ক্ষুব্ধ: গীতালদহের হরিরহাটে স্কুলে হামলার প্রতিবাদে অবরোধ তৃণমূলের। বুধবার। নিজস্ব চিত্র
কখনও খুনের অভিযোগ, তো কখনও গুলিবিদ্ধ। প্রায় প্রতিদিন যুব তৃণমূল ও মূল তৃণমূলের মধ্যে গন্ডগোলের ঘটনা ঘটছে কোচবিহারের দিনহাটায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে কোচবিহারে এসে দলীয় নেতাদের সতর্ক করে গিয়েছেন। দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে যুব তৃণমূলের নেতা, দিনহাটার বাসিন্দা নিশীথ প্রামাণিককে। তার পরেও দু’পক্ষের লড়াই থামেনি। কোচবিহার জেলা তো বটেই, গোটা উত্তরবঙ্গেই এখন প্রশ্ন, কেন বারবার উত্তপ্ত হচ্ছে দিনহাটা?
বিরোধীদের অভিযোগ, দিনহাটা সীমান্তে বিস্তীর্ণ অঞ্চলে কাঁটাতার নেই। তাই এই এলাকায় ব্যাপক হারে চোরাকারবার চলে বলে অভিযোগ। সেই কারবার কে নিয়ন্ত্রণ করবে, তা নিয়েই রাজ্যের শাসকদলের স্থানীয় নেতাদের লড়াই চরম জায়গায় পৌঁছেছে। এর বাইরে গ্রাম পঞ্চায়েতের ক্ষমতা দখলের বিষয়টি তো আছেই। দলের কোচবিহার জেলা সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী নিজেও একাধিকবার অভিযোগ করেন, যুব তৃণমূলের পতাকার নীচে একদল দুষ্কৃতী ও সীমান্তের চোরাকারবারি আশ্রয় নিয়েছে। তিনি বলেন, “ওই দুষ্কৃতীরাই নানা জায়গায় গন্ডগোল করছে। সব পুলিশকে জানানো হয়েছে।” দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহ অবশ্য দাবি করেছেন, দিনহাটায় কোনও গন্ডগোল হলেই গোষ্ঠী রাজনীতির কথা বলা হচ্ছে। তিনি বলেন, “কিছু জায়গায় যে গন্ডগোল হয়নি, তা নয়। তবে পারিবারিক বা দুষ্কৃতীদের গন্ডগোলকেও রাজনীতির সঙ্গে যোগ করে দেওয়া হচ্ছে।”
দিনহাটা কোচবিহারের বাংলাদেশ সীমান্ত লাগোয়া একটি মহকুমা। ওই এলাকার গীতালদহ, নাজিরহাট-সহ একটি বিস্তীর্ণ এলাকায় সীমান্তে কাঁটাতার নেই। সেই পথেই চোরাকারবার চলে বলে অভিযোগ। এর বাইরে রাজনৈতিক দিক থেকেও দিনহাটায় সমীকরণ খুবই জটিল। বাম আমলে দিনহাটার নেতা বলতে মানুষ এক ডাকে কমল গুহকে চিনতেন। তার পরে বাম নেতা হিসেবে পরিচিত পান তাঁর পুত্র উদয়ন। ২০১১-তে পালাবদলের পরে তৃণমূল এখানে সংগঠন বাড়াতে শুরু করে। কোণঠাসা উদয়ন ২০১৩ সালে তৃণমূলে যোগ দেন। তাই দিনহাটায় নতুন তৃণমূল ও পুরনো তৃণমূলের লড়াই রয়েছে। নতুন করে সেখানে সংগঠন বিস্তার করে যুব তৃণমূল। বহিষ্কৃত যুব নেতা নিশীথ প্রামণিক ওই এলাকায় প্রভাব বিস্তার করেন। এই অবস্থায় কে দিনহাটার নেতা, তা নিয়ে অঞ্চল থেকে মহকুমা সব স্তরেই লড়াই তীব্র হয়ে ওঠে।
যুব তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি তথা সাংসদ পার্থপ্রতিম রায় বলেন, “যারা দুষ্কর্ম করছে, তারা দল বা সংগঠনের কেউ নয়। তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তৃণমূলের এক নেতা বলেন, “দিনহাটায় নেতৃত্বে সবাই আসতে চাইছে। কারও কথা কেউ শুনছে না। স্বাভাবিক ভাবেই লড়াই থামছে না।”