ধর্মঘটে কাজ হল চকচকা শিল্পতালুকে

বাম-বিজেপির ডাকা সাধারণ ধর্মঘটে মোটের উপর স্বাভাবিকই ছিল কোচবিহারের চকচকা শিল্প তালুক। বৃহস্পতিবার ওই শিল্পতালুকের বেশিরভাগ কলকারখানাতেই স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে। শ্রমিকদের হাজিরাও ছিল অন্যদিনের মতই। ফলে লোকসান নিয়ে মুখে পড়ার আশঙ্কা নিয়ে উদ্বেগ কেটেছে উদ্যোগীদের। শিল্পতালুক সূত্রের খবর, এদিন শ্রমিকদের কেউ প্রায় চার কিমি দূর থেকে হেঁটে এসেছেন।

Advertisement

অরিন্দম সাহা

কোচবিহার শেষ আপডেট: ০১ মে ২০১৫ ০৪:৪৬
Share:

চকচকা শিল্পকেন্দ্রে কাজ চলছে।

বাম-বিজেপির ডাকা সাধারণ ধর্মঘটে মোটের উপর স্বাভাবিকই ছিল কোচবিহারের চকচকা শিল্প তালুক। বৃহস্পতিবার ওই শিল্পতালুকের বেশিরভাগ কলকারখানাতেই স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে। শ্রমিকদের হাজিরাও ছিল অন্যদিনের মতই। ফলে লোকসান নিয়ে মুখে পড়ার আশঙ্কা নিয়ে উদ্বেগ কেটেছে উদ্যোগীদের। শিল্পতালুক সূত্রের খবর, এদিন শ্রমিকদের কেউ প্রায় চার কিমি দূর থেকে হেঁটে এসেছেন। কেউ আবার পরিচিত কারও সাইকেল কিংবা মোটর বাইকে ‘লিফট’ নিয়েছেন। সকাল থেকে তিনটি সিফটেই উপস্থিতির হার স্বাভাবিক থাকায় উৎপাদন মার খাওয়ার আশঙ্কার উদ্বেগ এড়ান গিয়েছে।

Advertisement

বনধ সমর্থকদের কোন পিকেটিংও শিল্পতালুক চত্বরে ছিলনা। স্বাভাবিকভাবে গোলমালের কোন ঘটনাও ঘটেনি। এমনকি বিরোধী সংগঠনের সমর্থকদের একাংশও কাজে যোগ দিয়েছেন বলে শাসকদলের শ্রমিক সংগঠন নেতারা দাবি করেছেন। কোচবিহার ডিসট্রিক্ট ইন্ড্রাস্টিয়াল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সুকুমার সাহা বলেন, “এদিন চকচকা শিল্পতালুকের সবকটি কারখানায় স্বাভাবিক কাজকর্ম হয়েছে। শ্রমিকদের হাজিরাও মোটামুটি অন্যদিনের মতই ছিল। কোথাও কোন গোলমাল হয়নি।” চকচকা শিল্পতালুকের একটি চটকলের ম্যানেজার ইন্দ্রনীল ভট্টাচার্য বলেন, “স্বাভাবিক কাজ হয়েছে। শ্রমিকদের হাজিরাও ছিল পুরোপুরি একশো শতাংশ।

শিল্পতালুক সূত্রেই জানা গিয়েছে, বাম জমানায় ২০০১ সালে কোচবিহার শহর লাগোয়া চকচকায় তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের উদ্যোগে ওই শিল্পতালুক গড়ে ওঠে। এখন সেখানে চটকল, প্লাস্টিক সামগ্রী, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, বৈদ্যুতিন সামগ্রী, সরষের তেল কল, চালকল সহ ২৩ টি কারখানা চালু রয়েছে। গত কয়েকবছরে অবশ্য বেশ কিছু কারখানা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ওই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন কয়েকমাস আগে বন্ধ হওয়া একটি চটকল। তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসির দাবি, নতুন সরকার শিল্পস্থাপনে উৎসাহ দিচ্ছে। শ্রমিক স্বার্থের ব্যাপারেও নজর রাখছে। সবমিলিয়েই চকচকা শিল্পতালুকের শ্রমিকরা বনধের ক্ষতি নিয়ে সচেতন হয়েছেন। তাই স্বতঃস্ফূর্ত শ্রমিক উপস্থিতি ছিল। আইএনটিটিইউসির কোচবিহার জেলা সভাপতি প্রাণেশ ধর বলেন, “ চকচকায় এদিনের বনধে কোন প্রভাব পড়েনি। সাধারণ শ্রমিকরা তো বটেই হাতেগোনা কয়েকজন বাম মনোভাবাপন্ন শ্রমিক রয়েছেন তাঁরাও কাজ করেন।”

Advertisement

বিরোধী সংগঠন নেতাদের অবশ্য অভিযোগ, শাসকদল প্রভাবিত সংগঠনের লোকেরা রীতিমতো ‘ ভয়’ দেখান। তারজেরেই ভিন্ন মনোভাবাপন্নদের অনেককেই কাজে যোগ দিতে বাধ্য হয়েছেন। সিটুর কোচবিহার জেলা সম্পাদক জগতজ্যোতি দত্ত বলেন, “ চকচকায় আমাদের লোকেরা যারা কাজে গিয়েছেন তাঁরা শাসকদলের ভয়ে গিয়েছেন।” বিজেপির কোচবিহার জেলা সম্পাদক নিখিলরঞ্জন দে বলেন, “তৃণমূল সাধারণ শ্রমিকদের হুমকি দেওয়ায় চকচকার কারখানাগুলি সচল ছিল।”

চাপানউতোর যাই থাক শিল্পতালুক স্বাভাবিক থাকায় খুশি উদ্যোগীরা। উদ্যোগীদের কয়েকজন জানান, একদিন শিল্পতালুক বন্ধ থাকলে অন্তত ১ কোটি টাকার উৎপাদন মার খাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এবার সেটা হয়নি এটাই বড়কথা। হাজিরার হার স্বাভাবিক থাকার ব্যাপারে সাধারণ শ্রমিকরা কি বলছেন? চকচকার স্থানীয় শ্রমিক সংগঠন নেতাদের ব্যাখাই বা কি? চালকল কারখানার শ্রমিক সুশীলা অধিকারী বলেন, “ শুক্রবার মে দিবসের ছুটি। তার আগের দিন প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাক সেটা চাইনি। তাই চার কিমি দূরে খাপাইডাঙার বাড়ি থেকে হেঁটে এসেছি।”

চটকলের শ্রমিক এক সিটু সমর্থক রমনী দাস বলেন, “ সহকর্মীরা অনেকেই এসেছেন। কারখানা চালু থাকলে মেকানিক্যাল কর্মী হিসাবে আমাকে দরকার হতে পারে। তাছাড়া মে দিবসেও কারখানা বনধ থাকবে। সবভেবেই আমি কাজে যোগ দিই।” আইএনটিটিইউসির চকচকা ইউনিট সম্পাদক সঞ্জয় কার্জি বলেন, “রুটিরুজির ক্ষতি কেউ চাননা। বনধে যে আখেরে লাভ হয়না সেটা সবাই বুঝেছেন। রমনীবাবুর মত বাম সমর্থক শ্রমিকরাও তাই এদিন স্বেচ্ছায় আসেন।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন