বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে রাত অবধি সবুজ আবির উড়ল ঠিকই। কিন্তু শিলিগুড়ি শহর সংলগ্ন এলাকায় শাসক দলের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে ডাবগ্রাম-ফুলবাড়িতে উঠে এল বিজেপি। এলাকার রাজনৈতিক মানচিত্রে সিপিএম-কংগ্রেসের অস্তিত্বটুকু বজায় রাখলেন হাতে গোনা কয়েকজন।
দলের দার্জিলিং জেলা সভাপতি তথা পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব নিজের খাসতালুকের নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখতে পারলেও লড়াই দিয়েছে বিজেপি। চারটি গ্রাম পঞ্চায়েতে গতবারের মাত্র ২টি আসন থেকে বিজেপি পৌঁছে গিয়েছে ১৪টিতে। তবে মন্ত্রী গৌতম বলেন, ‘‘এই জয় আমাদের কাছে প্রত্যাশিতই ছিল। ভোটের ফলাফল আমরা বিশ্লেষণ করে দেখব।’’ কিন্তু এদিন ভোটের ফল থেকে স্পষ্ট, ফুলবাড়ি-১ পঞ্চায়েতে শাসক দলকে লড়াইয়ের মুখে ফেলেছেন বিজেপি প্রার্থীরাই। তেমনি ডাবগ্রামের একটি পঞ্চায়েত সমিতি আসন জিতেছে বিজেপি। এদিন রাত অবধি গণনায় ফুলবাড়ির আরেকটি পঞ্চায়েত সমিতির আসনে শাসক দলের যুবনেতা প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপি প্রার্থীর চেয়ে পিছিয়ে পড়েছেন। বিজেপি’র জেলা সাধারণ সম্পাদক অভিজিৎ রায়চৌধুরীর অভিযোগ, ‘‘হুমকি, ছাপ্পা, পুলিশ-প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে ক্ষমতায় এল তৃণমূল।’’
দলের একাংশ নেতা জানালেন, ফুলবাড়ি-১ এলাকায় গত এক বছর ধরে প্রকাশ্যে দলীয় গোষ্ঠী কোন্দল ভোটে প্রভাব ফেলেছে। দু’টি শিবির একে অপরের বিরুদ্ধে যাওয়ার পরিণামেই এই পঞ্চায়েতে একমাত্র বিজেপি’র আসন সংখ্যা ৯ হয়েছে। তৃণমূল ছেড়ে ডাবগ্রাম-২ নেত্রী শিখা চট্টোপাধ্যায় গেরুয়া শিবিরে গিয়ে নাম লেখালেও তিনি জিততে পারেননি। কিন্তু লড়াই দিয়েছেন। গত বিধানসভায় প্রায় ৭০ হাজার ভোট সিপিএম পেলেও পঞ্চায়েতে তার প্রতিফলন হয়নি বলেই মনে করেছেন বাম নেতারা।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমাদের আত্মবিশ্লেষণ করতে হবে। আমাদের ভোট বিজেপিতে গিয়েছে, তা স্পষ্ট। শহরে একাধিক ভোটে শাসককে রোখা গেলেও সংলগ্ন এলাকায় হল না।’’ আর দলের জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকারের কথায়, ‘‘ভোটের নামের প্রহসন হয়েছে। ডাবগ্রাম-ফুলবাডি তার ব্যতিক্রম নয়।’’
শিলিজুড়ি শহর লাগোয়া চারটি পঞ্চায়েতের মধ্যে ২০১৩ সালে তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে ছিল মাত্র একটি গ্রাম পঞ্চায়েত, ডাবগ্রাম-২। বাকিগুলি জেতে সিপিএম। দলবদলের জেরে ক্ষমতায় এলেও এবারই প্রথম নির্বাচনে জিতে পঞ্চায়েতগুলি দখল করল তৃণমূল কংগ্রেস। দলের কর্মীদের দাবি, গত কয়েক বছরে শিলিগুড়ি শহর লাগোয়া যে এলাকার সবচেয়ে বেশি উন্নয়ন হয়েছে, তা হল ডাবগ্রাম ফুলবাড়ি। এতদিন বিরোধীরা জবরদখলের রাজনীতির কথা বললেও ভোটে প্রমাণ হল, মানুষ তৃণমূলের সঙ্গেই আছে। ফুলবাড়ি-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের একটি আসনে ব্যালট ছিনতাইয়ের অভিযোগের জেরে ফলাফল ঘোষণা হয়নি।