছে। শুক্রবার জেলাশাসক সঞ্জয় বসু বলেন, প্রার্থীদের বাড়ির কাছে পরীক্ষাকেন্দ্র দেওয়া হয়েছে, যাতে যাতায়াতের সমস্যা কম হয়। কিছু ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম হলেও দূরবর্তী কেন্দ্রে পৌঁছতেও প্রার্থীদের সমস্যা হবে না। জেলাজুড়ে বিভিন্ন রাস্তার মোড় ও পরীক্ষাকেন্দ্রের কাছে পুলিশের অন্তত ৬০টি হেল্প ডেক্স থাকবে। সঠিক ভাড়া নিয়ে প্রার্থীদের পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছনোর বিষয়ে নজরদারি রাখবেন বিডিও, ব্লকের কর্মী, পুলিশ এবং পরিবহণ দফতরের অফিসারেরা।
কোচবিহার
এই জেলায় পরীক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার। জেলার ২৬৪টি স্কুল ও কলেজ ভবনে পরীক্ষা নেওয়া হবে। পরীক্ষা তদারকির জন্য ৮৪টি দল তৈরি হয়েছে। পরীক্ষা কেন্দ্রগুলিতে পরিদর্শকের দায়িত্বে থাকবেন ৭ হাজার ২৬৫ জন। ওই তালিকায় হাই স্কুল, প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষকরাও রয়েছেন। পরীক্ষার্থীদের সুবিধের জন্য বাড়তি বাস চালাবে এনবিএসটিসি। প্রত্যন্ত এলাকায় যাতায়াতের সমস্যা এড়াতে ছোট গাড়ি চালানোর নিয়েও উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন। কোচবিহারের জেলাশাসক পি উলগানাথন বলেন, “প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।” পরীক্ষার দিন জেলাশাসকের দফতরে কন্ট্রোল রুম খোলা হচ্ছে। ফোন নম্বর: (০৩৫৮২) ২২৭১০১। মহকুমা ভিত্তিক কন্ট্রোল রুমও থাকছে।
জলপাইগুড়ি
সুষ্ঠু ভাবে গ্রুপ ডি পরীক্ষা সম্পন্ন করতে কন্ট্রোল রুম খুলেছে জলপাইগুড়ি জেলা দফতরও। শনিবার এই জেলায় মোট ৮৯ হাজার ১৩৬ জন পরীক্ষা দেবেন। ২১১টি কেন্দ্রে এই পরীক্ষা নেওয়া হবে৷ জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, পরীক্ষা সুষ্ঠু ভাবে শেষ করতে দু’টো কন্টোল রুম খোলা হয়েছে৷ জলপাইগুড়ি জেলাশাসকের দফতরে কন্ট্রোল রুমের নম্বর: (০৩৫৬১) ২৩১০৭৯ এবং মালবাজার মহকুমা শাসকের দফতরের কন্ট্রোল রুমের নম্বর (০৩৫৬২) ২৫৫১২৬ ৷ সকাল দশটাতেই কন্ট্রোল রুম খুলে যাবে বলে জানিয়েছেন প্রশাসনিক কর্তারা৷ জলপাইগুড়ির জেলাশাসক রচনা ভকত বলেন, পরীক্ষাকে ঠিক মতো সম্পন্ন করতে সব রকমের ব্যবস্থা করেছে প্রশাসন৷ তার পরেও যদি কেউ কোনও সমস্যায় পড়েন, তা হলে সঙ্গে সঙ্গে কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হয়েছে৷ জেলা প্রশাসনের এক কর্তা জানান, পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে শনিবার বিভিন্ন এলাকা থেকে যাতে ঠিক ভাবে বাস চলে, সে ব্যাপারে জেলার পরিবহণ দফতরের কর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে তার টিম তৈরি রাখতেও বলা হয়েছে৷ পাশাপাশি, পরীক্ষাকেন্দ্রগুলির চারপাশে ১৪৪ ধারা জারিরও সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন৷ জলপাইগুড়ির পুলিশ সুপার অমিতাভ মাইতি বলেন, সমস্ত পরীক্ষাকেন্দ্রেই কড়া নিরাপত্তা থাকবে৷