জেলাগুলিতে দুই চিত্র

কমিশনের কোপের পর কেউ এলেন, কেউ এলেন না

শাসক দলের প্রতি পক্ষপাতের অভিযোগে আগের রাতেই তাঁদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তাই শুক্রবার সারা দিন নিজেকে বাংলো বন্দি রাখলেন ওঁদের কেউ কেউ। কেউ অসময়ে দফতরে এসে চমকে দিলেন সহকর্মীদের। কেউ আবার নির্দেশ পাননি, জানিয়ে অফিস করলেন নিয়মমাফিক।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৯ মার্চ ২০১৬ ০২:৫৪
Share:

শাসক দলের প্রতি পক্ষপাতের অভিযোগে আগের রাতেই তাঁদের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তাই শুক্রবার সারা দিন নিজেকে বাংলো বন্দি রাখলেন ওঁদের কেউ কেউ। কেউ অসময়ে দফতরে এসে চমকে দিলেন সহকর্মীদের। কেউ আবার নির্দেশ পাননি, জানিয়ে অফিস করলেন নিয়মমাফিক। যদিও নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ ঘিরে দিনভরই সরগরম ছিল বিভিন্ন জেলার পুলিস ও প্রশাসনিক মহল। চলছে রাজনৈতিক তরজাও।

Advertisement

২০১৪ সালের অগষ্ট মাসে মালদহের সদর মহকুমা শাসকের পদে যোগ দেন নন্দিনী সরস্বতী। বৃহস্পতিবার রাতে নির্বাচন কমিশন পক্ষপাতের অভিযোগে বদলি করে দেয় তাঁকে। কিন্তু এ দিনও তিনি দফতরে এসেছেন। কাজকর্ম করেছেন স্বাভাবিক নিয়মে। এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে নন্দিনী জানিয়ে দেন কিছুই বলবেন না তিনি। মালদহের অতিরিক্ত জেলা শাসক তথা জেলা নির্বাচনী আধিকারিক দেবতোষ মন্ডল বলেন, ‘‘এখনও আমরা এই সংক্রান্ত কোনও নির্দেশ হাতে পাইনি।’’

বিরোধীদের অভিযোগ, প্রায় দুই বছর ধরে জেলাতে শাসক দলের রীতিমত কাছের লোক ছিলেন নন্দিনী। সিপিএমের জেলা সম্পাদক অম্বর মিত্র বলেন, ‘‘আমাদের কোনও কর্মসূচি থাকলে কখনও তিনি মাইক খুলতে বলেছেন, আবার কখনও শব্দ কমাতে বলেছেন। তবে শাসক দলের ক্ষেত্রে কিন্তু তাঁর এমন ভূমিকা দেখা যায়নি।’’ জেলা কংগ্রেসের সভানেত্রী তথা সাংসদ মৌসম নূর বলেন, ‘‘প্রশাসনিক ক্ষমতায় থেকে দল চালাচ্ছিলেন তাঁরা। মহকুমা শাসকের কাছে আমাদের সব কর্মসূচিই ছিল বেআইনি। আর শাসক দলের সবই ছিল বৈধ।’’

Advertisement

বিজেপির জেলা সম্পাদক মানবেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর অভিযোগ, ‘‘কার্যত শাসক দলের নেতা-নেত্রী হয়ে উঠেছিলেন প্রশাসনিক কর্তারা। কয়েকজন বদলি হলেও এখনও অনেকে প্রশাসনের অন্দরেই দলের নেতার ভূমিকা পালন করছেন। তাদের বিষয়েও আমরা নির্বাচন কমিশনে জানাব।’’ বিরোধীরা প্রশাসনিক কর্তাদের সমালোচনা করলেও পাশে দাঁড়িয়েছে শাসক দল। তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, ‘‘বিরোধীদের অস্তিত্ব সঙ্কটে। তাই প্রশাসনিক কর্তাদেরও মনে করছেন আমাদের দলের লোক।’’

মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় দফতরে আসবেন কি না তা নিয়ে এ দিন জোর জল্পনা ছিল কর্মী মহলে। শুক্রবার দুপুর গড়ানোর পরেও তিনি না আসায় দফতরের অধিকাংশ পুলিশ কর্মী ভেবেছিলেন এ দিন হয়তো আর অফিসে আসছেন না তিনি। সেই সঙ্গে সবাই অপেক্ষা করছিলেন নতুন পুলিশ সুপারের। তবে সন্ধে ছ’টা নাগাদ অফিসে হাজির হন প্রসূনবাবু। ‘অবেলায়’ তাঁকে দেখে কর্মীরা সকলেই হতবাক হয়ে যান।

