ভাল ফল করেও স্বপ্ন দেখতে চায় না ছোটন, নাসিরুদ্দিন

বাবা দীর্ঘদিন অসুস্থ। একজনকে তাই পড়ার খরচ যোগাতে বাবার যন্ত্রপাতি নিয়ে হাটে ও বাজারে নিয়মিত জুতো সেলাই করতে হত। আর অন্যজনকে হাটে হাটে বাবার অস্থায়ী চায়ের দোকানে চা বিক্রি করতে হত। ফলে মাঝেমধ্যেই স্কুলে যেতে পারত না ওরা। দুবেলা ঠিকমতো খাবারও জুটত না। ফলে টিউশন নেওয়ারও ক্ষমতা ছিল না।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

চাঁচল শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৫ ০২:৩৪
Share:

ছোটন।

বাবা দীর্ঘদিন অসুস্থ। একজনকে তাই পড়ার খরচ যোগাতে বাবার যন্ত্রপাতি নিয়ে হাটে ও বাজারে নিয়মিত জুতো সেলাই করতে হত। আর অন্যজনকে হাটে হাটে বাবার অস্থায়ী চায়ের দোকানে চা বিক্রি করতে হত। ফলে মাঝেমধ্যেই স্কুলে যেতে পারত না ওরা। দুবেলা ঠিকমতো খাবারও জুটত না। ফলে টিউশন নেওয়ারও ক্ষমতা ছিল না। কিন্তু সব প্রতিকূলতাকে জয় করে এ বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৭৫ শতাংশের উপরে নম্বর পেয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছে মালদহের চাঁচলের দক্ষিণপাকা মল্লিকপাড়া হাইস্কুলের দুই ছাত্র। পড়ার খরচ যোগাতে জুতো সেলাই করে রোজগার করে চারটি বিষয়ে লেটার-সহ ছোটন রবিদাস পেয়েছে ৫৩১। আর বাবার সঙ্গে চায়ের দোকান সামলে নাসিরুদ্দিন আলমের প্রাপ্ত নম্বর ৫৪৮। পাঁচটি বিষয়ে লেটার পেয়েছে সে।
তাদের বক্তব্য, টিউশন নেওয়ার সামর্থ্য থাকলে ইংরেজিতে হয়তো আরও বেশি নম্বর পাওয়া যেত। তবু লড়াই করে অভাবি ঘরের ওই দুই ছাত্রের সাফল্যে স্কুলের ছাত্রশিক্ষক তো বটেই, এলাকার বাসিন্দারাও খুশি। তবে ইচ্ছে থাকলেও বিজ্ঞান বিভাগে পড়ার আশা ছেড়ে দিয়েছে তারা। টিউশন ছাড়া বিজ্ঞান নিয়ে পড়া সম্ভব নয় জেনে কলা বিভাগে পড়াশুনা করেই এগিয়ে যেতে চায় ছোটন ও নাসিরুদ্দিন। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক গোকুলকুমার দাস বলেন, ‘‘স্কুলের তরফে ওদের সবরকম সাহায্য করা হত। কিন্তু অভাব ওদের নিত্যসঙ্গী। তারপরেও ওরা যা ফল করেছে তাতে আমরা খুশি। ওরা অন্যদের কাছে প্রেরণা হতে পারে।’’

Advertisement


নাসিরুদ্দিন।

ছোটনের বাড়ি মল্লিকপাড়া গ্রামেই। বাড়ি বলতে বেড়ার উপরে মাটির প্রলেপ দেওয়া ঘর। বাবা খগেন রবিদাস ছিলেন পেশায় চর্মকার। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তিনি অসুস্থ। চোখেও ভালো দেখেন না। মা পুসিয়াদেবী কানে শোনেন না। দুই দাদা ভিন্ রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করেন। এক দাদা বিয়ে করে পৃথক সংসার পেতেছেন। চার বছর আগে বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ার পর পড়ার পাশাপাশি সংসার চালানোর খরচ জোগাতে হাটে ও বাজারে নিয়মিত জুতো সেলাই করতে শুরু করে ছোটন। তার ফাঁকেই যেটুকু সময় পেত বই নিয়ে বসে পড়ত সে।

Advertisement

আর নাসিরুদ্দিনের বাবা আবেদ আলি হাটে চায়ের দোকান করে সংসার চালান। তা থেকে যা রোজগার হয় তাতে চার ছেলেমেয়ের খাবার জোগাড় করতেই হিমশিম খেতে হয়। দাদা অন্য রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করেন। তাই বাবার সঙ্গে নাসিরুদ্দিনকেই হাটে হাটে যেতে হয়। মহানন্দপুরে তাদেরও বাড়ি বলতে বেড়ার তৈরি ঘর। ছোটন জানায়, ‘‘এত সমস্যা যে স্বপ্ন দেখি না। কোনও লক্ষ্যও নেই। কেননা এরপর কীভাবে পড়াশুনা চলবে সেটাই জানি না।’’ স্কুলের আংশিক সময়ের এক শিক্ষক সহিদুর রহমান সব বিষয়েই তাঁদের সাহায্য করতেন। তিনি বলেন, ‘‘চেষ্টা থাকলে যে কিছু করা যায় তা ওরা দেখিয়ে দিয়েছে।’’

নিজস্ব চিত্র।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন