নগর সাজতে সদিচ্ছা মেনেও প্রশ্ন পরিকল্পনায়

দলের অবস্থান খানিকটা এড়িয়ে গিয়েই শাসকদলের স্থানীয় নেতৃত্ব বালুরঘাট শহরের রাস্তা চওড়া করতে উদ্যোগ নিয়েছে বলে মনে করছেন বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের একাংশ। কিন্তু শহরের উন্নয়নে তাঁরা ইতিবাচক মনোভাব নিলেও তাঁদের এড়িয়েই পুরো প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা।

Advertisement

অনুপরতন মোহান্ত

বালুরঘাট শেষ আপডেট: ২০ জুলাই ২০১৫ ০১:৫৫
Share:

উচ্ছেদের পর চওড়া করা হচ্ছে রাস্তা। ছবি: অমিত মোহান্ত।

দলের অবস্থান খানিকটা এড়িয়ে গিয়েই শাসকদলের স্থানীয় নেতৃত্ব বালুরঘাট শহরের রাস্তা চওড়া করতে উদ্যোগ নিয়েছে বলে মনে করছেন বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের একাংশ। কিন্তু শহরের উন্নয়নে তাঁরা ইতিবাচক মনোভাব নিলেও তাঁদের এড়িয়েই পুরো প্রক্রিয়া চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন ব্যবসায়ীরা। বালুরঘাট ব্যবসায়ী সমিতির বক্তব্য, দোকান ভাঙাভাঙি, উচ্ছেদ প্রক্রিয়ার আগে প্রশাসনের তরফে তাদের সঙ্গে কোনও আলোচনা করা হয়নি। সমিতির সাধারণ সম্পাদক হরেরাম সাহা বলেন, ‘‘আমরা সব সময় উন্নয়নের পক্ষে। অন্তত একবার আমাদের সঙ্গে প্রশাসন আলোচনায় বসতে পারতো। যারা এতদিন ধরে রাস্তার ধারে বিক্রিবাটা করছেন তারা তো নতুন করে বসেননি। বহুদিন থেকেই দোকান করে ছিলেন। তাদের পুনর্বাসনের কথা কেন ভাবা হবেনা ?

Advertisement

পুরসভার চেয়ারপার্সন চয়নিকা লাহা বলেন, ‘‘প্রশাসনিক ভবনের জায়গা থেকে উচ্ছেদ হওয়া ২৯টি দোকানের মধ্যে যাদের পুরসভার ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে, তাদের পুরনো জেলখানার জায়গায় বিকল্প পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। বাকি পূর্ত ও সেচ দফতরের জায়গা দখল করে থাকা ব্যবসায়ীদের রাস্তা চওড়ার স্বার্থে পিছিয়ে যেতে বলা হয়েছে। কাউকে উচ্ছেদ করা হয়নি।’’ চয়নিকাদেবীর এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতেই শহরবাসী একাংশের আশঙ্কা, বাম আমলেও একবার রাস্তার ধার থেকে ব্যবসায়ীদের পিছিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বছর ঘুরতেই অধিকাংশ এলাকায় ফের দোকানের ভেতর থেকে দ্রব্যসামগ্রী বাইরে এনে সামনে সাজিয়ে রাখার ফলে ফুটপাথ হারিয়ে গিয়েছে। ফের এমনটা হবেনা কে বলতে পারে ?

শহরের কংগ্রেস পাড়ার প্রবীণ আইনজীবী সুশোভন চট্টোপাধ্যায়ের কথাই ধরা যাক। সুশোভনবাবুর মতে, শহরের কাছারি রোড থেকে কংগ্রেসপাড়া শহরের মূল অংশে দোকানের সামনে রাস্তার উপর মালপত্র সাজিয়ে রাখায় আরও সংকীর্ণ হয়েছে রাস্তা। তিনি বলেন,‘‘ টোটো, মোটর বাইকের ভিড়ে রাস্তায় চলা যায়না। ট্রাফিক ব্যবস্থাও অত্যন্ত দুর্বল। সিভিক ভলান্টিয়ারদের দিয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এ ব্যাপারে তাদের কোনও প্রশিক্ষণ নেই। নিত্য যানজট রোধে পুরসভার তরফেও কোনও উদ্যোগ নিতে দেখা না গেলেও শহরে প্রায় হাজার টোটো কী করে চলছে ? তা নিয়ে ভাবার সময় এসেছে।’’ শহরের মঙ্গলপুর এলাকার বাসিন্দা, কবি বিশ্বনাথ লাহা বলেন, ‘‘শহরের পরিবর্তন চোখে পড়ছে। মানসিকতারও বদল দেখতে পাচ্ছি। আগে কর্তৃপক্ষ শহরের টাউনক্লাব এলাকায় সংকীর্ণ সেতু, ঘাটকালী এলাকায় ফুটব্রীজ তৈরি করে আদতে অর্থের অপচয় করেছেন। তাই পরিকল্পনা করে কাজ করা দরকার।’’

