অটিজম পেরিয়ে সফল অতনু

পরীক্ষা চলাকালীন প্রতিদিন আগাগোড়া ছেলের পাশে বেঞ্চে বসেছিলেন মা। লিখতে লিখতে, বলতে বলতে যে ভাবুক হয়ে ওঠে ছেলেটি। হারিয়ে যায় নিজের দুনিয়ায়। তাই তাঁকে পরীক্ষা দেওয়াতে বোর্ডের অনুমতি নিয়ে পাশে বসেছিলেন মা। তিন ঘণ্টার পরীক্ষায় অটিজম আক্রান্ত অতনু পেয়েছিল বাড়তি এক ঘণ্টা। ম্যাকউইলিয়াম হাইস্কুলের ছাত্র অতনু পাল এবার উচ্চমাধ্যমিকে ৩০৫ পেয়েছে।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৬ ০২:৫০
Share:

মায়ের সঙ্গে অতনু। নিজস্ব চিত্র।

পরীক্ষা চলাকালীন প্রতিদিন আগাগোড়া ছেলের পাশে বেঞ্চে বসেছিলেন মা। লিখতে লিখতে, বলতে বলতে যে ভাবুক হয়ে ওঠে ছেলেটি। হারিয়ে যায় নিজের দুনিয়ায়। তাই তাঁকে পরীক্ষা দেওয়াতে বোর্ডের অনুমতি নিয়ে পাশে বসেছিলেন মা। তিন ঘণ্টার পরীক্ষায় অটিজম আক্রান্ত অতনু পেয়েছিল বাড়তি এক ঘণ্টা। ম্যাকউইলিয়াম হাইস্কুলের ছাত্র অতনু পাল এবার উচ্চমাধ্যমিকে ৩০৫ পেয়েছে। অতনুর এই সাফল্যে খুশি ওর পরিবার ও শিক্ষকরা।

Advertisement

চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন অটিজমে আক্রান্তরা নিজেদের মনের জগতে বিচরণ করে। আলিপুরদুয়ারের চিকিৎসক পার্থপ্রতিম দাস বলেন, “একেবারে ছোটতেই এই মানসিক রোগ ধরা পড়ে। মূলত সবার সঙ্গে সর্ম্পক স্থাপন ও কথা বলার ক্ষেত্রে অটিজম শিশুদের সমস্যা হয়। মানসিক বিকাশ ঠিক মত না ঘটায় স্বাভাবিক জীবনে সমস্যা হয়। কথা বলতে বলতে ভাবুক হয়ে ওঠেন এরা।”

এ দিন ফল বের হওয়ার পর অতনুর বাড়ি যান ম্যাকউইলিয়াম হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সুধাংশু বিশ্বাস। তিনি বলেন, “ মাধ্যমিকের সময় অতনু অন্য স্কুলের ছাত্র ছিল। উচ্চমাধ্যমিক ও আমাদের স্কুলে ভর্তি হয়। ওর বাবা ও মা যেভাবে ওকে শিক্ষায় অঙ্গীকারবদ্ধ তা দেখে আমরাও অনুপ্রাণিত হই।” সহকারী প্রধান শিক্ষক কনজ বল্লভ গোস্বামী জানান, এ বছর ওর উচ্চমাধ্যমিকের আসন পড়েছিল হিন্দি হাইস্কুলে। উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদে আবেদন করে পরীক্ষা চলাকালীন ওর মা কাবেরী পালকে ওর পাশে বসে থাকার অনুমতি নেওয়া হয়েছিল। মা পাশে না থাকলে হয়ত অতনু পরীক্ষা দিতে দিতে উঠে চলে যেতে পারে তাই এই ব্যবস্থা ছিল। তাছাড়া পরীক্ষার প্রতি ঘণ্টায় ওর জন্য বাড়তি ২০ মিনিট দেওয়া হয়েছে।”

Advertisement

আলিপুরদুয়ার ২ নম্বর অসম গেটের কাছে বাড়ি রিন্টু পাল ও কাবেরী পালের। তারা জানান, আট মাস বয়সে অতনুর অটিজম ধরা পড়ে। ছবি আঁকা, সাঁতার, তবলা ও হারমোনিয়াম বাজানো শিখেছে ও। তবে অটিজম আক্রান্ত হওয়ায় যেকোনও কাজ করতে করতে নিজের জগতে বিভোর হয়ে যায়। কেউ কোন প্রশ্ন করলে চট করে উত্তর দেয় না। কথা বলার ফাঁকে উঠে চলে যায়।

উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য প্রতিদিন বাড়িতে পড়াশোনা করছে সে। পাশে সর্বক্ষণ বসে থাকতে হয়েছে মাকে। ঘড়ি ধরে চলছে পরীক্ষার প্রস্তুতি। মাধ্যমিকে অতনু ৫৪ শতাংশ নম্বর পেয়েছিল। উচ্চমধ্যমিকে বাংলায় ৬০ ইংরেজিতে ৬০ কম্পিউটার৫৭ ভূগোল ৬৮ ও সংস্কৃতে ৬০ পেয়েছে সে। বাবা রিন্টু পাল জানান, পড়াশোনার জন্য চিকিৎসায় ব্যঘাত ঘটেছে। কিছুদিন পরে দক্ষিণ ভারতে যাবেন চিকিৎসার জন্য। এ বছর কলেজ ভর্তি করবেন, না চিকিৎসার জন্য সময় দেবেন তা নিয়ে চিন্তিত পরিবার। আপাতত রবীন্দ্রনাথের সঞ্চয়িতা পড়তে ব্যস্ত অতনু।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement
Advertisement