শোকাহত: রাজকুমারের মৃত্যুর খবরে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন স্ত্রী। নিজস্ব চিত্র। তাঁর মৃত্যুর প্রতিবাদে মহকুমাশাসককে ঘিরে রায়গঞ্জে ক্ষোভে ফেটে পড়েন ভোটকর্মীরা।
ভোটের বুথ থেকে আচমকা উধাও হয়ে গিয়েছিলেন এক প্রিসাইডিং অফিসার রাজকুমার রায়। প্রায় ২২ ঘণ্টা পরে তাঁর দেহ পাওয়া গেল ২০ কিলোমিটার দূরে রেললাইনের উপর থেকে। ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছিল তাঁর দেহ। কী ঘটল এই ২২ ঘণ্টায়, তা নিয়ে রহস্য কাটছে না। তাই তিনি খুন হয়েছেন না আত্মহত্যা করেছেন, সে সংশয়ও মিটছে না। সিআইডি ঘটনার তদন্ত করছে।
রাজকুমারবাবুর বাড়ি উত্তর দিনাজপুরের রায়গঞ্জের সুদর্শনপুর এলাকায়। তিনি করণদিঘির রহটপুর হাই মাদ্রাসার ইংরেজির শিক্ষক। সোমবার জেলারই ইটাহারের দুর্লভপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সোনাপুর জুনিয়র বেসিক স্কুলের ৪৮ নম্বর বুথে প্রিসাইডিং অফিসার ছিলেন। রাত পৌনে আটটা নাগাদ বুথের ভিতর থেকে ফোনে তিনি স্ত্রীর সঙ্গে কথাও বলেছিলেন। তাঁর স্ত্রী অর্পিতা জানান, তখন রাজকুমার তাঁকে বলেন, ব্যস্ত রয়েছেন, পরে কথা বলবেন। এরপর থেকেই শুরু হচ্ছে একাধিক ধোঁয়াশা।
ওই বুথের অন্য ভোটকর্মীরা জানাচ্ছেন, রাত ৮টা নাগাদ বুথে যখন বেশ ভিড়, রাজকুমার মাথাব্যথা করছে বলে বাইরে যান। তার পর থেকে তাঁর সঙ্গে আর কোনও যোগাযোগ করা যায়নি। কিন্তু রাত দু’টো নাগাদ ভোটকর্মীদের একজনের মোবাইলে ফোন করে কেউ বলেন, রায়গঞ্জে ফেরার সময় রাজকুমারের ব্যাগটিও নিয়ে আসতে। কিন্তু নম্বরটি কার, কোথা থেকে ফোন করা হয়েছিল, তদন্তের স্বার্থে সে সব কিছু জানাতে চায়নি পুলিশ। তবে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজকুমারের ফোনের টাওয়ারের খোঁজ করে দেখা গিয়েছে, মঙ্গলবার সকালেই তিনি রায়গঞ্জে চলে এসেছিলেন। ভোর সওয়া পাঁচটা নাগাদ একবার তাঁর ফোন খোলা ছিল। দুপুরেও একবার ফোন বাজে। বাকি সময় বন্ধ ছিল।
কিন্তু কেন তিনি হঠাৎ বুথ ছেড়ে চলে এলেন, কোথায় কোথায় গেলেন, কেন ফোন বারবার বন্ধ করে দিচ্ছিলেন, কোনও উত্তরই মেলেনি।
মঙ্গলবার সন্ধে সাড়ে ৬টা নাগাদ অর্পিতা ফোনে খবর পান, রাজকুমার রায়গঞ্জের কাছে সোনাডাঙিতে রাধিকাপুর এক্সপ্রেসে কাটা পড়েছেন। এক ব্যক্তি ট্রেনে কাটা পড়া দেহটির পাশে পড়ে থাকা একটি কার্ড থেকে রাজকুমারের নাম পরিচয় পেয়ে ফোন করেছিলেন। তাঁর পরিবারের দাবি, রাজকুমারকে খুন করে দেহটি রেললাইনে ফেলে রাখা হয়। কিন্তু প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ট্রেনের চালকের বক্তব্য, হঠাৎ করে কেউ একজন লাইনের উপরে চলে এসেছিলেন বলেই দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। রাজকুমারের পরিবার মানতে নারাজ যে, তিনি আত্মহত্যা করেছেন। তাঁরা এখন তাকিয়ে সিআইডি-র তদন্তের দিকে।