অভাবে পড়া ছেড়ে কাজে

রাজ্যের শাসক দল অবশ্য দাবি করেছে, সরকার স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের জন্য নতুন পোশাক, জুতো থেকে শুরু করে কন্যাশ্রী চালু হয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে দুপুরের মিড-ডে মিল। সবমিলিয়ে স্কুলের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে ছেলেমেয়ে ও অভিভাবকদের। 

Advertisement

নমিতেশ ঘোষ

কোচবিহার শেষ আপডেট: ১৫ নভেম্বর ২০১৭ ০২:৩৭
Share:

প্রতীকী ছবি।

অভাবের তাড়নায় প্রাথমিকেই পড়া ছেড়ে দিয়েছিল খামারসিতায়ের রঞ্জিত বর্মন। তারপর বাজারে লটারির টিকিট বিক্রি শুরু করে বছর তেরোর রঞ্জিত।

Advertisement

রঞ্জিত একা নয়, অভাবের কারণে কোচবিহার জেলার অনেক পরিবারের শিশুরাই প্রাথমিকেই পড়াশোনার পাট চুকিয়ে দিয়ে শ্রমিকের কাজ শুরু করছে। স্কুল শিক্ষা দফতরের চাইল্ড রেজিষ্টার জানাচ্ছে, চলতি বছরেই ৬ থেকে ১৮ বছরের মধ্যে ২৮২ জন পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছে। কোনও না কোনও জায়গায় শ্রমিকের কাজ করছে তারা। ওই শিশুদের অবশ্য স্কুলে ফেরাতে তৎপর হয়েছে শিক্ষা দফতর। সে জন্য বিশেষ ভাবে ওই শিশুদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাঁদের স্কুলে ফেরাতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

কোচবিহারের সাংসদ পার্থপ্রতিম রায় অবশ্য বলেন, “স্কুলছুট এখন নেই বললেই চলে। এক-দুটি ঘটনা সামনে এলে সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের স্কুলে ফেরানো হচ্ছে। রাজ্য সরকার স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের জন্য একের পর এক প্রকল্প ঘোষণা করায় প্রত্যেকেই এখন স্কুলে যায়।” আর প্রাথমিকের কোচবিহার জেলা শিক্ষা আধিকারিক নৃপেন রায় বলেন, “ওই সংখ্যা একদমই কম। প্রায় একশো শতাংশই স্কুলে যাচ্ছে।”

Advertisement

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলার এক আধিকারিক বলেন, “প্রতি বছর স্কুলছুটের সংখ্যা কমে আসছে ঠিকই, তবে একটি সংখ্যা স্কুলছুট রয়েইছে। তাঁদের ফেরাতে ইতিমধ্যেই আমরা গ্রামে গ্রামে অভিযান শুরু করেছি।”

কোচবিহারের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা স্কুলছুট ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে ফেরানোর কাজ করছে। এরজন্য পাঁচটি প্রশিক্ষণ শিবির চালু করেছে তারা। পাঁচ মাস প্রশিক্ষণের পর তাঁরা শিশুদের স্কুলে ফেরাচ্ছে। কিছুদিন আগে রঞ্জিত বর্মনকে স্কুলে ফিরিয়েছে তাঁরা। স্কুলে ফেরানো হয়েছে মৃদুল প্রামাণিক নামে সিতাইয়ের কায়েতের বাড়ির এক শিশুকে। সে একটি জুতোর দোকানে কাজ করছিল। সব মিলিয়ে পাঁচটি প্রশিক্ষণ শিবিরে ছাত্রছাত্রী মিলিয়ে ১৬৩ জন রয়েছে। ওই সংস্থার সম্পাদক মইনুল হক বলেন, “আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে দেখেছি আর্থিক অনটনের জেরে বছর দশেক বয়সেই টাকা উপার্জনের রাস্তায় নামছে তাঁরা। আমরা চেষ্টা করছি কাজ বজায় রেখেই তাঁদের স্কুলে পাঠাতে। তাতে কাজ হচ্ছে।”

রাজ্যের শাসক দল অবশ্য দাবি করেছে, সরকার স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের জন্য নতুন পোশাক, জুতো থেকে শুরু করে কন্যাশ্রী চালু হয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে দুপুরের মিড-ডে মিল। সবমিলিয়ে স্কুলের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে ছেলেমেয়ে ও অভিভাবকদের।

রঞ্জিতরা অবশ্য বলছে, “বাড়িতে প্রতিদিন টাকার দরকার হয়। না হলে খাওয়া জোটে না। তাই দিনমজুরি করতে বাধ্য হয়েছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন