হিলি সীমান্তে সরকারি গাড়িতে জিরে পাচারের অভিযোগের ঘটনায় আরএসপি-র পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামীর পাশে দাঁড়াল দল। বুধবার আরএসপির সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য বিমল সরকার বলেন, ‘‘নীতিগত ভাবে পাচারের কাজ মানা যায় না ঠিক। কিন্তু চোরাকারবারই হিলির অর্থনীতি। ফলে যে ওই কাজ করছেন, সেটা বড় কথা নয়। সীমান্ত ওপেন (খুলে) করে দিলে কাউকে স্মাগলিং করতে হবে না।’’
আরএসপি জেলা নেতার ওই বক্তব্যে জেলার রাজনৈতিক মহলে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিপ্লব মিত্র বলেন, ‘‘কোনও রাজনৈতিক দলের নেতা ওই কথা বলতে পারেন না। সরকারি গাড়িতে অবৈধভাবে স্মাগলিংয়ের মাল নিয়ে যাওয়া নিঃসন্দেহে গর্হিত অপরাধমূলক কাজ। ওই ঘটনার পিছনে কারা জড়িত, প্রশাসনকে বের করে শক্ত হাতে মোকাবিলা করতে হবে।’’
সিপিএমের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সম্পাদক নারায়ণ বিশ্বাস বলেন, ‘‘বিমলদা কী বলেছেন জানি না। তবে পাচার করাকে সমর্থন করা যায় না। দেশের প্রচলিত আইন মেনে হিলি ল্যান্ডপোর্টের মাধ্যমে ব্যবসা করতে কোনও বাধা নেই। তা ছাড়া জনপ্রতিনিধি হয়ে কারও ওই সব কাজে যুক্ত হওয়া বাঞ্চনীয় নয়।’’
এ দিন ধৃত গাড়ির চালককে বালুরঘাট আদালতে হাজির করে হিলি থানার পুলিশ। পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতের আবেদন করা হলে বিচারক ৩ দিনের পুলিশি হেফাজতের আদেশ দেন। দক্ষিণ দিনাজপুরের পুলিশ সুপার শীশরাম ঝাঝারিয়া বলেন, ওই ঘটনার বিস্তারিত তথ্য জানতে অভিযুক্ত চালককে হেফাজতে নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। প্রয়োজনে গাড়ির মালিককেও জেরা করা হবে।
গত সোমবার রাতে বালুরঘাট থেকে সরকারি বোর্ড লাগানো একটি ছোট গাড়ির বনেটের মধ্যে জিরের প্যাকেট লুকিয়ে হিলি যাওয়ার পথে চালক একজনকে ধাক্কা দেয়। আর একজন দ্রুত গাড়ি চালানোর প্রতিবাদ করে দরজা খুলে নামতে গেলে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তারপরই গাড়ির মালিকের নাম জানাজানি হয়। গাড়িটি হিলি গ্রামীণ হাসপাতালে ভাড়া দিয়েছিলেন স্থানীয় আরএসপি প্রধানের স্বামী প্রবীর কুন্ডু। তাঁর বৌদির নামে গাড়িটির কাগজ থাকলেও ওই আরএসপি নেতা প্রবীরবাবুই গাড়িটি ভাড়া খাটানোর কাজ করেন বলে জানা গিয়েছে। এর আগেও ওই গাড়িতে করে পাচার সামগ্রী সীমান্তে পৌঁছে দেওয়া হত বলে তৃণমূলের অভিযোগ।
তবে হিলির ওই ঘটনায় দলের তরফে কী অবস্থান নেওয়া হচ্ছে, এদিন জানতে চাইলে আরএসপির জেলা সম্পাদক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী বিশ্বনাথ চৌধুরী বলেন, ‘‘আমি অসুস্থ। ওই বিষয়ে যা বলার হিলির নেতা তথা পঞ্চায়েত সদস্য বিদ্যুৎ হালদার মঙ্গলবার বলে দিয়েছেন।’’ বিদ্যুতবাবু অবশ্য মহিলা প্রধানের স্বামী হিসাবে প্রবীরবাবু সঙ্গে দলের যা সম্পর্ক তা উল্লেখ করে অভিযোগের দায় এড়িয়েছেন। তবে দলের জেলা নেতা বিমলবাবু সরাসরি পাচারের ঘটনায় প্রবীরবাবুদের দোষ দেখছেন না। বিমলবাবুর জবাব, ‘‘সকলেই জানেন হিলিতে কী হয়। এটা একটা সামাজিক রোগ। তাই যে করছেন, বড় কথা নয়। প্রশাসনকে বিকল্প অর্থনৈতিক ব্যবস্থা করতে হবে। সীমান্ত খুলে দিলে হিলিতে চোরাকারবার থাকবে না।’’
ঘটনার পর থেকে তাঁদের গাড়ির চালকের দুর্ঘটনা হয়েছে বলে অফিসে জানিয়ে প্রধান রূপাদেবী হিলি গ্রাম পঞ্চায়েতে যাচ্ছেন না বলে অভিযোগ। আরএসপি নেতা প্রবীরবাবু অভিযোগ অস্বীকার করে ঘটনার দায় চাপিয়েছেন গাড়ির চালকের উপর। তিনি বলেন, ‘‘গাড়িটি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ভাড়া দেওয়া হয়েছিল। তার পরে চালক ওই গাড়িতে কী তুলেছে, আমাদের জানার কথা নয়।’’ অবশ্য বুধবার থেকে স্বাস্থ্য দফতর সমস্ত চুক্তি বাতিল করে গাড়িটি ছেড়ে দিয়েছে। এদিন সিএমওএইচ সুকুমার দে বলেন, ‘‘প্রবীরবাবুদের সঙ্গে ভাড়া বাবদ নেওয়া ওই গাড়িটির চুক্তি বাতিল করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।’’