এক ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে ও গুলি করে খুন করল দুষ্কৃতীরা। সোমবার লিয়াচক থানার জালালপুর গ্রামে সাত সকালের এই ঘটনার পরে কিছুক্ষণ পথ অবরোধ করেন এলাকার বাসিন্দারা। পুলিশ দেহ তুলতে এসে বিক্ষোভের মুখে পড়ে। পরে অবশ্য বুঝিয়ে দেহ তুলে নিয়ে যেতে সক্ষম হয় পুলিশ। নিহত রহমত শেখের (৪৫) বাড়ি কালিয়াচকের জালালপুর পঞ্চায়েতের বালুয়াচারা গ্রামে। তাঁর ইট ও বালির দোকান ছিল।
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, রহমত শেথের জালালপুরের ধুলাউড়ি গ্রামে ইট ও বালির দোকান রয়েছে। দু’বছর আগে এই দোকানটি খুলেছেন তিনি। তার আগে তিনি শ্রমিক সরবরাহের কাজ করতেন। এ দিন, সকালে জালালপুর স্ট্যান্ডে মোটরবাইকে করে বাজার করতে গিয়েছিলেন তিনি। সকাল ৯টা নাগাদ বাড়ি ফেরার পথে জালালপুর জুনিয়র হাইস্কুলের সামনে চার থেকে পাঁচজনের একটি দুষ্কৃতী দল তাঁকে ঘিরে ধরে। অভিযোগ, দুষ্কৃতীরা ঘাড়ে ও মাথায় প্রথমে ধারালো অস্ত্রের কোপ মারে। পরে তাঁর পেটে গুলি করলে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁর। গুলির শব্দে স্থানীয় বাসিন্দারা ছুটে এলে দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়। এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
মৃতের স্ত্রী সায়েমা বিবি বলেন, ‘‘এ দিন সকাল ৮টা নাগাদ বাইকে করে বাজার করতে যান তিনি। পরে শুনি তাঁকে দুষ্কৃতীরা গুলি করে খুন করেছে। তাঁর সঙ্গে কারও কোনও ঝামেলা ছিল না। কেন তাঁকে খুন করল দুষ্কৃতীরা আমরা বুঝতে পারছি না। আমরা চাই পুলিশ দ্রুত দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করুক।’’ তবে প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, ব্যবসা সংক্রান্ত বিবাদের জেরে এই ঘটনা ঘটে থাকতে পারে। এ দিন দুপুরে নিহতের পরিবার থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
এ দিকে দিবালোকে ব্যবসায়ীকে খুন করার ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় মানুষ এবং ব্যবসায়ীরা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কালিয়াচকের জালালপুর অত্যন্ত ব্যস্ততম এলাকা। এখানে স্কুল, হাসপাতাল রয়েছে। এদিন ওই ব্যবসায়ীকে ব্যস্ততম এলাকাতেই কুপিয়ে ও গুলি করে খুন করা হল। এরই প্রতিবাদে স্থানীয় বাসিন্দারা মৃতদেহ ঘটনাস্থলেই ফেলে রেখে জালালপুর-কদমতলা রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। ঘটনার এক ঘণ্টা পরে দেহ তুলতে পুলিশকে বাধা দেন তাঁরা। পরে অবশ্য বুঝিয়ে দেহ তুলে ময়না তদন্তের জন্য মালদহ মেডিক্যালে পাঠায় পুলিশ। তবে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ানোয় কালিয়াচক থানা থেকে আরও পুলিশ এলাকায় আসে। জালালপুর পঞ্চায়েতের প্রধান কংগ্রেসের ফিরোজউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। দিনের শুরুতেই একজন ব্যবসায়ীকে গুলি করে ও কুপিয়ে খুন করা হল। যার ফলে সাধারণ মানুষ আতঙ্কে রয়েছেন।’’ পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করে মালদহ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক উজ্জ্বল সাহা বলেন, ‘‘জেলা জুড়ে ব্যবসায়ীরা আক্রান্ত হচ্ছে। এ দিন এক ব্যবসায়ীকে খুন করা হল। চুরি, ডাকাতির ঘটনাও বাড়ছে। অথচ জেলা পুলিশ নিষ্ক্রিয় রয়েছে। ঘটনার দ্রুত দুষ্কৃতীরা ধরা না পড়লে ব্যবসায়ী সমিতি পথে নামবে।’’ মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘খুনের কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু হয়েছে। তদন্ত চলছে।’’