শোকার্ত: সাকেরের দেহ চাঁচলের গ্রামে এল। কান্নায় ভেঙে পড়েছেন পরিজনেরা। (ইনসেটে) সাকের আলি। —নিজস্ব চিত্র।
শোক আর প্রতিবাদ মিশে গেল চাঁচলের স্বরূপগঞ্জে। পাশাপাশি উঠল যথাযথ তদন্তের দাবি। শুক্রবার রাজস্থান থেকে মৃত শ্রমিক সাকের আলির (৩৪) দেহ তাঁর গ্রামের বাড়িতে আনা হয়। পরিজনদের দাবি, সাকেরকে খুন করা হয়েছে। ঘটনার কিনারা করতে রাজস্থান পুলিশের উপরে ভরসা না করে সিবিআই তদন্ত চেয়ে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন পরিজনেরা। সাকেরের পরিবারকে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন জেলার কংগ্রেস, তৃণমূল ও সিপিএম নেতৃত্ব।
মঙ্গলবার রাজস্থানের জয়পুরে ডেকোরেটর্সের শ্রমিক সাকেরের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়। ওই এলাকাতেই পৃথক একটি ভাড়া বাড়িতে থাকেন সাকেরের দাদা আনোয়ারুল হোসেন। এলাকার কয়েকজন শ্রমিক সাকেরের খোঁজে গিয়ে ঘরের মধ্যে তাঁর দেহ দেখতে পান। এরপরেই বিষয়টি তাঁর দাদাকে জানান। এ দিন দুপুরে তাঁর দেহ নিয়ে বাড়ি ফেরেন আনোয়ারুল। দেহ আসতেই গোটা এলাকা ভেঙে পড়ে সাকেরের বাড়িতে। অভাবি পরিবারটিকে প্রশাসনিক সাহায্য করার দাবি উঠেছে।
চাঁচলের মহকুমাশাসক দেবাশিস চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘জয়েন্ট বিডিওকে মৃতের বাড়িতে পাঠিয়েছিলাম। তার রিপোর্ট উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হচ্ছে। তাদের নির্দেশ মতোই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’
ছয় ভাইবোনের মধ্যে সাকের তৃতীয়। বাড়িতে রয়েছেন বাবা ও মা। বছর পাঁচেক আগে মেয়েকে নিয়ে বাড়ি ছাড়েন তাঁর স্ত্রী। এখন তিনি বেশিরভাগ মুম্বইতে থাকেন। এ দিন সকালে দেহ আসার আগে সাকেরের বাড়িতে এসেছিলেন তার স্ত্রীও। কিছুক্ষণ থেকে ফিরে যান। সাকেরের মা ওবেদা বিবি গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে সিপিএমের প্রার্থী হয়ে হেরে যান। এখন তাঁরা তৃণমূল করেন বলে দাবি করেছেন মৃতের এক দাদা।
সাকেরের দাদা জাকির হোসেন বলেন, ‘‘ভাইকে যে খুন করা হয়েছে তা নিয়ে আমাদের কোনও সন্দেহ নেই। এখন আমরা তৃণমূল করলেও প্রত্যেকের কাছেই সাহায্যের আবেদন করছি। ভাইয়ের খুনিদের চিহ্নিত করে তাদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হোক, এটাই চাই। সেজন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়ে আবেদন করব।’’
বৃহস্পতিবার স্বরূপগঞ্জে তাঁর বাড়িতে গিয়েছিলেন সাংসদ মৌসম নুর, সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র। এ দিন তার বাড়িতে যান জেলা তৃণমূল যুব সভাপতি অম্লান ভাদুড়ি। সাংসদ বলেন, ‘‘কে কোন দল করেন সেটা বড় কথা নয়। এ রাজ্যের একজন শ্রমিক খুন হয়েছেন। পরিজনরা চাইলে তাদের সবরকম সাহায্য করা হবে।’’ একই কথা বলেছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র।
জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি অম্লান ভাদুড়ি বলেন, ‘‘আফরাজুলের পর সাকের। আর ঘটনাস্থল বিজেপি শাসিত রাজ্য। ওরা প্রচার করছে একতা চাই। অথচ একের পর এক রাজ্যের শ্রমিক খুন হচ্ছে। এটাই কি তার নমুনা?’’