আক্রান্ত: গোলমালে আহত আদালতের কর্মী। শনিবার। নিজস্ব চিত্র
হাজিরার নিয়ম নিয়ে উত্তর দিনাজপুরের জেলা জজের কাছে আদালত কর্মীরা স্মারকলিপি দিতে গিয়েছিলেন। সেখানে তাঁদের সঙ্গে পুলিশের গোলমালে উত্তেজনা ছড়াল। শনিবার দুপুরে রায়গঞ্জে জেলা আদালতে এজলাসের ভিতরের ঘটনা।
ওই ঘটনার পর পুলিশ ও আদালতের কর্মীরা একে অপরের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ তুলেছে। আদালতের কর্মীরা জেলা জজের বিরুদ্ধেও দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছেন। গোলমালে আদালতের দুই কর্মী ও দুই পুলিশকর্মী জখম হয়েছেন বলে অভিযোগ। তাঁদের মধ্যে অনীক পাট্টাদার ও শ্যামল দাস নামে আদালতের দুই কর্মী এবং রায়গঞ্জ থানার সহকারী সাব ইনস্পেক্টর জয়ন্ত দাসকে রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। দীপঙ্কর ঘোষ নামে রায়গঞ্জ থানার এক সাব ইনস্পেক্টরকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। জেলা জজ উদয় কুমারের সঙ্গে এই বিষয়ে সাংবাদিকরা যোগাযোগ করতে চাইলে তাঁর দফতরের এক কর্মী বলেন, ‘‘জেলা জজ সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবেন না।’’ পুলিশ সুপার সুমিত কুমার বলেন, ‘‘পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। এখনও পুলিশের কাছে কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
আদালতের কর্মীদের তরফে আদালত এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশনের রায়গঞ্জ ইউনিটের সম্পাদক কৃষ্ণগোপাল সেনগুপ্ত এবং ওই সংগঠনের সদস্য শিবনাথ রায়ের অভিযোগ, এ দিন বেলা ১০টা নাগাদ জেলা জজ আদালতের বিভিন্ন বিভাগে গিয়ে কর্মীদের হাজিরা খাতা খতিয়ে দেখেন। এরপর তিনি জানিয়ে দেন, ওই সময়ের পর কোনও কর্মী হাজিরা খাতায় সই করলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সরকারি নিয়মে সকাল সওয়া ১০টা পর্যন্ত হাজিরা খাতায় সই করা যায় বলে কৃষ্ণগোপাল ও শিবনাথের দাবি। তাঁদের বক্তব্য, ওই ঘটনার প্রতিবাদে আদালতের কয়েকজন কর্মী গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে জেলা জজের সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলেন। অথচ তিনি তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে চেম্বার থেকে বাইরে বার করে দেন। প্রতিবাদে আদালতের কর্মীরা জজের চেম্বারের বাইরে বিক্ষোভ শুরু করেন। আদালত কর্মীদের একাংশের দাবি, জেলা জজ এক বিচারককে পুলিশ ডাকার নির্দেশ দেন। খবর পেয়ে পুলিশকর্মীরা গিয়ে মোবাইল ফোনে ছবি, ভিডিয়ো ফুটেজ তুলতে শুরু করেন। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, আদালতের ভিতরে তথা এজলাসে ছবি তোলা নিষিদ্ধ। তাই আদালতের কর্মীরা পুলিশকর্মীদের মোবাইল কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। পুলিশের সঙ্গে আদালত কর্মীদের গোলমাল, হাতাহাতি শুরু হয়। সেইসময় পুলিশ আদালত কর্মীদের উপর বেধড়ক লাঠিচার্জ করে বলে অভিযোগ। তাতেই দু’জন আদালত কর্মী জখম হন। কৃষ্ণগোপাল ও শিবনাথ জানান, জেলা জজ আদালতের কর্মীদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছেন। পুলিশ আদালতের কর্মীদের মারধর করেছে। এই দুই ঘটনার বিচারের দাবিতে কী করণীয়, তা ঠিক করতে আদালতের কর্মীরা আলোচনা শুরু করেছেন।