সাইকেলে চেপে গল্পের আবদার মেটান সন্তোষ

ব্যাগে ঠাসাঠাসি করে রাখা নন্টে ফন্টে, ইশপের গল্প, অসমের রূপকথা। রয়েছে হাসির ফোয়ারা থেকে চাঁদের পাহাড়, রকমারি রান্নাবান্না থেকে রামায়ণ, মহাভারত— সবই। সবমিলিয়ে অন্তত একশো তো হবেই! শনি ও রবিবার বিকেল হলেই দেখা যায় সাইকেলে ওই ব্যাগ ঝুলিয়ে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরছেন এক প্রৌঢ়।

Advertisement

অরিন্দম সাহা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৬ ০১:৪৭
Share:

বই নিতে সন্তোষবাবুকে ঘিরে খুদেদের ভিড়। ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।

ব্যাগে ঠাসাঠাসি করে রাখা নন্টে ফন্টে, ইশপের গল্প, অসমের রূপকথা। রয়েছে হাসির ফোয়ারা থেকে চাঁদের পাহাড়, রকমারি রান্নাবান্না থেকে রামায়ণ, মহাভারত— সবই। সবমিলিয়ে অন্তত একশো তো হবেই! শনি ও রবিবার বিকেল হলেই দেখা যায় সাইকেলে ওই ব্যাগ ঝুলিয়ে পাড়ায় পাড়ায় ঘুরছেন এক প্রৌঢ়।

Advertisement

গত এক দশকের বেশি ধরেই পরিচিতদের মধ্যে বই পড়ার প্রবণতা বাড়াতে এটাই সাপ্তাহিক রুটিন সন্তোষ দে সরকারের। বইপ্রেমী বাসিন্দাদের বাড়ি বাড়ি ঘুরে বেড়ানো এই ‘ব্যাগের’ পোশাকি নাম প্রমথচন্দ্র মেমোরিয়াল মোবাইল লাইব্রেরি। তার সদস্যদের মধ্যে রয়েছে আট থেকে আশি, সকলেই। গুড়িয়াহাটি এলাকার বাসিন্দা ৬২ বছর বয়সী জোৎস্না দে ওই লাইব্রেরির প্রথম সদস্যা। তিনি বলেন, “সত্তরের দশকে বিয়ে হয়েছে আমার। বেশ কিছু বই উপহার পেয়েছিলাম। সবগুলি পড়েছি অনেকবার। ইচ্ছে ছিল অন্যরাও যদি ওই বইগুলি পড়তে পারেন। ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি চালুর সময়ই ওই বইগুলি সন্তোষবাবুকে দিয়েছি।”

অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মী সন্তোষবাবুর ওই লাইব্রেরি চালুর ভাবনা অবশ্য নিছক ভাললাগা থেকে। নিজে লেখালেখি করতে ভালবাসেন। ছোট পত্রিকাও প্রকাশ করেন। সেইসঙ্গে নিয়মিত নানা ধরণের বই পড়েন। কোচবিহার শহর লাগোয়া গুড়িয়াহাটির রোডের বাসিন্দা সন্তোষবাবু বলছেন, “নিজে একটা বই পড়ে আনন্দ পেলে সেটা বন্ধুদের প্রায় জোর করেই পড়তে দিতাম। তাতে অনেকেই বই পড়ায় আগ্রহী হন। তা দেখে নিজের উদ্যোগে প্রয়াত বাবার নামে ওই ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি চালুর বিষয়টি মাথায় আসে।” কোচবিহার লোকাল লাইব্রেরি অথরিটি কমিটির সদস্য পার্থপ্রতিম রায় বলেন, “সত্যিই ওঁর কাজ প্রশংসনীয়। বই কেনার জন্য কিছু আর্থিক সাহায্যও দেওয়া হয়েছে।”

Advertisement

এখন শহরের বইপ্রেমীদের সবার কাছেই জানা এই ভ্রাম্যমাণ গ্রন্থাগারের কথা। সদস্য তালিকায় বড়দের সঙ্গে রয়েছে খুদেরাও। গৃহবধূরাও রয়েছেন। তাঁদের কয়েকজন দীপিকা মৈত্র, রুমকি দে, শ্যামলী ধর জানিয়েছেন, মাসে সদস্য চাঁদা মাত্র তিন টাকা। ঘরে বসে পছন্দের বই মিলছে। তাছাড়া এতে পরিবারের ছোটদেরও পরোক্ষে বই পড়ায় উৎসাহ বাড়বে। তাঁদের মুখের কথা না ফুরোতেই বইয়ের ঝোলা দেখে সন্তোষবাবুকে রাস্তায় দেখে ছুটে যায় একদল কচিকাঁচা। সেই শুভজিৎ, শিখারা বলছিল, “ঠাকুরমার ঝুলি পড়া শেষ করেছি। দাদু আজ দারুণ ভূতের গল্পের বই আমাকে দিতেই হবে।” হাসি ফোটে সন্তোষবাবুর। খুদেদের আবদার মিটিয়ে তৃপ্ত মুখে বলছিলেন, শুরুতে তিন-চার জনও নিয়মিত বই নেওয়ার লোক ছিল না। এখন নিয়মিত বই লেনদেন করেন ষাটজনের বেশি। বইয়ের খোঁজে বাড়িতে ছুটে আসেন অনেকেই।

পছন্দের নতুন বই তুলে দিয়ে, পুরানো বই বুঝে নেন সন্তোষবাবু। খাতায় তথ্য লিখে ফের এগোন সাইকেল নিয়ে অন্য পাড়ায় অনেকের মুখে হাসি ফোটাতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন