ফব প্রার্থীর প্রচারে গুলি কোচবিহারে

প্রচারে বেরিয়ে আক্রমণের নিশানা হলেন কোচবিহার উত্তর কেন্দ্রের ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী। নববর্ষের সকালে কোতোয়ালি থানার কাড়িশাল এলাকায় নগেন্দ্রনাথ রায়কে লক্ষ্য করে গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। বরাত জোরে কোনওমতে বেঁচে যান তিনি ও তাঁর সঙ্গীরা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৬ ০২:৫৯
Share:

অভিযোগ জানাতে যাচ্ছেন নগেনবাবু। — নিজস্ব চিত্র

প্রচারে বেরিয়ে আক্রমণের নিশানা হলেন কোচবিহার উত্তর কেন্দ্রের ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী। নববর্ষের সকালে কোতোয়ালি থানার কাড়িশাল এলাকায় নগেন্দ্রনাথ রায়কে লক্ষ্য করে গুলি চালায় দুষ্কৃতীরা। বরাত জোরে কোনওমতে বেঁচে যান তিনি ও তাঁর সঙ্গীরা।

Advertisement

আর এই ঘটনাকে ঘিরে শুরু হয়েছে শাসক-বিরোধী তরজা। কোচবিহার জেলায় শাসকের টক্কর মূলত ফরওয়ার্ড ব্লকের সঙ্গেই। মাত্র কয়েক মাস আগে উদয়ন গুহ দল ছেড়ে বেরিয়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ায় এই তরজা তুঙ্গে উঠেছে। উদয়ন এ বারে দিনহাটা থেকে তৃণমূল প্রার্থী। দু’তরফে টক্কর এতটাই জোরালো যে, পার্টি অফিস দখল থেকে দিনহাটায় শহিদ স্মরণে পর্যন্ত টানাপড়েন কম হয়নি। এ দিনের ঘটনার পরে বিরোধীরা তাই একযোগে আঙুল তুলেছে তৃণমূলের দিকে। উল্টো দিকে, তৃণমূলের দাবি, এলাকায় সিপিএম-ফব বিবাদ বহু পুরনো। ফব প্রার্থীকে লক্ষ্য করে এই গুলি চালিয়েছে সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই। কোচবিহারের রাজনীতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল লোকজনের বক্তব্য, একসময় এখানে বামফ্রন্টের দুই শরিকের মধ্যে যথেষ্টই টানাপড়েন ছিল। বস্তুত, বামফ্রন্ট আমলেই দিনহাটায় পুলিশের গুলিতে পাঁচ ফব কর্মীর মৃত্যু হয়। কিন্তু এখন বিরোধীদের, বিশেষ করে ফব-র অনেক বড় প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল। তাই এ দিনের ঘটনায় শাসক দলের জড়িত থাকার সম্ভাবনাই বেশি।

এ দিন বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে বাড়ি বাড়ি প্রচারে বার হন নগেন্দ্রনাথবাবু। আধ ঘণ্টা নির্বিঘ্নে প্রচারের পর তাঁরা হাসানের কলোনিতে পৌঁছন। সেখানে স্থানীয় বাসিন্দারা ঘিরে ধরেন প্রার্থীকে। প্রশ্ন করতে থাকেন, কেন এত দিন তাঁদের এলাকায় নগেন্দ্রবাবুকে দেখা যায়নি? ওই দলে কয়েক জন তৃণমূল কর্মী-সমর্থক ছিল বলে অভিযোগ। শুরু হয় দু’পক্ষের মধ্যে বাদানুবাদ। সে সময় আচমকা নগেন্দ্রবাবুকে লক্ষ্য করে এক রাউন্ড গুলি চালানো হয়। গুলির শব্দে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে ওই চত্বর সুনসান হয়ে যায়।

Advertisement

কোচবিহারের পুলিশ সুপার সুনীল যাদব বিকেলে বলেন, “ঘটনাস্থল থেকে একটি খালি কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে। দু’পক্ষই থানায় গিয়ে পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানান। ওই অভিযোগের ভিত্তিতে ইতিমধ্যে দু’ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”

কিন্তু কেন আক্রমণের নিশানা হলেন নগেন্দ্রনাথবাবু? বামেদের বক্তব্য, গত নির্বাচনে কোচবিহার উত্তর কেন্দ্রে ফরওয়ার্ড ব্লক প্রার্থী জয়ী হন। সাংগঠনিক শক্তির নিরিখেও বামেরা ওই এলাকায় যথেষ্ট মজবুত। তার ওপর কংগ্রেসের সঙ্গে নির্বাচনী জোট হওয়ায় আসনটিতে অবাধ ভোট হলে তৃণমূলের জেতা মুশকিল। তাই পরিকল্পিত ভাবে আতঙ্ক ছড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য দীপক সরকার বলেন, “শান্তিপূর্ণ ভোট হলে বাম প্রার্থীই জিতবেন। তাই আতঙ্ক ছড়াতে প্রার্থীকে লক্ষ্য করে গুলি করা হয়েছে।’’ সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মহানন্দ সাহা বলেন, “অবাধ ভোট হলে তাঁকে হারানো সম্ভব নয়। সে জন্য পরিকল্পিত ভাবে প্রচার ব্যাহত করার ছক হয়েছে।”

তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের দাবি, ওই এলাকায় সিপিএম ও ফরওয়ার্ড ব্লকের সমর্থকদের মধ্যে আভ্যন্তরীণ লড়াই রয়েছে। তার জেরেই সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীরা গুলি চালিয়েছে। কোচবিহার উত্তর কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী পরিমল বর্মন বলেন, ‘‘নিজেদের গোলমালের দায় আমাদের দিকে চাপিয়ে সহানুভূতি আদায় করতে চাইছে বামজোট।”

সিপিএম নেতা মহানন্দ সাহা অবশ্য তৃণমূলের বক্তব্য ‘হাস্যকর’ বলে উড়িয়ে দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন