আরও ক’দিন শীতের কামড়, এল সতর্কবার্তা

ইংরেজবাজার শহরের প্রাণ কেন্দ্র ফোয়ারা মোড়। এই এলাকায় সন্ধ্যের পর সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ আড্ডা দেন। আর রাত ১২টা পর্যন্ত চলে সেই আড্ডা। তবে শীতের দাপটে ঠেক গুলিতে ভিড় নেই বললেই চলে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:৫৬
Share:

শীতের কামড় থেকে বাঁচতে ভরসা আগুন। জলপাইগুড়িতে। ছবি: সন্দীপ পাল

সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বাড়ল খানিকটা। তাতে কনকনে ভাব কমেনি। তুষারাবৃত হিমালয় পাহাড় ছুঁয়ে আসা হাওয়ায় কনকনে ভাব আপাতত কমার লক্ষণও নেই বলে দাবি আবহাওয়াবিদদের। উত্তরবঙ্গের শীতের তারতম্য হয় উত্তুরের হাওয়ায় ভর করেই। মকর সংক্রান্তির আগের দিন কনকনে ভাব খানিকটা বেড়েছে বলেও দাবি করলেন বাসিন্দারা। শনিবার ঝলমলে রোদ থাকলেও দিনভর কুয়াশার হালকা চাদরও লক্ষ্য করা গিয়েছে। কুয়াশার কারণে এ দিনও দেরিতে চলেছে বাস-ট্রেন। ঘন কুয়াসায় যান চলাচলে সর্তকতা বজায় রাখতে নির্দেশ এসেছে নবান্ন থেকেও।

Advertisement

• কষ্ট পাচ্ছেন ‘কেষ্ট’

Advertisement

যাদবের ‘কেষ্ট’ সাজে বাধ সেধেছে কনকনে ঠান্ডা। শীতে কাবু হয়ে পড়েছেন যাদব বর্মন। কোচবিহারের গুড়িয়াহাটির যাদব বর্মন। কৃষ্ণ সেজে মদনমোহনবাড়ি থেকে নানা জায়গায় ঘুরে রোজগার করাই তাঁর কাজ। কৃষ্ণ সাজলে শরীরে জামা রাখেন না। শরীর রাঙিয়ে নেন নীল রঙে। এই শীতে তা আর হয়ে উঠছে না। তিনি বলেন, “শীতের কাপড় নিয়ে কি আর কৃষ্ণ সাজা যায়!” গত কয়েকদিনের মতো শনিবার দুপুরে ক্ষণিকের জন্য সূর্য়ের দেখা মিললেও বাকিসময় কুয়াশায় ঢাকা ছিল। ইতিউতি আগুন জ্বালিয়ে বসে থাকতে দেখা যায় বাসিন্দাদের। এ দিন কোচবিহারে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৯.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের নোডাল অফিসার শুভেন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আরও কয়েকদিন এমন আবহাওয়া থাকবে।”

• তিনশো কাপ দেড়শোয়

ইংরেজবাজার শহরের প্রাণ কেন্দ্র ফোয়ারা মোড়। এই এলাকায় সন্ধ্যের পর সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ আড্ডা দেন। আর রাত ১২টা পর্যন্ত চলে সেই আড্ডা। তবে শীতের দাপটে ঠেক গুলিতে ভিড় নেই বললেই চলে। রাত আটটা বাঁচতেই কার্যত ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে ফোয়ারা মোড়। যার জেরে মাথায় হাত পড়েছে ওই এলাকার চায়ের দোকানাদার। চা বিক্রেতা সামু সরকার বলেন, “যুবক থেকে শুরু করে মধ্য বয়স্ক ব্যক্তিরাও রাত পর্যন্ত আড্ডা দেন। তবে এখন সন্ধ্যের পর শুধুমাত্র কিছু যুবকই থাকছেন। যার জন্য চা বিক্রি একেবারে কমে গিয়েছে।” সামু একাই দিন-রাতে তিনশো কাপ চা বিক্রি করে। এখন দেড়শ কাপের বেশি চা বিক্রি হচ্ছে না বলে দাবি। শুধু ফোয়ারা মোড় নয়, শহরের অন্য ব্যস্ততম এলাকাও শীতের কারণে সন্ধ্যের পর শুনসান। এ দিনও জেলার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল আট ডিগ্রি। যা স্বাভাবিকের থেকে চার ডিগ্রি কম। শুধু তাপমাত্রার পরদই নামছে না, সেই সঙ্গে থাকছে বেলা পর্যন্ত ঘন কুয়াশাও।

• পুড়ে মৃত্যু

প্রচণ্ড শীতের হাত থেকে বাঁচতে আগুন পোহানোর সময়ে অগ্নিদগ্ধ হয়ে এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে! শুক্রবার রাতে রায়গঞ্জ সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতার নাম গঙ্গা শর্মা (৮৫)। মৃতার ছেলে অজিত শর্মার দাবি, বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রচণ্ড শীতের হাত থেকে বাঁচতে গঙ্গাদেবী বাড়িতে একটি মাটির হাড়ির ভিতরে আগুন জ্বালিয়ে আগুন পোহাচ্ছিলেন। সেইসময় আচমকা তাঁর শাড়িতে আগুন লেগে অগ্নিদগ্ধ হন তিনি। আশঙ্কাজনক অবস্থায় এরপর তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। উল্লেখ্য, এর আগে গত ৬ জানুয়ারি রায়গঞ্জ থানার পানিশালা সুকুরটোলা এলাকার বাসিন্দা বকিয়া খাতুন (৬২) নামে আরেক বৃদ্ধা বাড়িতে প্রচণ্ড শীতের হাত থেকে বাঁচতে আগুন পোহানোর সময়ে শাড়িতে আগুন লেগে অগ্নিদগ্ধ হন। পরদিন চিকিত্সাধীন অবস্থায় রায়গঞ্জ সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়।

শনিবার সকাল থেকে রায়গঞ্জ-সহ গোটা উত্তর দিনাজপুর জেলায় দিনভর উত্তুরে ঠাণ্ডা বাতাস বইতে থাকায় কনকনে ঠাণ্ডা অনুভূত হয়েছে! দুপুরে কিছুক্ষণের জন্য রোদ উঠলেও তাপ ছিল না। সকালে ও সন্ধ্যার পর কখনও ঘন আবার কখনও হাল্কা কুয়াশা ছিল।

• নবান্নের নির্দেশ

উত্তরবঙ্গের সব জেলাতেই কুয়াশা শুরু হচ্ছে বিকেল থেকে। থাকছে সকাল পর্যন্ত। তার মধ্যে কুয়াশার দাপট বেশি জলপাইগুড়ি-কোচবিহার-আলিপুরদুয়ার এবং দার্জিলিঙে। এই জেলাগুলিকে সর্তক করেছে নবান্ন। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতর থেকেও ঘন কুয়াশার পুর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। তার জেরেই জেলা প্রশাসনগুলিকে সর্তক করেছে রাজ্য। বিশেষ করে জাতীয় সড়কে যান চলাচলের ক্ষেত্রে কড়া নজর রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চার জেলার জেলাশাসকের কাছে এই সর্তকবার্তা এসেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন