গাড়ির গতিবেগে রাশ টানতে গরুমারার পথে সিসি ক্যামেরা

লাটাগুড়ি পেরিয়ে গেলেই গরুমারা জাতীয় উদ্যান। গভীর এই জঙ্গলের মধ্যে দিয়েই চলে গিয়েছে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক। জলপাইগুড়ি ময়নাগুড়ি লাটাগুড়ি হয়ে এই পথ চলে গিয়েছে চালসার দিকে। ব্যস্ত এই জাতীয় সড়কের প্রায় ৭ কিলোমিটার গভীর জঙ্গলের মধ্যে।

Advertisement

সব্যসাচী ঘোষ

লাটাগুড়ি শেষ আপডেট: ১৯ জুন ২০১৬ ০৮:১২
Share:

গরুমারার পথে দুর্ঘটনায় মৃত বাইসন। —ফাইল চিত্র।

লাটাগুড়ি পেরিয়ে গেলেই গরুমারা জাতীয় উদ্যান। গভীর এই জঙ্গলের মধ্যে দিয়েই চলে গিয়েছে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক। জলপাইগুড়ি ময়নাগুড়ি লাটাগুড়ি হয়ে এই পথ চলে গিয়েছে চালসার দিকে। ব্যস্ত এই জাতীয় সড়কের প্রায় ৭ কিলোমিটার গভীর জঙ্গলের মধ্যে। প্রতি ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার সর্বোচ্চ গতিসীমা বেঁধে দেওয়া হলেও সেই নিয়মের পরোয়া না করেই দ্রুত গতিতে বাইক, গাড়ি ছোটে জঙ্গলের পথে।

Advertisement

জাতীয় সড়কে গাড়ির ধাক্কায় কখনও বাইসন, কখনও চিতাবাঘ, আবার কখনও সাপের মৃত্যুও লেগেই আছে। আবার জঙ্গলে গাড়ি দাঁড় করিয়ে মদ, বিয়ারের ফোয়ারা ছুটিয়ে সেলফি তোলার হিড়িকের অভিযোগও দীর্ঘদিনের। এবার তাই জঙ্গলের পথে রাশ টানতে সিসি ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নিল বন দফতর। গরুমারার এই পথে সিসি ক্যামেরার মাধ্যমেই যান চলাচলের ওপর নজরদারি চালাবেন বনকর্তারা। ফুটেজ দেখে গাড়ি চিহ্নিত করে লাটাগুড়ি বা গরুমারা জাতীয় উদ্যানের মূল চেকপোষ্টের সামনে আটকে দেওয়া হবে অভিযুক্তদের।

চলতি বছরের গোড়া থেকেই এই পরিকল্পনা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল বনকর্তাদের। জলপাইগুড়ি জেলাপ্রশাসনের শীর্ষ স্তরে বৈঠক করে বিষয়টিও জানিয়েও রেখেছিলেন তাঁরা। প্রস্তাব মনে ধরে খোদ বনমন্ত্রীরও। এবার কীভাবে এই পরিকল্পনাকে রূপ দেওয়া যায় সেই ছক তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছেন বনআধিকারিকরা। বনদফতরের উত্তরমণ্ডলের বনপাল(বন্যপ্রাণ) সুমিতা ঘটক নিজেই বিষয়টি দেখছেন। দীর্ঘসময় গরুমারার ডিএফওর দায়িত্ব পালন করায় এই জঙ্গলের ব্যাপারে তাঁর বিরাট অভিজ্ঞতার ওপরেই ভরসা রাখছে বনদফতর। সুমিতা দেবীর কথায়, ‘‘সিসি ক্যামেরা আমাদের বসাতেই হতো। জঙ্গলের পথকে লাগামহীন বিনোদনের জন্যে ছে়ড়ে দেওয়া যায় না। এটা কোন শহুরে উড়ালপুল বা জনপ্রিয় শহুরে মোড় নয়। এটা গভীর জঙ্গলের পথ। এখানে বিদ্যুত, মোবাইল টাওয়ারের সমস্যা রয়েছে। গোপন ক্যামেরা এমন ভাবেও বসানো যাবে না যে উল্টে ক্যামেরাই চুরি হয়ে গেল তাই সবদিক মাথায় রেখে আমরা কাজ করব।’’

Advertisement

বন্যপ্রাণ এবং জঙ্গলকে বাঁচাতেই যে এই সিদ্ধান্ত তা জানালেন রাজ্যের বনমন্ত্রী বিনয় বর্মনও। বনদফতর যে এবারে কঠিন এবং কঠোর পদক্ষেপ নিতে চলেছে তা বিনয়বাবুর কথাতেই পরিষ্কার। তিনি বলেন, ‘‘আমরা এখন আর কথা বলে সময় নষ্ট করতে রাজি নই, কিভাবে জঙ্গল আর বন্যপ্রাণ বাঁচানো যায় তার জন্যেই কাজ চলছে। এটি সেরকমই একটা পদক্ষেপ।’’

যেখানে গোপন ক্যামেরা নেই, জঙ্গলের সে রকম অংশে গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখলে কীভাবে তা জানা যাবে তারও একটা উপায় খুঁজে ফেলেছেন বনাধিকারিকরা। এক বনাধিকারিকের কথায়, কোনও গাড়ি যখন জঙ্গলের পথে ঢুকবে তখন নির্দিষ্ট গতিতে এলাকা পেরোতে একটা নির্দিষ্ট সময়ই লাগবে। কিন্তু যদি দেখা যায় সময় পেরিয়ে যাবার পরও গাড়ি জঙ্গল থেকে বের হচ্ছে না তখনই বোঝা যাবে যে গাড়িটি জঙ্গলে দাঁড়িয়ে পড়েছিল। সুমিতা ঘটকের কথায়, ‘‘জাতীয় সড়কে জঙ্গলের পথে শুধু চলাচলের অধিকার রয়েছে। গাড়ি থামিয়ে জঙ্গলে দাঁড়ানো একেবারেই বেআইনি। গতি মাপার বিশেষ যন্ত্র যা কলকাতার বিভিন্ন উড়ালপুলে রয়েছে সেরকম যন্ত্রও বসানো যায় কি না তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে গরুমারায়।’’

গরুমারাতে গতি কমাতে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে রাম্বেল স্ট্রিট নামের গতিরোধক বসানোর চিন্তাভাবনা হয়েছিল। কিন্তু জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের অনুমোদন না মেলায় তা আর এগোয়নি। এবারে সিসিটিভিতেই তাই যানের ওপর রাশ টানার আশায় বনদফতর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন