প্রতীকী ছবি।
সকাল ন’টা। ইংরেজবাজার শহরের সুকান্ত মোড়ে দাঁড়াল মালদহ-নালাগোলাগামী একটি বেসরকারি বাস। বাস দেখেই হুড়মুড়িয়ে উঠতে যান জনা পাঁচেক ছাত্রী। কিন্তু তাঁদের দেখে বাসের দরজা বন্ধ করে দিলেন পরিবহণ কর্মীরা। হল দু’পক্ষের কথা কাটাকাটিও। যদিও শেষ পর্যন্ত অন্য যাত্রীদের বাসে নিলেও ঠাঁই হল না ওই ছাত্রীদের।
এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। প্রায়ই এমন হচ্ছে বলে দাবি সুকান্ত মোড়ে প্রতীক্ষারত হবিবপুর ব্লকের মধ্যম কেন্দুয়া গ্রামের ছাত্রী টিনা সিংহের। তিনি বলেন, ‘‘মালদহ কলেজে বাংলায় অর্নাস নিয়ে ভর্তি হয়েছি। কলেজ এবং টিউশনের জন্য সপ্তাহে চার-পাঁচ দিন মালদহ শহরে যাতায়াত করতে হয়। তবে গ্রামে আমাদের দেখে বাস থামে না। শহরে বাস থামলেও, আমাদের উঠতে নিষেধ করা হয়। এমন চললে আমাদের কলেজ-টিউশনে যাওয়া দায় হয়ে উঠবে।’’ নালাগোলার বাসিন্দা, মহিলা কলেজের ছাত্রী দীপালি সরকার বলেন, ‘‘যাত্রীদের তুলনায় আমাদের ভাড়া কম। তাই আমাদের গাড়িতে নিতে সকলেরই অসুবিধে।’’
কিন্তু পড়ুয়াদের নিতে অসুবিধা কোথায়? বাসের খালাসিদের একাংশের সূত্রে খবর, অন্যান্য রুটগুলোতে যাত্রী ভাড়া ছ’টাকা হলে পড়ুয়াদের ভাড়া নেওয়া হয় পাঁচ টাকা। তবে নালাগোলা রুটে এই ভাড়া অর্ধেক। পরিবহণ কর্মী সুশান্ত সাহা, দীনেশ সিংহ জানান, লাইনে প্রচুর যাত্রীবাহী গাড়ি রয়েছে। সঙ্গে বাড়ছে ডিজেলের দামও। শুধু পড়ুয়াদের নিলে দিনের আয় হবে না। তাই অল্প অল্প করে পড়ুয়াদের নেওয়া হয়। তবে পড়ুয়াদের দাবি, গাড়ির সংখ্যা প্রচুর। তবুও তাঁরা সময় মতো কলেজ, টিউশনে পৌঁছতে পারেন না।
মালদহ-নালাগোলা রুটে চলাচল করে শতাধিক সরকারি-বেসরকারি বাস, প্রচুর ম্যাক্সি-ট্যাক্সি এবং ছোট গাড়ি। ওই রুটের উপরে নির্ভরশীল পুরাতন মালদহ, হবিবপুর এবং বামনগোলা ব্লকের বাসিন্দারা। বামনগোলায় পাকুয়া হাট কলেজ রয়েছে। কলেজের সমস্যার কারণে ওই তিন ব্লকের ছাত্র-ছাত্রীরা শহরের কলেজগুলোয় ভর্তি হন। টিউশন ছাড়াও অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও রয়েছে শহরেই। তবে শহরে আসতে ছাত্র-ছাত্রীদের দৈনিক সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বলে অভিযোগ। তাঁদের দাবি, বেসরকারি বাস ও অন্যান্য পরিবহণ কর্মীরা পড়ুয়াদের বাসে নিতে অস্বীকার করেন। অভিযোগ রয়েছে পড়ুয়াদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারেরও, যার জন্য ওই রুটে একাধিক বার পথ অবরোধ করে বিক্ষোভও দেখিয়েছেন পড়ুয়ারা। তারপরও সমস্যা না মেটায় প্রশাসনের হস্তক্ষেপের দাবি তুলেছেন তাঁরা। জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্যের আশ্বাস, ‘‘পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে’’।