Advertisement

আগামী পঞ্চাশ বছরে শহরের লোকসংখ্যা ও যানবাহনের চাপ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে সেই চিন্তা করে শহরের রাস্তা চওড়া করা জরুরী ছিল বলে স্থানীয় বিধায়ক তথা পূর্তমন্ত্রী শঙ্কর চক্রবর্তী জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘ডানলপ মোড়ে ওভার ব্রিজ তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। ওভার ব্রিজ তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। তাছাড়া প্রথম পর্যায়ে রঘুনাথপুর থেকে থানা মোড় পর্যন্ত রাস্তার পাশে প্রায় ৬ ফুট গভীর গর্ত খুঁড়ে কংক্রিটের ঢালাই করে রাস্তা চওড়া করার কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে। খরচ হয়েছে প্রায় দু’ কোটি টাকা। জেলা পূর্ত দফতরের নির্বাহী বাস্তুকার জ্যোতির্ময় মজুমদার বলেন, ‘‘দ্বিতীয় দফায় থানা মোড় থেকে জেলাশাসকের অফিস হয়ে জলযোগ মোড় এবং তারপরে ডানলপ মোড় থেকে বাসস্ট্যান্ড হয়ে মঙ্গলপুর হিলিমোড় পর্যন্ত একইভাবে রাস্তা চওড়ার কাজের টেন্ডার হয়ে গিয়েছে। সবমিলিয়ে প্রায় ৩ কোটি টাকা খরচ ধরা হয়েছে। জেলাশাসকের অফিস চত্বরে একটি অত্যাধুনিক অডিটোরিয়াম তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। জেলাশাসক তাপস চৌধুরী বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে পূর্ত দফতরকে পাঁচ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। জবরদখল উচ্ছেদের ফলে ওই এলাকায় যে বিশাল জায়গা মিলেছে সেখানে সমবায় ভবন থেকে সিভিল ডিফেন্সের ব্যারাক, হর্টিকালচার, ডিআরডিসি সেলের ভবন তৈরির পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এভাবেই এক ছাতার নিচে প্রশাসনিক দফতর গুলিকে আনা হচ্ছে। ইতিমধ্যে সেখানে সংখ্যালঘু ভবন এবং জেলা খাদ্য ভবনের পাকা তিনতলা বাড়ি তৈরি হয়ে গিয়েছে।’’

পুরসভার তরফেও রাস্তা চওড়ার উদ্যোগের পাশাপাশি আত্রেয়ী নদীর বাঁধকে কাজে লাগিয়ে বিকল্প রাস্তা, পার্কিং প্লেস থেকে নদীর ধারে শহরবাসীর বসার জায়গা সহ একগুচ্ছ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে পুরসভা বালুরঘাট শহরের বাড়িতে পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার প্রকল্পের কাজ শুরু করেছে। বড় বড় পাইপও চলে এসেছে। শহর জুড়ে রাস্তার পাশে গর্ত খুঁড়েই ওই সমস্ত পাইপ বসবে। এদিকে শহরের রঘুনাথপুরের একপ্রান্ত থেকে থানামোড় হয়ে ডানলপ মোড় ও বাসস্ট্যান্ড, মঙ্গলপুর হিলিমোড় পর্যন্ত প্রায় ৬ ফুট মাটি খুঁড়ে রাস্তা চওড়ার কাজ অর্ধেক শেষ হয়েছে। এখন ওই পাইপ বসাতে ফের পূর্ত দফতরের তৈরি ওই কংক্রিটের ঢালাই খুঁড়তে হবে পুরসভাকে। পরিকল্পনার অভাব নিয়ে তাই সরব হয়েছেন শহরবাসী। তাঁদের প্রশ্ন, কাজটি কেন একই সময় করা হলো না ? তাতে অর্থের অপচয় এড়ানো যেত । সদুত্তর মেলেনি পুরসভার কাছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন