পথে: বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার প্রতিবাদে ছবি আঁকছেন শিল্পীরা। কোচবিহারে। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব
একটা নস্টালজিয়ায় ভাসছেন সবাই। আলমারি খুলে তাকের মধ্যে বের করে নিয়ে আসছেন ‘বর্ণপরিচয়’। একটু উল্টেপাল্টে দেখছেন। তার পরে ফিরে যাচ্ছেন সেই পুরনো দিনে। এক সময় সরকারি প্রাথমিক স্কুলগুলিতে পড়ানো হত বর্ণপরিচয়। স্কুলে ভর্তি হওয়ার পরে প্রথম পরিচয় হত সেই বই আর বিদ্যাসাগরের সঙ্গে। তখন থেকেই দুটোই যেন একজন বাঙালি শিশুর চোখে ছবির মতো ফুটে থাকত। এখন বেসরকারি তো বটেই, সরকারি স্কুলগুলি থেকেও উঠে গিয়েছে সেই বর্ণপরিচয়। তার জায়গা নিয়েছে অন্য নানা বই। কিন্তু বিদ্যাজীবীরা জানাচ্ছেন, নতুন বইগুলোরও ভিত্তিভূমি সেই বর্ণপরিচয়। কেউ কেউ দাবি তুলেছেন, বর্ণপরিচয় আবার ফিরিয়ে আনা হোক।
কোচবিহার সুনীতি অ্যাকাডেমি হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষকা মণিদীপা নন্দীবিশ্বাস বলেন, “বিদ্যাসাগরের বর্ণপরিচয় এখন স্কুলে পড়ানো হয় না এটা ঠিক। তবে যে বইগুলো এসেছে সেগুলো বর্ণপরিচয় থেকেই তৈরি হয়েছে। তাই শিশুর হাতে খড়ি বর্ণপরিচয়ই। শিশুর ভিত্তিভূমি। আমরা প্রাথমিকে পড়েছি। সেই বই এখনও রেখে দিয়েছি। ওই বই রাখলে আমার মনে হয় ভাল হবে।”
উত্তর খাপাইডাঙা প্রাথমিক হাইস্কুলের শিক্ষক তথা লেখক নীলাদ্রি বিশ্বাস জানিয়েছেন, এখন ‘বর্ণপরিচয়’ পড়া হয় বাড়িতেই। তিনি বলেন, “মায়ের কাছ থেকেই আমরা মাতৃভাষা শিখি। তেমনই আমাদের বর্ণ পরিচয়। বাংলা ভাষার সঙ্গে যে বই আমাদের পরিচয় ঘটায়। বাড়িতেই আমরা বর্ণপরিচয় পড়ে নিই। পাঁচ বছর বয়সে আমরা স্কুলে ভর্তি হই। আমি মায়ের কাছেই বর্ণপরিচয় পরে ফেলেছিলাম।”
বিদ্যাজীবীদের বক্তব্য, ছোটবেলা থেকেই বিদ্যাসাগরের সঙ্গে েই নপরিচয় কোনও বাঙালিই অস্বীকার করতে পারেন না। বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার পর থেকেই তাই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন সাধারণ মানুষ। সেই সঙ্গে শুরু হয় বিদ্যাসাগরের সৃষ্টি নিয়ে আলোচনাও। চিত্রশিল্পী শ্রীহরি দত্ত বলেন, “যারা এমনটা করেছেন, তাঁরা জানেন না, এখন হাজার হাজার বিদ্যাসাগরের মূর্তি গড়ে উঠবে।” তিনি জানান, তাঁর বর্ণপরিচয় পড়া হয়ে ওঠে বাড়িতেই। মা-বাবার কাছেই ওই বইয়ের সঙ্গে পরিচয় হয়। তাঁর কথায়, “আমার ছেলে এখন ছোট। তাঁর সঙ্গেও পরিচয় করিয়েছি বর্ণপরিচয়-এর।” লেখক দীপায়ন পাঠক দাবি করেন বর্ণপরিচয় আবার প্রাথমিকে ফিরিয়ে আনার।