আর্সেনিক-মুক্ত জল প্রকল্পকে বিপাকে ফেলে শুকলো ফুলহার

ফুলহার নদীর জল পরিশোধিত করে আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্প গড়ে তোলা হয়েছিল। কিন্তু, গরম পড়তেই নদী শুকিয়ে গিয়েছে। প্রকল্প থেকে ২০০ মিটার দূরে সরে গিয়েছে ফুলহার। জলের অভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে মালদহের রতুয়ার বালুপুর আর্সেনিক মুক্ত জল সরবরাহ প্রকল্প। গরমের শুরুতেই নদীর জল শুকিয়ে প্রকল্পের জল সরবরাহ অনিয়মিত হয়ে পড়ায় বিপাকে পড়েছেন রতুয়ার কাহালা ও দেবীপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দারা।

Advertisement

বাপি মজুমদার

চাঁচল শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৫ ০৪:৪৩
Share:

আর্সেনিক মুক্ত প্রকল্পের নদী শুকিয়ে গিয়েছে। —নিজস্ব চিত্র।

ফুলহার নদীর জল পরিশোধিত করে আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জল সরবরাহ প্রকল্প গড়ে তোলা হয়েছিল। কিন্তু, গরম পড়তেই নদী শুকিয়ে গিয়েছে। প্রকল্প থেকে ২০০ মিটার দূরে সরে গিয়েছে ফুলহার। জলের অভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে মালদহের রতুয়ার বালুপুর আর্সেনিক মুক্ত জল সরবরাহ প্রকল্প। গরমের শুরুতেই নদীর জল শুকিয়ে প্রকল্পের জল সরবরাহ অনিয়মিত হয়ে পড়ায় বিপাকে পড়েছেন রতুয়ার কাহালা ও দেবীপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দারা।

Advertisement

অবশ্য এলাকায় পানীয় জলে যে শুধু আর্সেনিকের প্রভাব রয়েছে তা নয়। পানীয় জলের বিকল্প ব্যবস্থাও প্রায় নেই বললেই চলে। ফলে প্রকল্পের জল সরবরাহ ব্যাহত হয়ে পড়ায় বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের পাশাপাশি উদ্বিগ্ন জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর ও প্রশাসনও। খাল কেটে নদীর জল প্রকল্পের কাছে নিয়ে কোনও রকমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করা হলেও তাতে সমস্যা মিটছে না। ফলে, স্থায়ী সমাধান না হলে প্রতি বছর একই সমস্যা তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ জন্য প্রকল্পের জল উত্তোলক পাম্প নদীর আরও গভীরে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন। সেই চেষ্টা চলছে বলে প্রশাসন ও জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে। জনস্বাস্থ্য ও কারিগরি দফতরের চাঁচলের সহকারি বাস্তুকার তরুব্রত রায় বলেন, “নদীর জল শুকিয়ে যাওয়ায় সমস্যা তৈরি হয়েছে। তবু খাল কেটে সমস্যা সামাল দেওয়ার চেষ্টা চলছে।”

জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৮ সালে ২২ কোটি টাকা খরচ করে বালুপুরে আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জল সরবরাহের ওই প্রকল্পটি গড়ে তোলা হয়। প্রকল্পটি রয়েছে ফুলহারের ধারে কাহালায়। প্রকল্পের অধীনে এলাকায় রয়েছে তিনটি জলাধার। ফুলহারের জল তুলে প্রথমে তা ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে তুলে পরিশোধিত করে জলাধারগুলিতে সংরক্ষণ করা হয়। তার পর দিনে দু’বার তা সরবরাহ করা হয়। প্রকল্পের আওতায় রয়েছেন ৪৫ হাজার মানুষ।

Advertisement

কারিগরি দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, ফুলহার নদী প্রকল্পের জল উত্তোলক পাম্প থেকে ২০০ মিটার দূরে সরে গিয়েছে। গরমে প্রতি বছর কমবেশি সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। কিন্তু এ বার শুরুতেই বড় রকমের সমস্যার মুখে পড়েছে প্রকল্পটি। ফলে, খাল কেটে জল উত্তোলক পাম্পের কাছে জল নিয়ে আসতে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। তাতে প্রয়োজনীয় পানীয় জল সরবরাহ করা যাচ্ছে না। তা ছাড়া মাঝে মধ্যেই পাম্পে বালি ঢুকে সরবরাহ অনিয়মিত হয়ে পড়ছে। রতুয়া-১ ব্লকের বিডিও নীলাঞ্জন তরফদার বলেন, “জেলার উন্নয়ন সংক্রান্ত সভায় বিষয়টি একাধিক বার তোলা হয়েছে। স্থায়ী সমাধানে উদ্যোগী হয়েছে।”

বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রকল্প থেকে যেটুকু জল সরবরাহ করা হচ্ছে তাতে সমস্যা মিটছে না। দূরের এলাকায় জল পৌঁছত না। আবার কোনও দিন সরবরাহ করাই হচ্ছে না। ফলে বাসিন্দাদের মাঠের স্যালো থেকে কোনও রকমে কাজ চালাতে হচ্ছে।

জলাধারে তা পৌঁছনোর আগেই বাসিন্দাদের একাংশ আবার পাইপ ফুটো করে জল সংগ্রহ করছেন। তাতে অপচয়ের পাশাপাশি জল দূষিত হওয়ার সম্ভাবনাও থাকছে। কিন্তু এমন পরিস্থিতিতেও কারও কোনও হেলদোল নেইবলে অভিযোগ।

এলাকার বাসিন্দা দীপক বিশ্বাস, রানা দাসরা বলেন, “প্রকল্প হওয়ার পর ভেবেছিলাম এ বার পানীয় জলের সমস্যা মিটবে। কিন্তু গরমে প্রতি বছর আমাদের একই সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।” দেবীপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান নার্গিস বিবি বলেন, “জলের চাপ কম থাকায় বহু এলাকায় পানীয় জল পৌঁছচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে সমস্যার কথা জানিয়েছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন