প্রার্থী বাছাই নিয়ে শাসক দলের মতানৈক্য চরমে উঠেছে কোচবিহারে। কোর কমিটির একাধিক বৈঠকেও কোনও সমাধান সূত্র না পেয়ে জেলার শীর্ষস্থানীয় নেতারা এখন নির্ভর করছেন রাজ্য নেতৃত্বের উপরে। দলীয় সূত্রের খবর, তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের বিরোধী গোষ্ঠী বলে পরিচিত আব্দুল জলিল আহমেদ সহ বেশ কয়েকজন নেতা ইতিমধ্যেই কলকাতায় গিয়ে দরবার শুরু করেছেন। রবীন্দ্রনাথ ঘোষ গোষ্ঠীর কয়েকজন কলকাতায় যাবেন বলে তৈরি হয়েছেন।
২০ আসনের কোচবিহার পুরসভায় কোনওটিতেই প্রার্থী নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এমনকি পুরসভার বর্তমান চেয়ারম্যান,শাসক দলের নেতা দীপক ভট্টাচার্য কোন আসনে দাঁড়াবেন সে ব্যাপারেও পুরোপুরি সিদ্ধান্ত হয়নি। দলের তরফে অবশ্য জানানো হয়েছে, ওয়ার্ডগুলি থেকে প্রার্থী হতে আগ্রহীদের কাছ থেকে ‘বায়োডাটা’ জমা নেওয়া হচ্ছে সেখান থেকে বাছাই করে প্রার্থী নেওয়া হবে। জেলা সভাপতি তথা কোর কমিটির চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, প্রার্থী বাছাই নিয়ে আলোচনা চলছে। সঠিক সময়ে তা প্রকাশ করা হবে। কোনও দ্বন্দ্বের ব্যাপার নেই। কলকাতায় থেকে টেলিফোনে জলিল আহমেদ জানান, ওই বিষয়ে দলীয় নেতৃত্ব সিদ্ধান্ত নেবে। রাজ্যের বনমন্ত্রী তথা কোর কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান বিনয়কৃষ্ণ বর্মন বলেন, “আমরা যা নাম পাচ্ছি তা রাজ্যে পাঠিয়ে দিচ্ছি। প্রার্থী বাছাইয়ের ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত রাজ্য নেতৃত্ব নেবে।’’
দলীয় সূত্রের খবর, ২০ আসনের কোচবিহার পুরসভায় বর্তমানে তৃণমূলের ১৫ টি এবং বামেদের ৫ টি আসন রয়েছে। এবারে আসন সংরক্ষণের কোপে পড়ে বেশিরভাগ ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলররা দাঁড়াতে পারবেন না। এমনকি চেয়ারম্যান দীপক ভট্টাচার্যের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডটিও তপশিলি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হয়েছে। এই অবস্থায় ১৩ নম্বর ওয়ার্ড থেকে দাঁড়ানোর কথা চলছে চেয়ারম্যানের।
৫ নম্বর ওয়ার্ডটি মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হয়েছে। ওই আসনের বর্তমান কাউন্সিলর দিলীপ সাহার স্ত্রীকে ওই আসন থেকে দাঁড় করানোর দাবি উঠেছে। সেরকমই ৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে আমিনা আহমেদ, ৪ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ভূষণ সিংহের নাম উঠেছে। ১১ নম্বর ওয়ার্ডে প্রয়াত চেয়ারম্যান বীরেন কুন্ডুর ছেলে যুব সভাপতি শুভজিত্ কুন্ডুকে দাঁড় করানোর দাবি উঠেছে। দলীয় সূত্রের খবর, প্রায় প্রত্যেক আসন থেকেই প্রার্থী হতে চেয়ে একাধিক বায়োডাটা জমা পড়েছে নেতৃত্বের কাছে। তা নিয়েই মতানৈক্য তৈরি হয়েছে।
বিজেপির মধ্যেও প্রার্থী বাছাই নিয়ে আলোচনা চলছে। বিজেপি নেতৃত্ব দাবি করেছেন, কোচবিহার পুরসভার ২০ টি ওয়ার্ডের জন্য ৪০ জন প্রার্থী হতে চেয়ে আবেদন করেছেন। এর মধ্যে আইনজীবী, শিক্ষক, ব্যবসায়ীরা যেমন রয়েছেন তেমন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের নামও রয়েছে ওই তালিকায়। দলীয় সূত্রের খবর, বিজেপির কোচবিহার জেলার সাধারণ সম্পাদক নিখিল রঞ্জন দেরও ভোটে দাঁড়ানোর ব্যাপারে আলোচনা চলছে। এর আগেও তিনি কাউন্সিলর পদের জন্য লড়াই করেছেন। বিজেপির কোচবিহার জেলা সভাপতি হেমচন্দ্র বর্মন জানান, গত পুরসভা নির্বাচনে তাঁরা কোচবিহার পুরসভার ৬ টি ওয়ার্ডে প্রার্থী দিতে পেরেছিলেন। এবারে সব আসনে প্রার্থী দেবেন। তিনি বলেন,“ লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে ১০ টি আসনে এগিয়ে রয়েছি আমরা। প্রার্থী হিসেবে সমস্ত স্তরের মানুষকে আমরা রাখব। তাই আমাদেরই জয় হবে।”