বৃহস্পতিবার রাতে মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়কেও পক্ষপাতের অভিযোগে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয় নির্বাচন কমিশন। পুলিশ সুপারের বদলির কথা সংবাদ মাধ্যমে জানতে পারেন দফতরের কর্মীরা। তাই নিয়ে হইচই হতেই ওই দিন রাত আটটা নাগাদ অফিস ছেড়ে বেড়িয়ে যান প্রসুনবাবু। কর্মীদের কথায়, অন্য দিনের তুলনায় পুলিশ সুপার প্রসূনবাবুর মেজাজ ছিল অন্য রকম। আর পাঁচটা দিন যেমন কাউকে না জানিয়েই অফিস ছেড়ে চলে যান। ওই দিন কিন্তু তিনি এমনটি করেননি। বেশকিছু পুলিশ কর্মীকে হাত নেড়ে তবেই দফতর ছাড়েন তিনি। তারপর থেকেই কার্যত বাংলোতেই বন্দি ছিলেন প্রসূনবাবু। জানা গিয়েছে, আজ শনিবার মালদহ ছেড়ে যাবেন তিনি। আর এ দিনই যোগ দিতে পারেন জেলার নতুন পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রেজা।

দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর শনিবার সারাদিন অফিসে আসেননি দক্ষিণ দিনাজপুরের এসপি অর্ণব ঘোষ। দিনভর বালুরঘাটে বাংলোতেই কাটিয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন তাঁকে এই জেলা থেকে সরিয়ে দেয়। এরপর রাতেই তিনি অতিরিক্ত জেলা পুলিশ সুপার ডেভিড ইবন লেপচাকে দায়িত্ব হস্তান্তর করে অফিস থেকে বেরিয়ে যান। বিরোধীরা তো বটেই, জেলার এসপি হয়ে শাসক দলের দুই বিধায়কদের হয়ে সরাসরি কাজ করার মতো পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে সরব হয়েছিলেন তৃণমূলেরই একাংশ নেতা-ক র্মী।

শুক্রবার সকালে গঙ্গারামপুরের নন্দনপুরে সত্যেন রায়ের হয়ে বিরোধী বিপ্লব গোষ্ঠীর নেতা নুরুল ইসলামের লোকজনকে ধরতে অ্যাম্বুল্যান্স করে সাদা পোশাকে পুলিশ অভিযান করতে গেলে এলাকার মহিলারা রুখে দাঁড়ায়। তাতে পিঠটান দেয় পুলিশ। তৃণমূলের প্রাক্তণ জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র অনুগামী নুরুলের অভিযোগ, গঙ্গারামপুরে সত্যেন রায় এবং তপনে বাচ্চু হাঁসদা—দুই বিদায়ী বিধায়ককে জেতাতে বিদায়ী এসপি অর্ণব ঘোষ সরাসরি মাঠে নেমেছিল। অর্ণবের জায়গায় নতুন এসপি হয়ে আসবেন রসিদ মুনির খান।

উত্তর দিনাজপুরের ইটাহারের বিডিও পেমা চুকি শেরিংকেও শাসক দলের হয়ে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে বসিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। সরিয়ে দেওয়া হয়েছে গাজল থানার ওসি রাজু খন্দেকারকেও।

উত্তর দিনাজপুরের পুলিশ সুপার অমিতকুমার ভরত রাঠৌর জানান, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে এ দিন রাতে রায়গঞ্জ থানার আইসির দায়িত্ব নেন শান্তনু মিত্র। তিনি এত দিন শিলিগুড়ি কমিশনারেটের অধীনে কর্মরত ছিলেন। বিদায়ী আইসি গৌতম চক্রবর্তীকে সল্টলেকে কম গুরুত্বপূর্ণ পুলিশ কম্পিউটার সেন্টারের ইনস্পেকটরের পদে বদলি করা হয়েছে। ইটাহার থানার ওসির দায়িত্ব নিয়েছেন পলাশ মোহান্ত। বিদায়ী ওসি নিমশেরিং ভুটিয়াকে জেলা পুলিশের দুর্নীতি দমন শাখার সাব ইন্সপেক্টরের পদে বদলি করা হয়েছে। কমিশন তাঁকে নির্বাচন প্রক্রিয়ার বাইরে রাখার নির্দেশ দিয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন