এক মাসেই শীতলপাটির ব্যবসায় দু’কোটির ক্ষতি

কারও ঘরে মজুত রয়েছে পাটি। কারণ হাটে নিয়ে গেলেও খদ্দের নেই। বোঝা বেঁধে তা ফের ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হচ্ছে বাড়িতে। টানা এক মাসের বেশি সময় ধরে পাটির কেনা-বেচা তলানিতে চলে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে কোচবিহারের ধলুয়াবাড়ির হাজার হাজার পাটি শিল্পী। গত এক মাসে প্রায় দু’কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন তাঁরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৬ ০২:৫৩
Share:

কারও ঘরে মজুত রয়েছে পাটি। কারণ হাটে নিয়ে গেলেও খদ্দের নেই। বোঝা বেঁধে তা ফের ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হচ্ছে বাড়িতে। টানা এক মাসের বেশি সময় ধরে পাটির কেনা-বেচা তলানিতে চলে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে কোচবিহারের ধলুয়াবাড়ির হাজার হাজার পাটি শিল্পী। গত এক মাসে প্রায় দু’কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন তাঁরা।

Advertisement

কোচবিহার ১ নম্বর ব্লক পাটি শিল্পী সমবায় সমিতির সম্পাদক গোবিন্দ দে বলেন, “এমন ভয়ঙ্কর অবস্থার মধ্যে কখনও পড়তে হয়নি। পাটি শিল্পীরা চরম দুর্ভাবনায় দিন কাটাচ্ছেন। হাটে তো কেনাবেচা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে।”

সমবায় সমিতি সূত্রের খবর, পাটি বিক্রির জন্য প্রতি সপ্তাহে ঘুঘুমারিতে দু’দিন করে হাট বসে। সেখানে ধলুয়াবাড়ি সহ নানা জায়গা থেকে পাটি নিয়ে আসেন বাসিন্দারা। সেই পাটি কিনে কলকাতা, দিল্লি, মুম্বই, চেন্নাই সহ ভিনরাজ্যের নানা জায়গায় পাঠান ব্যবসায়ীরা। আগে প্রতি হাটে প্রায় চল্লিশ লক্ষ টাকার কারবার হত। ৮ নভেম্বরের পর থেকে বদলে গিয়েছে ছবি। পাটি নিয়ে হাটে আসছেন হাজার হাজার মানুষ। কিন্তু পাটি বিক্রি হচ্ছে না।

Advertisement

জানা গিয়েছে, প্রথম একদিন পুরনো পাঁচশো ও হাজার টাকার নোটে কিছুটা বিক্রিবাটা চলে। পরে কেউই সেই নোট নিতে রাজি হননি। তাতেই সমস্যা বেড়ে যায়। ব্যবসায়ীদের দাবি, হাটগুলিতে দৈনিক বিক্রি নেমে এসেছে দু’লক্ষ টাকায়। পাটি শিল্পী অজিত দত্ত জানান, বাড়িতে পাটি তৈরি করে হাটে বিক্রি করেন। তা থেকে যা আয় হয় তাই দিয়ে সংসার চালান। তিনি বলেন, “দশটি পাটি হাটে নিয়ে গিয়ে তিনটি বিক্রি করতে পেরেছি। দীর্ঘদিন এমন হলে খুব কঠিন অবস্থায় পড়তে হবে।”

ব্যবসায়ীদের অনেকেই জানান, প্রতি হাটে পাটি কেনার জন্য তাঁরা হাতে সব সময় মোটা অঙ্কের নগদ টাকা রাখেন। পাশাপাশি বাইরে পাঠাতেও খরচ লাগে। তাই টাকা অচল হয়ে যাওয়ার পর ব্যাঙ্কের দ্বারস্থ হতে হয় তাদের। কিন্তু ব্যাঙ্কে টাকা জমা দিলেও প্রয়োজনমতো তুলতে পারছেন না তাঁরা। এক ব্যবসায়ী বলেন, “আমার হাতে দু’লক্ষ টাকা নগদ ছিল। সেই টাকার একটি অংশ দিয়ে সামান্য কিছু পাটি কিনতে পারি। বাকি টাকা ব্যাঙ্কে জমা দিয়েছি। কিন্তু ব্যাঙ্ক থেকে তো আর টাকা তুলতে পারছি না। কি করে পাটি কিনব?” আরেক ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ দত্ত বলেন, “আঞ্চলিক ব্যাঙ্কের মাধ্যমেই সমস্ত লেনদেন হয়। সেখান থেকে টাকা নিয়ে পাটি কিনতে হাটে যাই। কিন্তু দিনে পাঁচশো, হাজারের উপরে টাকাই পাচ্ছি না। কি করে ব্যবসা করব।”

ওই এলাকার জেলা পরিষদের সদস্য সুচিস্মিতা দেবশর্মা বলেন, “শুধু ব্যবসায় ক্ষতি নয়, অনেক মানুষের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে। একদিন পাটি বিক্রি বন্ধ থাকলে তিনদিন কষ্টে চলতে হয়।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন