Malnutrition

‘কাজ নেই স্বামীর, তো বাচ্চাকে খাওয়াব কী?’

করোনা আবহে যাঁর পরিচারিকার কাজে রোজগার কমেছে, স্বামীর ছোট দোকানে বিক্রি নেই। মেয়ের জন্য পুষ্টিকর খাবারের কথা উঠতে গলা ধরে আসে তাঁর।

Advertisement

অরিন্দম সাহা

শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০২১ ০৬:২৭
Share:

বাচ্চাদের নিয়ে অর্চনা বর্মণ (বাঁ দিকে) ও রুমা দায় (ডানদিকে)। নিজস্ব চিত্র।

টিনের বেড়া, বাঁশের খুঁটির একচিলতে মাটির ঘর। ‘নুন আনতে পান্তা ফুরনোর’ সংসার। করোনা আবহে তাঁতের শাড়ি তৈরির কারিগর স্বামীর রোজগার আরও কমেছে। টাকার টানাটানি আরও বেড়েছে। তাতে তুফানগঞ্জের নাককটিগছের ধাদিয়ালের অচর্না বর্মণের চিন্তাও বেড়েছে। দুই শিশুসন্তানের জন্য পুষ্টিকর খাবারের জোগাড় নিয়ে উদ্বেগ স্পষ্ট তাঁর কথায়। কোচবিহারের তোর্সা বাঁধ লাগোয়া এলাকার রুমা রায়ও একই উদ্বেগে। করোনা আবহে যাঁর পরিচারিকার কাজে রোজগার কমেছে, স্বামীর ছোট দোকানে বিক্রি নেই। মেয়ের জন্য পুষ্টিকর খাবারের কথা উঠতে গলা ধরে আসে তাঁর।

Advertisement

অচর্না বলছিলেন, ‘‘ছেলের বয়স দশ মাস। মেয়ের আড়াই বছর। স্বামীর কাজ প্রায় বন্ধ। আমাদের যা অবস্থা তাতে বাচ্চাদের ভালমন্দ কী করে খাওয়াব।’’ এর পরেই তিনি জুড়লেন, ‘‘অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র আগের মতো চালু হলে ভাল হত।’’ পরিবারের লোকেরা জানান, অর্চনার দশ মাসের ছেলে এক-দু’মাস অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের খাদ্যসামগ্রী পেয়েছে। তবে আড়াই বছরের মেয়ে আগে রান্না করা খাবার, ডিম সেদ্ধ পেত। তাতে সন্তানদের পুষ্টিকর খাবারের চিন্তা কম ছিল। রুমা বলেন, ‘‘প্রথম বার লকডাউনের আগে রান্না করা খাবার দিত অঙ্গনওয়াড়ি। তাতে সুবিধা হত। এখন আমার কাজ বন্ধ। স্বামীর দোকান তেমন চলে না। এমন অবস্থায় মেয়েকে ভাল কিছু নিয়মিত খাওয়াতে পারছি না।’’ অর্চনাও মনে করতে পারেন না কত দিন আগে বাচ্চাদের ডিম খাইয়েছেন। তাঁর কথায়, ‘‘মাসে এক-দু’দিন বাড়িতে ডিম রান্না হয়।’’

অনেক বাড়িতে সন্তানসম্ভবা, প্রসূতিদের নিয়েও চিন্তা বেড়েছে। এক বাসিন্দার কথায়, ‘‘অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে ৬ বছরের বাচ্চাদের পাশাপাশি সন্তানসম্ভবা, প্রসূতিদের পুষ্টিকর খাবার দেওয়া হত। আগে রান্না করা খাবার, ডিম মিলত। পরে চাল, মুসুর ডাল, ছোলা, আলু দেওয়া হয়। তা-ও ফেরুয়ারির পরে কয়েক মাস তা বন্ধ হয়ে থাকে।’’

Advertisement

প্রশাসন অবশ্য জানিয়েছে, মঙ্গলবার থেকে উপভোক্তাদের প্রত্যেককে খাদ্যসামগ্রী বিলির কাজ শুরু হয়েছে। কোচবিহারের জেলা পরিষদ সভাধিপতি উমাকান্ত বর্মণ বলেন, ‘‘অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের উপভোক্তাদের খাদ্যসামগ্রী বিলি শুরু করা হয়েছে।’’ প্রশাসনের এক কর্তা জানান, নির্দেশিকা অনুযায়ী জেলার সর্বত্র খাদ্যসামগ্রী দেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। প্রথম দিনেই ৬টি ব্লকে কাজ শুরু হয়। মাথাপিছু ২ কেজি চাল, ২ কেজি আলু, ৩০০ গ্রাম মুসুর ডাল বরাদ্দ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন