আশায়: কাজের আবেদনপত্র জমা দিতে লাইন। নিজস্ব চিত্র
প্রশাসনিক ভবনের গেটের গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন কালিয়াচকের মেহেরাপুরের বাসিন্দা রবিউল হক। তাঁর ঠিক পাশের লাইনেই দাঁড়িয়ে রতুয়ার বাসিন্দা আমিনা বিবি। আর তাঁদের পেছনেই লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে অগণিত পুরুষ-মহিলা। প্রত্যেকের হাতেই সরকারি এককালীন অনুদান ও কাজ চেয়ে আবেদনপত্র।
লাইনে কখন থেকে রয়েছেন? রবিউল, আমিনা বিবিরা একযোগে বললেন, “ভোর চারটে থেকেই মালদহ জেলা প্রশাসনিক ভবনে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছি।’’ শুক্রবার থেকে রবিবার পর্যন্ত টানা তিনদিন সরকারি অফিস ছুটি ছিল। তাই সোমবার বেশি ভিড় হওয়ায় আশঙ্কায় ভোর থেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে পড়েছি বলে দাবি করেন তাঁরা।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রায় ৪৫ হাজার আবেদন পত্র জমা পড়েছিল জেলা প্রশাসনিক ভবনে। তারপর টানা ছুটির পর এ দিন অফিস খুলতেই আবেদনপত্র জমা দেওয়ার হিড়িক পড়ে যায় শ্রমিকদের মধ্যে। এ দিনও প্রায় ১৪ হাজার আবেদন পত্র জমা পড়েছে বলে দাবি প্রশাসনের কর্তাদের। ভিড় সামাল দিতে পুলিশের পাশাপাশি মোতায়ন করা হয়েছে কমব্যাট ফোর্সও। একই সঙ্গে চারজন কর্মী আবেদনপত্র গ্রহণ করেছেন। তিন কর্মী সেগুলি সংগ্রহ করে সাজিয়ে রাখছেন। আবেদনপত্র জমা দেওয়ার হিড়িক দেখে প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, ভিন্ রাজ্য থেকে ফিরে আসা শ্রমিকদের সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ শ্রমিকেরাও আবেদনপত্র জমা দিতে ভিড় জমাচ্ছেন।
এই বিপুল আবেদনপত্র নিয়ে কী করা হবে? পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দফতরের মালদহের আধিকারিক সুকান্ত সাহা বলেন, “আবেদনপত্র গুলি রেজিস্ট্রেশন করা হবে। তারপরে আবেদনকারীদের মোবাইল ফোন নম্বরে এসএমএসের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশনের বিষয়টি জানিয়ে দেওয়া হবে। এরপরেই ব্লক, পঞ্চায়েত ভিত্তিক আবেদনপত্র গুলি সংগ্রহ করে রাখা হবে।” তবে শুধু আবেদনপত্র সংগ্রহ করে রাখাই নয়, কাজ দেওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে বলে জানিয়েছেন সুকান্ত বাবু। তিনি বলেন, “আবেদনকারীদের জবকার্ড থাকলে ১০০ দিনের প্রকল্পে তাঁদের কাজ দেওয়া হবে। আর যাঁদের জব কার্ড নেই তাঁদের তৈরি করে দেওয়া হবে। সেই সঙ্গে কৃষাণ ক্রেডিট কার্ড, উদ্যান পালন দফতরের সাহায্যে পুরুষদের সুবিধে দেওয়া হবে।”
আবেদনপত্র জমা দিয়েও কাজ পাওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন কর্মপ্রার্থীরা। তাঁদের দাবি, জবকার্ড থাকা সত্ত্বেও নিয়মিত কাজ মেলে না। যার জন্য ভিন রাজ্যে কাজে যেতে হচ্ছে। এ ছাড়া দৈনিক হাজার হাজার আবেদন জমা পড়ছে। প্রশাসন কি সকল আবেদনকারীদের কাজ দিতে পারবে? এমনই প্রশ্ন তুলেছেন ভিন রাজ্য থেকে ফিরে আসা জেলার শ্রমিকেরা। তবে প্রশাসনের কর্তাদের আশ্বাস, শুধু ১০০ দিনের কাজই নয়, সরকারি বিভিন্ন প্রকল্পে শ্রমিকদের যুক্ত করে সমস্যা মেটানো হবে। মহিলাদের গবাদি পশু, হাঁস, মুরগি-সহ স্বনির্ভর দল গুলিতে যুক্ত করে সকলকে কাজ দেওয়ার চেষ্টা করা হবে বলে জানানো হয়েছে। জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য বলেন, “সরকারি এককালীন টাকার অনুদান নিয়ে রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে।”