এ বার সিবিআই জালে কোচবিহারের রয়্যালও

জাল ছড়াচ্ছে সিবিআই। সারদা, রোজ ভ্যালির পাশাপাশি আরও কয়েকটি অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে পুরোদস্তুর তদন্তে নেমে পড়ল তারা। শুক্রবার উত্তরবঙ্গে ‘রয়্যাল ইন্টারন্যাশনাল’ নামে একটি অর্থলগ্নি সংস্থার অফিস ও কর্ণধারদের বাড়িতে হানা দেয় সিবিআইয়ের দল। মূলত কোচবিহার জেলাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠলেও আশপাশের জেলাতেও ছড়িয়েছিল এই সংস্থার কারবার।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:১৬
Share:

কোচবিহারে অর্থলগ্নি সংস্থা রয়্যালের দফতরে সিবিআই তল্লাশি। —নিজস্ব চিত্র।

জাল ছড়াচ্ছে সিবিআই। সারদা, রোজ ভ্যালির পাশাপাশি আরও কয়েকটি অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে পুরোদস্তুর তদন্তে নেমে পড়ল তারা।

Advertisement

শুক্রবার উত্তরবঙ্গে ‘রয়্যাল ইন্টারন্যাশনাল’ নামে একটি অর্থলগ্নি সংস্থার অফিস ও কর্ণধারদের বাড়িতে হানা দেয় সিবিআইয়ের দল। মূলত কোচবিহার জেলাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠলেও আশপাশের জেলাতেও ছড়িয়েছিল এই সংস্থার কারবার। অভিযোগ, মানুষকে ভুল বুঝিয়ে বাজার থেকে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা তুলেছিল সংস্থাটি। শুক্রবার ভোর থেকে সিবিআইয়ের ৫০ জনের একটি দল কোচবিহারের একাধিক জায়গায় হানা দেয়। সংস্থার অফিস থেকে বেশ কিছু নথিপত্র সংগ্রহ করে তাঁরা। তল্লাশি চালানো হয় সংস্থার একাধিক কর্তার বাড়িতেও। সিবিআইয়ের তরফে জানানো হয়েছে, এ দিন ওড়িশার একটি ও পশ্চিমবঙ্গের ৯টি জায়গায় হানা দেন গোয়েন্দারা। সংস্থার বিরুদ্ধে প্রতারণা, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র এবং বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়েছে।

কোচবিহার জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১০ সালে স্থানীয় চান্দামারির বাসিন্দা মৃত্যুঞ্জয় সরকার নামে এক ব্যক্তি ওই সংস্থাটি গড়ে তোলেন। দেড় বছরে টাকা দ্বিগুণ করে দেওয়া হবে, এই টোপ দিয়ে টাকা তুলতে শুরু করে সংস্থাটি। কোচবিহারের পাশাপাশি জলপাইগুড়ি, শিলিগুড়িতেও জাল বিস্তার করে তারা। ২০১৩ সালে মৃতুয়ঞ্জবাবুর মৃত্যুর পর সংস্থার দায়িত্ব নেন তাঁর স্ত্রী অর্চনাদেবী। পুলিশ জানিয়েছে, নীলিমা দে নামে তাঁর এক বোনকে সঙ্গে নিয়ে কারবার চালাতে থাকেন অর্চনাদেবী। ২০১৩ সালের এপ্রিল থেকে টাকা ফেরানো বন্ধ করে দেওয়া হয়। তার পরেই শুরু হয় বিক্ষোভ। কোচবিহার কোতোয়ালি থানা-সহ বিভিন্ন জায়গায় একাধিক মামলা দায়ের হয়। তদন্তে নেমে রাজ্য পুলিশ গ্রেফতার করে সংস্থার মাথা ওই দুই মহিলা-সহ সাত জনকে। দুই মহিলা এখনও পুলিশ হেফাজতেই রয়েছেন। এ দিন অর্চনাদেবী ও নীলিমাদেবীর বাড়িতে যান গোয়েন্দারা। পাশাপাশি সংস্থার অন্যতম কর্ণধার মানিক সাহার বাড়িতেও তল্লাশি চালান তাঁরা।

Advertisement

রয়্যালের বিরুদ্ধে সিবিআই তদন্ত শুরু হতেই জেলায় রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়ে গিয়েছে। ফরওয়ার্ড ব্লকের কোচবিহার জেলা সম্পাদক উদয়ন গুহ বলেন, “আমরা ওই আর্থিক প্রতারণার সিবিআই তদন্ত চেয়েছিলাম। শাসক দলের কয়েক জন নেতা ও প্রশাসনের দুই আধিকারিক ওই ঘটনায় যুক্ত বলে শুনেছি।” তৃণমূল অবশ্য উদয়নবাবুর এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। কোচবিহার জেলা তৃণমূল সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “উদয়নবাবুদের লোকজনেরাই রয়্যালের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন।”

কোচবিহারের পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব বলেন, “পুলিশ ওই মামলার চার্জশিট আদালতে জমা দিয়েছে।” কোচবিহার সদর মহকুমাশাসক বিকাশ সাহা বলেন, “আমি ওই ঘটনায় এফআইআর করেছি। আশা করি, ঘটনার সঙ্গে যুক্ত রথী-মহারথীরা এ বার গ্রেফতার হবেন।” পুলিশ সূত্রেও জানা গিয়েছে, বেশ কয়েক জন প্রভাবশালী ব্যক্তি এই সংস্থার সঙ্গে জড়িত। এ নিয়ে এ দিন পুলিশের সঙ্গেও কথা বলেন সিবিআই অফিসারেরা। জানা গিয়েছে, ধৃত দুই মহিলাকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করবে সিবিআই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন