Cooch Behar

আবেদন নিয়ে তুলেছে ছবি, তবু ঘর মেলেনি

রাস্তার একটি গলির বাড়িতে শীতের সকালে এক চিলতে ঘরের বারান্দায় মাটির উনুনে ফুঁ দিচ্ছিলেন ষাটোর্ধ্ব পূর্ণিমা সাহা। মাঝেমধ্যে কালো ধোঁয়ায় মুখ ঢেকে যাচ্ছিল তাঁর। 

Advertisement
শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২১ ০১:৪৫
Share:

উনুন জ্বালাচ্ছেন পূর্ণিমা। নিজস্ব চিত্র।

কোচবিহার শহর থেকে খাগরাবাড়ি মোড় হয়ে সোজা পিচের রাস্তা চলে গিয়েছে আলিপুরদুয়ারের দিকে। ওই রাস্তায় কয়েক কিলোমিটার এগোলেই পৌঁছে যাবেন বাণেশ্বরে। উত্তরবঙ্গের অন্যতম শৈবতীর্থ। এখানে বিরল প্রজাতির কাছিমেরও ডেরা। এই দুইয়ের টানে দূরদূরান্ত থেকে লোক ছুটে আসে। যাতায়াতের পথের দু’দিকে কোথাও আলু খেত, কোথাও সর্ষে ফুলে ভরে রয়েছে মাঠ। এলাকার বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ কৃষিতে যুক্ত। অনেকের ছোটখাটো ব্যবসাও রয়েছে। বাণেশ্বর মন্দির লাগোয়া বাজারের অন্য দিকে রেললাইন। লাইনের গা ঘেঁষে চলে গিয়েছে কাঁচা রাস্তাটি। রাস্তার একটি গলির বাড়িতে শীতের সকালে এক চিলতে ঘরের বারান্দায় মাটির উনুনে ফুঁ দিচ্ছিলেন ষাটোর্ধ্ব পূর্ণিমা সাহা। মাঝেমধ্যে কালো ধোঁয়ায় মুখ ঢেকে যাচ্ছিল তাঁর।

Advertisement

প্রশ্ন: গ্যাসের সংযোগ নেই?

পূর্ণিমা: মাটির উনুনেই ডালপালা, পাতা কুড়িয়ে রান্না করি। বিপিএলে নাম থাকায় উজ্জ্বলা প্রকল্পে গ্যাস নেওয়ার সুযোগও এসেছিল। নেওয়া সম্ভব হয়নি।

Advertisement

প্রশ্ন: কেন সম্ভব হল না?

পূর্ণিমা: আমার সম্বল মাসে প্রতিবন্ধী ভাতার এক হাজার টাকা। গ্যাসের কানেকশন ফ্রি-তে ঠিকই, কিন্তু সিলিন্ডারের জন্য ৭০০-৭৫০ টাকা দিলে সারা মাস চলবে কী করে? তাই আর গ্যাস নিইনি।

প্রশ্ন: সরকারি ঘরের জন্য আবেদন করেননি?

পূর্ণিমা: অঞ্চলে (গ্রাম পঞ্চায়েতে) ঘরের আবেদন করেছিলাম। কাগজ দিই, ফটোও তুলে নিয়ে যায়। কিন্তু আজও পাইনি। ঘরটা খুবই দরকার।

প্রশ্ন: কেন দিচ্ছে না?

পূর্ণিমা: আমি মিটিংমিছিলে যেতে পারি না। চলাফেরার সমস্যা আছে। তাই মনে হয় ঘরও পাই না। তা ছাড়া আমি একা। একটাই ভোট। তাই হয়তো লাভ নেই বলে আমাকে দেয় না।

প্রশ্ন: শৌচাগার পাননি?

পূর্ণিমা: পাইনি। শুনেছি শৌচাগার পেতে কিছু টাকা জমা দিতে হয়। তা-ও নেই।

প্রশ্ন: প্রতিবন্ধী ভাতা নিয়মিত পাচ্ছেন?

পূর্ণিমা: এত দিন তো পাচ্ছিলাম। গত দু’তিন মাস ধরে সমস্যা হচ্ছে।

প্রশ্ন: একশো দিনের কাজ পাচ্ছেন?

পূর্ণিমা: এলাকায় কাজ হলে পাই। বেশি দিন যদিও পাই না।
পূর্ণিমার পাশের পাড়াতেই থাকেন অমিত দাস। ঘর না পাওয়ার কথা তাঁর মুখেও।

প্রশ্ন: ঘরের আবেদন করেননি?

অমিত: অঞ্চলের লোককে বলেছিলাম। সেটাও অনেক দিন হয়ে গেল।

প্রশ্ন: বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ আছে?

অমিত: না, মোম-কুপির আলোই ভরসা।

প্রশ্ন: একশো দিনের কাজ পান?

অমিত: হ্যাঁ সেটা পাই। তবে পুরো একশো দিন পাইনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন