পঞ্চায়েত প্রধান নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি বাতিলের প্রতিবাদে তৃণমূলের অবস্থান বিক্ষোভ চলাকালীন পঞ্চায়েতের এক মহিলা সদস্যাকে লাথি মেরে ও দুই পুরুষ কর্মীকে ধাক্কা মেরে দফতরে ঢোকার অভিযোগ উঠল বিডিও-র বিরুদ্ধে। বুধবার বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ ওই অভিযোগকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায় ইটাহার বিডিও অফিস চত্বরে। কেন বিডিও দলের কর্মীদের লাথি মেরে ধাক্কা দিয়ে দফতরে ঢুকলেন সেই প্রশ্ন তুলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন আন্দোলনকারী তৃণমূল কর্মী সমর্থকেরা। ওসি পুলিশকর্মীদের নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। আন্দোলনকারীরা বিডিওকে ক্ষমা চাওয়া ও বদলির দাবিতে স্লোগান দিতে থাকেন। পরে বিডিও তাঁদের কাছে ভুল স্বীকার করে নিলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
ওসি নিমশেরিং ভুটিয়া বলেন, ‘‘বিডিও বা আন্দোলনকারীদের তরফে পুলিশে অভিযোগ করা হয়নি। অভিযোগ পেলে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।’’
বিডিও প্রেমা চুকি শেরিংয়ের দাবি, ভিড় এড়িয়ে দফতরে ঢুকতে গিয়ে ভুলবশত কারও গায়ে পা বা ধাক্কা লেগে থাকতে পারে। আমি কাউকে লাথি বা ধাক্কা মারিনি। বিষয়টি আলোচনা করে মিটিয়ে
ফেলা হয়েছে।’’
পুলিশ ও প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ইটাহারের মারনাই পঞ্চায়েতের ১৯টি আসনের মধ্যে ১০টি আসন দখল করে পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন করে তৃণমূল। কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের দখলে যায় ৩টি ও ৬টি আসন। প্রধান নির্বাচিত হন তৃণমূলের তফাজ্জুল হোসেন। এর পর ২১ ফেব্রুয়ারি প্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, অনুন্নয়ন ও অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে তৃণমূলের ৭, কংগ্রেসের ৩ ও বামফ্রন্টের ৪ জন সদস্য অনাস্থা আনেন। পরে বামফ্রন্টের আরও ২ সদস্য অনাস্থার পক্ষে মত দেন। ২৭ ফেব্রুয়ারি প্রশাসনের ডাকা তলবিসভায় তৃণমূল, কংগ্রেস ও বামফ্রন্টের ১৬ জন সদস্যের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে প্রধান অপসারিত হন।
ওই দিন প্রধান-সহ তৃণমূলের বাকি তিন সদস্য তলবিসভায় অনুপস্থিত ছিলেন। এর পর ২৯ ফেব্রুয়ারি বিডিও-র তরফে পঞ্চায়েতের নতুন প্রধান নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি জারি করে সমস্ত সদস্যদের চিঠি পাঠানো হয়। সেই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী এ দিন বেলা ১২টা থেকে প্রধান নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল।
তৃণমূলের অভিযোগ, এ দিন বেলা ১০টা নাগাদ দলের কর্মী সমর্থকেরা ও পঞ্চায়েত সদস্যদের একাংশ ওই পঞ্চায়েতে গিয়ে এ দিনের নির্বাচন বাতিল করে দেওয়ার প্রশাসনিক বিজ্ঞপ্তি দেখতে পান। এর পরেই তাঁরা সেই বিজ্ঞপ্তি বাতিলের প্রতিবাদে বিডিও অফিসের গেটের সামনে অবস্থান বিক্ষোভে বসে পড়েন। ঘটনার জেরে দফতরের কর্মীরা ভিতরে ঢুকতে না পেরে বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে থাকেন। বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ বিডিও আন্দোলনকারীদের ভিড় ঠেলে ভিতরে ঢোকেন।
আন্দোলনকারীদের তরফে ওই পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য সুরাবুদ্দিন শেখের দাবি, বিডিওকে তাঁরা দফতরে ঢুকতে বাধা দেননি। দলের কর্মী সমর্থকেরা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে অবস্থান বিক্ষোভ করছিলেন। তাঁর অভিযোগ, বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ বিডিও জোর করে দফতরে ঢোকার সময় তৃণমূলের এক মহিলা পঞ্চায়েত সদস্যের পা মাড়িয়ে লাথি দিয়ে তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার পর দুই পুরুষ কর্মীকে ধাক্কা মেরে দফতরে ঢুকে পড়েন। তিনি বলেন, ‘‘বিডিও যদি জনপ্রতিনিধি ও দলের কর্মীদের সঙ্গে এমন আচরণ করেন, তা হলে সাধারণ মানুষ কী ভাবে ন্যায়, সুবিচার, সরকারি সুবিধা পাবেন? তাই দলের তরফে বিডিওর ক্ষমা চাওয়ার দাবি তোলা হয়।’’
ইটাহার বিধানসভা তৃণমূল কোর কমিটির সদস্য ইন্দ্রনীল আচার্যের অভিযোগ, বিডিও পঞ্চায়েত সদস্যদের কিছু না জানিয়ে একেবারে শেষ মুহূর্তে এ দিন সকালে বিজ্ঞপ্তি বাতিল করেন। সেই কারণে, অনেক পঞ্চায়েত সদস্য ও দলের নেতা কর্মীরা এ দিন পঞ্চায়েত দফতরে গিয়ে হয়রানির শিকার হয়ে ফিরে যান। তিনি বলেন, ‘‘সরকারি নিয়ম মেনে বিডিও দু’দিন আগে বিজ্ঞপ্তি বাতিল করে সব পঞ্চায়েত সদস্যদের জানিয়ে দিলে এমন ঘটনা এড়ানো
সম্ভব হতো।’’
বিডিওর দাবি, বিধানসভা নির্বাচন ঘোষণা হয়ে যাওয়ায় নির্বাচন বিধি মেনেই এ দিন প্রধান গঠনের বিজ্ঞপ্তি বাতিল করে নতুন বিজ্ঞপ্তি পঞ্চায়েতের সামনে লাগানো হয়েছিল। আপাতত, পঞ্চায়েতের উপপ্রধানকে পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। নির্বাচনের ফল প্রকাশ হওয়ার পর ফের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে।’’