শহরে রিকশার সংখ্যা কত সেই হিসেব রয়েছে। অথচ শিলিগুড়ি শহরে ঠিক কত হাজার টোটো রোজ চলাচল করে তার কোনও হিসেবই নেই পুলিশ-প্রশাসন বা পুরসভার কাছে। ট্রাফিক পুলিশের মতে শহরে টোটোর সংখ্যা ৭ হাজার। পুরসভার ধারনা, সংখ্যাটা ১০ হাজার। যদিও আমজনতার দাবি, তা কমপক্ষে ১৫ হাজার। উপরন্তু, রোজই শহরে গড়ে ২০-২৫টি নতুন টোটো রাস্তায় নামছে বলে ট্রাফিক পুলিশের অনুমান। ফলে, গোটা শিলিগুড়ি শহর যেন এখন ‘টোটো-ময়’।
এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে যে শহরের মূল রাস্তাগুলোয় মন্ত্রী, মেয়র বা পুলিশ কমিশনারের গাড়িকেও কিছুক্ষণ টোটোর পিছনে চলতে হচ্ছে। তাই শিলিগুড়িতে টোটোর ‘লাইসেন্স’ বিলির কাজে গতি আনতে উদ্যোগী হয়েছে নবান্ন।
সরকারি সূত্রের দাবি, শিলিগুড়িতে টোটোর লাইসেন্স কী ভাবে দেওয়া যায় তা নিয়ে পরিবহণ দফতরকে রূপরেখা তৈরির নির্দেশও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মতো ইতিমধ্যেই বর্ধমান, দুর্গাপুর, আসানসোল, নদিয়া সহ কয়েকটি জেলা শহরে টোটোর জন্য অস্থায়ী ভাবে লাইসেন্স দেওয়ার কাজ হচ্ছে। কিন্তু, শিলিগুড়িতে পুরসভার তরফে গড়িমসি থাকায় সেই কাজ এগোচ্ছে না বলে টোটো মালিক ও চালকদের অভিযোগ। শুধু তাই নয়, পুরসভা লাইসেন্স দিতে আরও দেরি করলে যাতে প্রশাসনের অন্য বিভাগ থেকে ওই লাইসেন্স দেওয়া যায় সেই আর্জিও নবান্নে পৌঁছেছে।
গোড়ায় দূষণহীন যান হিসেবে টোটোর লাইসেন্স প্রয়োজন নেই বলে রাজ্যের কোথাও পুরসভা-প্রশাসন-পুলিশ পদক্ষেপ করেননি। কিন্তু, রিকশার যদি লাইসেন্স থাকে, তাহলে টোটোর কেনও থাকবে না পুরসভা-প্রশাসনের অন্দরে সেই প্রশ্ন ওঠে। টোটোর লাইসেন্স চালু করলে সামান্য হলেও সরকারি কোষাগারের রাজস্ব বাড়বে বলেও অফিসারদের অনেকের দাবি। এর পরেই কয়েকটি শহরে সাময়িক ভাবে টোটোর লাইসেন্স বিলি শুরু হয়। কয়েকটি জায়গায় টোটোর রুটও নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়।
অথচ শিলিগুড়িতে রিকশা চলাচলের ক্ষেত্রে লাইসেন্স, রুট মানাটা বাধ্যতামূলক হলেও টোটোর লাইসেন্স, রুট নির্দিষ্টকরণের কাজ কিছুই হয়নি। ফলে সারাদিন শহরে টোটোর ছড়াছড়ি। সরকারি ভাবে নির্দিষ্ট রুট না থাকায় টোটো চালকদের মধ্যে গোলমাল, মারপিটের ঘটনাও একাধিকবার ঘটেছে।
শিলিগুড়ির ট্রাফিক পুলিশের একাধিক অফিসার জানান, টোটো চলাচল বিধি তৈরি করতে না পারলে আগামী দিনে শহরে কমবেশি সব যানের গতি শ্লথ হয়ে যাবে।
শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার নীরজ কুমার সিংহ বলেন, ‘‘সব যান চলাচলের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট বিধি রয়েছে। টোটো ব্যতিক্রম হতে পারে না। তাই সব দিক মাথায় রেখেই পরিকল্পনা হচ্ছে। যেমন নির্দেশ মিলবে তেমনই পদক্ষেপ করা হবে।’’