উৎসব মানেই বাঙালির খানাপিনার বহর হিসেবের বাঁধ মানে না। এই সুযোগে শহরের নামী-অনামী রেস্তোরাঁ সেজে উঠেছে নতুন রসনার সন্ধান নিয়ে। রথের মেলায় মানুষ সাধারণত ফুটপাথের খাবারেই মনোযোগ দেয়। কিন্তু ইদে বিরিয়ানি ছাড়া হয় না। বিরিয়ানিকে ধরেই তাই উৎসবের বাজার ধরতে চাইছেন শহরের ছোট বড় রেস্তোরাঁগুলি।
অওয়ধি, হায়দরাবাদি, আম বাঙালির রসনাপযোগী করে তৈরি বিরিয়ানি, ফ্রাই বিরিয়ানি, দম বিরিয়ানি—তালিকার শেষ নেই। বেশির ভাগই আমিষ রসিকদের জন্য হলেও শাকাহারিদের জন্যও ভেজ বিরিয়ানি রাখছে কয়েকটি রেস্তোরাঁ। তবে বিরিয়ানি ছাড়াও কাবাব, রোল, চিকেন ও মটন কারি থেকে নানা রকম ডেজার্টেও শিলিগুড়িবাসীর মন ভরবেই বলে দাবি তাঁদের একাংশের।
শিলিগুড়ির হিলকার্ট রোডে হাসমিচকের নামী বিরিয়ানি রেস্তোরাঁয় সারা বছরই বিরিয়ানির বিক্রি রয়েছে। তাঁদের লখনউ ঘরানার আওয়াধি বিরিয়ানি শহরে পরিচিত। এই রেস্তোরাঁর ম্যানেজার উদয় চাকী জানান, এখানকার বিরিয়ানির টানে শহরের বাইরে থেকেও লোক আসেন। এমনকী তাঁদের হোম ডেলিভারিরও চাহিদা রয়েছে। উদয়বাবু বলেন, ‘‘উৎসব ও অনুষ্ঠানের দিন রেস্তোরাঁয় বসে খাবার জন্য লম্বা লাইন পড়ে যায়। বিশেষ করে বিরিয়ানি, পরোটা ও গিলৌটি কাবাব জনপ্রিয়।’’ হিলকার্ট রোডেরই একটি রেস্তোরাঁ চেন মূলত বাঙালি ঘরানার খাবার তৈরি করেন। তবে তার পাশপাশি শহরবাসীর বিরিয়ানি প্রেমের কথা মাথায় রেখে বিরিয়ানিও তৈরি হয়। তার চাহিদা রয়েছে বলে রেস্তোরাঁয় বিরিয়ানির পরিমাণ দ্বিগুণ করে দিয়েছেন বলে কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন।
শহরের বিধান রোডের ক্ষুদিরামপল্লি এলাকায় শহরের নামী বিরিয়ানি রেস্তোরাঁ। শহর জুড়ে একাধিক রেস্তোরাঁ রয়েছে তাঁদের। তাঁদের বিরিয়ানি মূলত বাঙালি রসনায় তৈরি। সেই স্বাদেই বাজিমাত করেছেন তাঁরা। প্রতিটি স্টলেই প্রতিদিন ভিড় থাকে মূলত বিরিয়ানির টানেই। তার সঙ্গে নানা রকম রোল ও চিকেন ও মটনের নানা রকম খাবার তৈরি করেন তাঁরা। ইদের বাজারে তাঁদের নিঃশ্বাস ফেলার সময় থাকবে না বলে জানান।
ওই রেস্তোরাঁয় গিয়ে জায়গা না পেলেও চিন্তা নেই। ওই রাস্তাতেই বিধান রোডে গোষ্ঠ পালের মূর্তির সামনে আরও একটি রেস্তোরাঁয় নানারকম খাবার তৈরি হলেও মূলত জোর দেওয়া হয় বিরিয়ানিতেই। বসে খাবার পাশাপাশি তাঁদের বিরিয়ানির একটি ফুটপাথ কাউন্টারও রয়েছে। ওই রেস্তোরাঁর কর্ণধার অনন্তদেব মজুমদার বলেন, ‘‘সারা বছর প্রতিদিন আমাদের এখানে গড়ে ১০০ প্লেট বিরিয়ানি বিক্রি হয়। অভিজ্ঞতা থেকে দেখছি আজ ইদ ও রথ থাকায় তা তিনগুণ করতে হবে।’’ এ ছাড়াও রাজা রামমোহন রায় রোডের একটি নামী রেস্তোরাঁ, বিধান মার্কেটের অটো স্ট্যান্ডের পুরোনো বিরিয়ানি হাউস, সেবক রোডের একাধিক নতুন রেস্তোরাঁ রকমারি বিরিয়ানির প্লেট নিয়ে গ্রাহক সন্তুষ্টির জন্য অপেক্ষায়। কয়েকটি রেস্তোরাঁ চাপ কমাতে প্রয়োজনে হোম ডেলিভারির ব্যবস্থা রাখছেন বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
উত্তরবঙ্গের অন্য শহরগুলিতেও বিরিয়ানির চাহিদাই বেশি। মালদহে ইদের উৎসব মানেই বিরিয়ানির রকমারি আয়োজন। তা বাড়িতেই হোক, আর হোটেল-রেস্তোঁরায়। গত কয়েক বছরে মালদহের জেলা সদর ইংরেজবাজার শহরে নতুন বেশ কয়েকটি বিরিয়ানির রেস্তোঁরা হয়েছে।