অনন্ত বর্মা।—নিজস্ব চিত্র।
পুরপ্রধান নির্বাচন ঘিরে বিতর্কের রেশ তুফানগঞ্জে। সোমবার সংখ্যাগরিষ্ঠ কাউন্সিলরদের সমর্থনে তুফানগঞ্জ পুরসভার চেয়ারম্যান হলেন অনন্ত বর্মা।
তবে পুরসভারই এক কাউন্সিলরের দাবি, রাজ্য নেতৃত্বের নির্দেশ অমান্য করে কাউন্সিলরেরা ভোট দিয়েছেন। ৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর রিম্পাদেবী দাবি করেন, “রাজ্য নেতৃত্ব আমার নাম চেয়ারম্যান হিসেবে বন্ধ খামে পাঠিয়েছিলেন। ওই খাম না খুলেই পরিকল্পনা মাফিক অনন্ত বর্মার নাম প্রস্তাব ও সমর্থন হয়ে যাওয়ার পরে এক কাউন্সিলর অম্লান বর্মা আমার নাম প্রস্তাব করেন। জেলা সভাপতির ঘনিষ্ঠকে ওই পদে বসানোর জন্য পরিকল্পনা করে আগেভাগে সব ঠিক করে রাখা হয়েছিল।’’
বস্তুত, অনন্তবাবু দলের জেলা সভাপতির ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। দেড় দশক থেকে বামফ্রন্টের দখলে থাকা এই পুরসভায় প্রথম তৃণমূলের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেন তিনি। সোমবার এই নির্বাচন হয়। ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে এ দিনই দায়িত্ব নিয়েছেন নন্দা দে। তবে এ দিন বিধায়ক অর্ঘ্য রায়প্রধান ও শহর সভাপতি হিরণ্ময় চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত তথা রাজ্য নেতৃত্বের মনোনীত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী রিম্পা ব্যাপারীর (সেন) অনুগামীদের সঙ্গে অনন্তবাবুর অনুগামীদের মধ্যে ব্যাপক গোলমাল হয়। তবে বড় গোলমালের আশঙ্কায় আগে থেকে পুরসভার সামনে পুলিশ মোতায়েন ছিল।
রিম্পাদেবীর অভিযোগ, ‘‘দলীয় অফিসের সামনে আমাকে ও পরিবারের সদস্যদের নিগ্রহ করা হয়। নিরাপত্তাহীনতার ভুগছি। পুলিশকেও নিরাপত্তার ব্যাপারে জানিয়েছি।’’ নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান অনন্তবাবু দাবি করেন, ‘‘অভিযোগ ভিত্তিহীন। মারধরের কোনও ঘটনাই ঘটেনি। কাউন্সিলররা চেয়েছেন বলে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। অপপ্রচার করে লাভ হবে না।’’ কোচবিহারের পুলিশ সুপার রাজেশ যাদব বলেন, “লিখিত অভিযোগ হয়ে থাকলে দেখা হবে।”
প্রশাসন সূত্রের খবর, তুফানগঞ্জ পুরসভায় ১২টি আসন। তার মধ্যে তৃণমূল ৯টি ও সিপিএম ৩টিতে জয়ী হয়েছে। পুরসভার হলঘরে নবনির্বাচিত সদস্যদের শপথ গ্রহণের পরে সিপিএম কাউন্সিলররা বেরিয়ে যান। তারপর চেয়ারম্যান নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হয়। ১২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ইন্দ্রজিৎ ধর প্রথমে চেয়ারম্যান হিসেবে অনন্তবাবুর নাম প্রস্তাব করেন। বেশিরভাগ কাউন্সিলর তাতে সমর্থন জানান। পরে বৈঠকে দলনেতা হিসেবে উপস্থিত কাউন্সিলর অম্লানবাবু একটি খাম খুলে রিম্পাদেবীর নাম প্রস্তাব করলেও কেউ সমর্থন করেননি। তুফানগঞ্জের মহকুমাশাসক পালদেন শেরপা বলেন, “চেয়ারম্যান পদে দু’টি নাম প্রস্তাব হয়। তবে দ্বিতীয় নামের কোনও সমর্থক ছিলেন না। নিয়ম অনুযায়ী ভোটাভুটির দরকার হয়নি। প্রস্তাবের সমর্থক থাকায় অনন্ত বর্মা চেয়ারম্যান হন।’’
তৃণমূল সূত্রে খবর, পুরপ্রধান পদ ঘিরে কোন্দল এড়াতেই মুখবন্ধ খামে প্রস্তাবিত পুরপ্রধানের নাম জেলা থেকে রাজ্য নেতৃত্বের কাছে পাঠাতে বলা হয়। তবে রাজ্য নেতৃত্বের অনুমোদন করা নাম জেলা নেতৃত্বের পছন্দ না হওয়ার সম্ভাবনাও ছিল।
এ দিন চেয়ারম্যান নির্বাচন ঘিরে সকাল থেকেই তেতে ছিল তুফানগঞ্জ। দলের মেইন রোড অফিস, পুরসভার সামনেও ছিল যুযুধান শিবিরের জমায়েত। শপথ শুরুর আগে দলীয় দফতরের সামনে পরিবারের সদস্য ও অনুগামীদের সঙ্গে যাওয়ায় বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর কয়েকজনের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন রিম্পাদেবী ও তাঁর অনুগামীরা। মারধরের অভিযোগ ওঠে। তৃণমূলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ ও বিধায়ক অর্ঘ্য রায়প্রধান এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তৃণমূলের সভাপতি হিরণ্ময়বাবুও ‘তুফানগঞ্জের বাইরে আছি’ বলে এড়িয়ে যান। তবে দলের কোচবিহার জেলা সহসভাপতি আব্দুল জলিল আহমেদ বলেন, ‘‘রাজ্য নেতৃত্বের পাঠানো নামের পরিবর্তে অন্য কাউন্সিলরকে চেয়ারম্যান নির্বাচন হয়েছে কি না তা খোঁজ নিয়ে রাজ্য নেতৃত্বকে জানাব।”
অন্য দিকে, ২১ মে মাথাভাঙা ও ২২ মে কোচবিহার পুরসভায় বোর্ড গঠন ঘিরে রাজনৈতিক মহলের উত্তেজনার পারদ চড়ছে। এই পরিস্থিতিতে মাথাভাঙায় এককভাবে ও কোচবিহারে নির্দলদের সমর্থনে বোর্ড গড়তে চলেছে তৃণমূল। কোন্দল এড়াতে শেষ মূহূর্তে রাজ্য নেতৃত্বের পাঠানো বন্ধ খামে থাকা নাম ওই দুই পুরসভাতে কাউন্সিলররা মেনে নেবেন কি না সে প্রশ্ন উঠছে তৃণমূলের অন্দরে।
২১ মে বামেদের দখলে যাওয়া দিনহাটা পুরসভারও বোর্ড গঠন। চেয়ারম্যান হিসেবে ফব দিনহাটা পুরসভায় উদয়ন গুহের নাম চূড়ান্ত করে ফেলেছে। ফব সূত্রে খবর, শনিবার দিনহাটায় দলের বৈঠকে উদয়নবাবুর নাম চূড়ান্ত হয়। উদয়নবাবু অবশ্য বলেন, “দল যদি মনে করে দায়িত্ব দেবে। তা হলে সেটা পালন করব।’’