গত বিধানসভা ভোটে বামফ্রন্টকে সঙ্গী করে মালদহে গড় সামাল দিতে পেরেছিল কংগ্রেস। কিন্তু পরে রাজ্যের অন্য প্রান্তের মতো মালদহতেও কংগ্রেসের সেই দূর্গে ফাটল ধরে। বিধায়করা কেউ না গেলেও দলের দখলে থাকা জেলা পরিষদ হাতছাড়া হয়েছে। দখলে থাকা সাতটি পঞ্চায়েত সমিতির মধ্যে পাঁচটিই এখন হাতছাড়া। এ ছাড়া অর্ধেকের বেশি গ্রাম পঞ্চায়েত থেকেও তাঁদের ক্ষমতা চলে গিয়েছে। এই রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দাঁড়িয়ে আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটকে সামনে রেখে মালদহের ব্লকে ব্লকে ঘর গোছানোর কাজ শুরু করল কংগ্রেস।
শুক্রবার জেলার বামনগোলা ব্লকে সাংগঠনিক সভা করে সেই প্রক্রিয়া শুরু করেছে তারা। এ দিন হবিবপুর ব্লকের দু’টি পঞ্চায়েতেও তাঁরা সাংগঠনিক সভা করে। কংগ্রেসের এই কর্মকাণ্ডকে অবশ্য পাত্তা দিতে নারাজ শাসক দল।
তৃণমূলের জোর হাওয়ার মধ্যেও গত বিধানসভা ভোটে কংগ্রেস মালদহে তার দূর্গ অটূট রেখেছিল। যদিও এক্ষেত্রে বামফ্রন্টের সঙ্গে কংগ্রেসের আসন সমঝোতা একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে এই জেলাতে কাজ করেছিল। ফলে ১২টি আসনের একটিও শাসকদল জিততে পারেনি। কংগ্রেস ৮টি আসন পেয়েছিল। কিন্তু তারপর দিন যত এগিয়েছে এই জেলায় কংগ্রেস ততই ভেঙেছে, বলীয়ান হয়েছে তৃণমূল। বিধায়করা কেউ নাম না লেখালেও দলীয় অন্তত ৩০ জন প্রধান ও পাঁচ জন পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলে চলে যান। এমনকী জেলা পরিষদের সভাধিপতি থেকে শুরু করে একাধিক কর্মাধ্যক্ষ তৃণমূলে চলে যাওয়ায় বোর্ডও হাতছাড়া হয়। ফলে দলের গড় বলে পরিচিত মালদহে এখন কার্যত বেকায়দায় কংগ্রেস।
এ দিকে, পঞ্চায়েত ভোট আসন্ন। দলীয় সূত্রে খবর, বামফ্রন্টের সঙ্গে এ বারের পঞ্চায়েত ভোটে সমঝোতা হবে কি না, সেটা রাজ্য ও সর্বভারতীয় স্তরে আলোচ্য বিষয়। কিন্তু জেলায় দলীয় ঘর গোছাতে মাঠে নেমে পড়েছে তারা। এ দিন দুপুরে বামনগোলা ব্লকের দলীয় কার্যালয়ে ওই ব্লকের নেতৃত্ব ও ৬টি অঞ্চল নেতৃত্বদের নিয়ে সাংগঠনিক বৈঠক করেন জেলা সভানেত্রী তথা সাংসদ মৌসম নূর।
বিকেলে হবিবপুর ব্লকের জাজোইল ও ধূমপুর পঞ্চায়েতের অঞ্চল নেতৃত্বদের নিয়েও একই বৈঠক করেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক হেমন্ত শর্মা সহ অন্য নেতৃত্ব। বৈঠকে জানানো হয়েছে যে আগামী ৬ নভেম্বর পঞ্চায়েত ভোটের আসন সংরক্ষণের খসড়া তালিকা প্রকাশ হবে এবং তার আগে বুথে বুথে কমিটি গড়ে পঞ্চায়েতের সম্ভাব্য প্রার্থী বাছাই করার কাজ শুরু করতে। খসড়া বের হলেই সেই অনুযায়ী সম্ভাব্য সেই প্রার্থী তালিকা জেলায় পাঠিয়ে দিতে হবে। মৌসম নূর বলেন, ‘‘সামনেই পঞ্চায়েত ভোট এবং এখন থেকেই আমরা আমাদের ঘর গোছানোর কাজ শুরু করেছি।’’
তিনি জানান, পঞ্চায়েতের বুথে বুথে প্রার্থী বাছাইয়ের কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে। বাড়াতে বলা হয়েছে জনসংযোগও।
এ দিকে তৃণমূলের জেলা সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন অবশ্য বলেন, ‘‘উন্নয়নের কাণ্ডারী মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে মানুষ এখন তৃণমূলমুখী। ফলে কংগ্রেস সাংগঠনিক সভা বা অন্য কোনও কর্মসূচি নিয়ে মানুষের সেই স্রোতকে এই জেলাতে আর আটকে রাখতে পারবে না।’’ তবে কংগ্রেসের একটি বড় ভরসা কিন্তু মালদহে তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্ব। দলের নানা নেতানেত্রীদের মতবিরোধী এই জেলাতে তৃণমূল কর্মীরা কিছুটা অনিশ্চয়তায় ভোগেন। সেই সুযোগ নিতে চায় কংগ্রেসও।