দুই ভাষার মান রক্ষা

রাজবংশী ও কামতাপুরি দুই ভাষাকেই মর্যাদা দেওয়ার কথা জানিয়ে উভয় পক্ষের মন জয়ের চেষ্টা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার কোচবিহার রাসমেলার মাঠে কামতাপুর পোগ্রেসিভ পার্টির সভায় যান মুখ্যমন্ত্রী।

Advertisement

নমিতেষ ঘোষ ও পার্থ চক্রবর্তী

কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০১৭ ০৩:২২
Share:

রাজবংশী ও কামতাপুরি দুই ভাষাকেই মর্যাদা দেওয়ার কথা জানিয়ে উভয় পক্ষের মন জয়ের চেষ্টা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার কোচবিহার রাসমেলার মাঠে কামতাপুর পোগ্রেসিভ পার্টির সভায় যান মুখ্যমন্ত্রী। সেখানে শুধু দুই ভাষার স্বীকৃতিই নয়, ওই দুই ভাষায় স্কুল কলেজে পড়ানো হবে বলেও জানান।

Advertisement

মুখ্যমন্ত্রী জানান, বিখ্যাত একজনকে মাথায় রেখে কমিটি তৈরি করা হয়েছে। সেই কমিটিতে কেপিপির লোকজনও আছেন। কমিটি কামতাপুরি ভাষার কী কী বইপত্র আছে, কাগজপত্র আছে, তা খতিয়ে দেখবে। তিনি বলেন, “আমরা বই খুঁজছি। বইগুলি পেয়ে গেলে সাবজেক্ট তৈরি করা হবে।’’ পরে বর্ণমালা লেখা হবে। তিনি বলেন, ‘‘সেই লোক খুঁজতে হবে। তারপরে সেগুলি বই আকারে করা হবে। পাঠ্যক্রম তৈরি হবে। ভাষা মর্যাদা পাবে। ভাষা আপন বেগে চলবে।”

তবে এই দু’টি ভাষা নিয়ে নানা বিতর্কও রয়েছে। এক পক্ষের দাবি, কোচবিহারের ভাষা রাজবংশী। সেই তালিকায় গ্রেটার নেতা বংশীবদন বর্মন যেমন আছেন, তেমনই তৃণমূলের রাজবংশী নেতাদের প্রত্যেকেই রয়েছেন। তবে কেপিপি-র অতুলবাবু বরাবর দাবি করেছেন, ওই ভাষা কামতাপুরি। রাজবংশী নয়। এ দিন, মুখ্যমন্ত্রী কী বলেন, সে দিকেই নজর ছিল সবার। মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য সেই বিষয়টি এড়িয়ে দু’টি ভাষাকেই স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলেছেন।

Advertisement

কেপিপি সভাপতি অতুল রায় বলেন, “দিদিকে স্থানীয় তৃণমূল নেতারা ভুল বোঝাচ্ছেন। সে জন্যেই তিনি বিষয়টি বুঝতে পারছেন না। ভাষা নিয়ে কমিটি তৈরি করা হয়েছে। আমরা আশাবাদী তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত নেবেন।” রাজবংশী ভাষা অ্যাকাডেমির সদস্য তথা কোচবিহারের সাংসদ পার্থপ্রতিম রায় বলেন, “দিদি রাজবংশী ভাষা অ্যাকাডেমি দিয়েছেন। ওই ভাষার উপরে আমরা কাজ করছি। আগামী দিনে ওই ভাষা সংবিধানের অষ্টম তফশিলে নিয়ে আসার জন্যে সংসদে সওয়াল করব।”

মুখ্যমন্ত্রী অবশ্য বিতর্কের মধ্যে কোনওভাবেই যাননি। তার বদলে সেই ভাষায় কথা বলে মন জয়ের চেষ্টা করেন তিনি। শুরুতেই তাঁকে বলতে শোনা যায়, “কেমতন আছেন কোচবিহারি ভাইবন্ধুরা। তোমার এটে আসি খিব ভাল নাগিল।” তিনি আরও বলেন, “আমি আপনাদের সঙ্গে একমত। যে নিজের মাটিকে গর্ব করে না, নিজের ভাষাকে গর্ব করে না, নিজের রাজ্যকে গর্ব করে না, নিজের মা, আম্মাকে গর্ব করে না—তার কাছে কিচ্ছু অবশিষ্ট থাকে না।”

মুখ্যমন্ত্রী জানান, তিনি নিজেও লিখবেন, রাজবংশী হোক বা কামতাপুরি হোক। রাজবংশী ভাষা, কামতা ভাষা জিন্দাবাদ বলে তিনি বলেন, “এটে আসি খিব ভাল নাগিল।’’

মঙ্গলবার রাজবংশী ভাষা অ্যাকাডেমির জন্য আর্থিক বরাদ্দ বাড়ানোর সিদ্ধান্তও নিয়েছেন মমতা।

সোমবার কোচবিহারে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন রাজবংশী ভাষা অ্যাকাডেমির চেয়ারম্যান তথা জলপাইগুড়ির তৃণমূল সাংসদ বিজয় বর্মন৷ বিজয়বাবু জানান, মুখ্যমন্ত্রী তাকে বলেছেন, অ্যাকাডেমির জন্য আর্থিক বরাদ্দ বাড়াবেন। সাংসদ জানিয়েছেন, এ বছর অ্যাকাডেমির কাজ-কর্মের জন্য রাজ্য সরকার দশ লক্ষ টাকা বেশি বরাদ্দ করবে৷

রাজ্যে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পরে রাজবংশী ভাষা অ্যাকাডেমির তৈরি হয়৷ ২০১২ সালে অ্যাকাডেমির পথ চলা শুরু৷ মুখ্যমন্ত্রী সোমবার কোচবিহারে যান৷ বিজয়বাবু জানান, মুখ্যমন্ত্রীর এই সিদ্ধান্তের ফলে অ্যাকাডেমি থেকে আরও বেশি বই প্রকাশ কিংবা রাংজবংশী সংস্কৃতিকে তুলে ধরতে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান বা সেমিনারের আয়োজন করা সম্ভব হবে৷ কোচবিহারেই মুখ্যমন্ত্রী রাজবংশী উন্নয়ন পর্ষদ গড়ার কথা ঘোষণা করেছেন৷ মুখ্যমন্ত্রীর সেই ঘোষণাকেও সাধুবাদ জানান সাংসদ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন