প্রতীকী ছবি।
বিধানসভা ভোটের পর দার্জিলিং জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে টানাপড়েন শুরু হয়ে গেল। দলীয় সূত্রের খবর, সমতলে দলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রাক্তন মন্ত্রী তথা পুরসভার প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারম্যান গৌতম দেবের সঙ্গে দলের জেলা সভাপতি রঞ্জন সরকারের বিরোধ দেখা দিয়েছে। দলের মধ্যে দু’জনের অনুগামীদের দু’টি গোষ্ঠীও তৈরি হয়েছে। প্রকাশ্যে নাম না করে এ বার পারস্পরিক আক্রমণও শুরু হল।
রবিবার দুপুরে বাগডোগরা দলীয় দফতরের নকশালবাড়ি, খড়িবাড়ি, ফাঁসিদেওয়া, মাটিগাড়া ব্লকের নেতানেত্রীদের নিয়ে বৈঠক ডেকেছিলেন জেলা সভাপতি রঞ্জন। গৌতম দেবকে অবশ্য বৈঠকে ডাকা হয়নি। প্রাক্তন মন্ত্রীর নাম না করে রঞ্জন জানিয়ে দেন, জেলা কমিটি বা রাজ্য কমিটির অনুমোদন ছাড়া দলে যোগদান করানো হবে না। বিভিন্ন ব্লকে জেলা কমিটিকে না জানিয়ে বৈঠক করা চলবে না। এর পরেই আক্রমণের সুরে তিনি জানান, ভুয়ো নেতা নিয়ে দল চলবে না। অনেকে রোজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলেন বলে দাবি করেন। ওই সব কথা শুনিয়ে লোককে প্রভাবিত করার দিন শেষ। দলের নিয়মে সংগঠন করতে হবে।
ভোটে হারের পর গৌতমকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উত্তরের বিভিন্ন জেলার সংগঠন দেখার নির্দেশ দেন। সিকিমেও যোগাযোগ করতে বলেন। তার পরে প্রাক্তন মন্ত্রী শিলিগুড়ি মহকুমার বিভিন্ন প্রান্তে বৈঠক করেন। দলবদলও শুরু হয়। শিলিগুড়ি শহরে একাধিক বাম ও কংগ্রেস কাউন্সিলর তৃণমূলে যোগ দেন। যা নিয়ে দুই নেতার ঠান্ডা লড়াই শুরু হয়। পুরসভার মাথায় গৌতম থাকায় তিনিই পুরভোটে নেতৃত্বে দেবেন ধরে নিয়ে প্রস্তুতিতে নামেন। রঞ্জনকে দায়িত্ব থেকে সরানো হবে বলে প্রচার শুরু হয়। একদল প্রচার করেন, ভোটের আগে বিজেপির সঙ্গে যাঁরা যোগাযোগ করেছিলেন তাঁদের সরানো হবে।
প্রাক্তন মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ এক নেতা মহকুমার বিভিন্ন ব্লকে ঘোরা শুরু করতেই গোলমাল আরও বাড়ে। রঞ্জন-অনুগামীরা জানান, প্রাক্তন মন্ত্রী আবার জেলা সভাপতি হবেন ভেবে কাউকে কিছু না জানিয়ে নিজের মতো কাজ শুরু করেছেন। তাঁর ছায়ায় থেকে এক নেতা যা ইচ্ছা তাই করে যাচ্ছেন। এ মাসের শুরুতে গৌতম, রঞ্জন কলকাতায় গিয়ে রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা করেন। শিলিগুড়ি ফিরেই রঞ্জন রবিবার বাগডোগরায় বৈঠক ডাকেন।
সেখানে জেলা চেয়ারম্যান প্রতুল চক্রবর্তী, যুব সভাপতি কুন্তল রায়, সাধারণ সম্পাদক মদন ভট্টাচার্য, মিলন দত্ত, মিলি সিংহ, প্রাক্তন কাউন্সিলর রঞ্জন শীলশর্মা, নিখিল সাহানি, মুখপাত্র বেদব্রত দত্তেরা ছিলেন। শনিবারও দলীয় দফতরে সভাপতি ও জেলার নেতারা একযোগে বৈঠক করেন। এতে প্রাক্তন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে বাকিদের একজোট করার প্রক্রিয়া চলছে বলেও দলের অনেকে মনে করছেন। গৌতম দেব পুরো বিষয় নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। আর জেলা সভাপতি রঞ্জন সরকার বলেছেন, ‘‘বৈঠকে সাংগঠনিক আলোচনা হয়েছে। নানা কর্মসূচি আছে। বাইরে এ সব বলার বিষয় নয়।’’
এ দিনের বৈঠকে গ্রামের নেতারা শহরে নেতাদের বিরুদ্ধেও বৈঠকে সরব হন। নিজেদের ইচ্ছামতো কমিটি গঠন, অঞ্চল সভাপতি নিয়োগ, দলবদল, অনুষ্ঠান করা নিয়ে অনেকে সরব হয়েছেন। কেউ কেউ জানান, পদ, দায়িত্ব সব শহরের নেতারা নিয়ে বসে থাকেন। আর মিছিল, মিটিংয়ের সময় গ্রাম থেকে লোক জোগাড় করতে বলা হয়।