মার্জিনা খাতুন। নিজস্ব চিত্র।
দিনের বেশিরভাগ সময় শহরের রাস্তাঘাট প্রায় জনশূন্য। বাজার, দোকান খোলা থাকছে মোটে ২-৩ ঘণ্টা। তাই আবর্জনাও কম বার হচ্ছে। সকাল থেকে ঘুরেও প্রায় খালি বস্তা নিয়ে যখন শহরের গোষ্ঠ পাল মোড়ের কাছে পৌঁছলেন, তখন শরীর ক্লান্ত। জানালেন, এ বার বোধহয় না খেয়ে থাকতে হবে? তিনি কুরানি মার্জিনা খাতুন। ফেলে দেওয়া মোটা কাগজ, প্ল্যাস্টিকের বোতল থেকে অন্যান্য আবর্জনা কুরোন। তা দিয়েই সংসার চলে তাঁর। শিলিগুড়ি শহরের টিকিয়াপাড়ার বাসিন্দা মার্জিনা বলেন, ‘‘কয়েক দিন ঘুরেও এক বস্তা আবর্জনা হল না। ছেলেমেয়েদের নিয়ে জানি না কি হবে!’’
মার্জিনা জানান, দুই ছেলে, এক মেয়ে এবং স্বামীকে নিয়ে তাঁর সংসার। স্বামী রিকশা চালাতেন। বর্তমানে ভাড়া না মেলায় বাড়িতে বসে আছেন। মেয়ে দ্বাদশ, ছেলেদের এক জন দশম এবং অন্য জন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। কষ্ট করে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করাচ্ছেন। তিনি স্বপ্ন দেখেন, সন্তানদের শিক্ষিত করলে তাঁকে হয়তো আর আবর্জনা কুরোতে হবে না। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে মায়ের কষ্ট দেখে ছেলেরাও পাশে দাঁড়াচ্ছে। আর তাদের পড়াশোনা? মার্জিনা বলেন, ‘‘ইন্টারনেট নিয়ে অনলাইন ক্লাস করাব, সেই টাকা কোথায়? যতটা পড়েছে পরীক্ষা হলে সে ভাবেই দেবে।’’
শুধু মার্জিনা নন, শহরের এমন আরও অনেক কুরানির খাবার জোটানো মুশকিল হয়ে পড়েছে। স্বাভাবিক সময়ে এক চক্কর ঘুরলেই এক বস্তা আবর্জনা পেতেন। ২-৩ বার ঘুরলে যা মিলত, তা থেকে ১৫০-২০০ টাকা রোজগার করতেন তাঁরা। বর্তমানে সারাদিন ঘুরেও বস্তা ভরছে না। একসঙ্গে কয়েক বস্তা আবর্জনা দিতে না পারলে বিক্রিও হয় না। তাই কড়াকড়ির মধ্যে পথে বসতে চলেছেন কুরানিরা। এই অবস্থায় বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের দেওয়া নিখরচার খাবার খেয়ে অনেকের দিন কাটছে।
প্রায় একই অবস্থা ধর্মীয় স্থানে থাকা ভিখারিদেরও। এত দিন ভক্তদের প্রসাদ, দান থেকেই ক্ষুণ্ণিবৃত্তি চলত। আগের মতো মন্দিরে পুজো দিতে ভিড় নেই। ফলে সেই ভিখারিদের অনেকেই খাবারের সন্ধানে শহরের রাস্তায় ঘুরছেন।
শিলিগুড়ি পুর প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, খাবারের অভাব যাতে কারও না হয়, তা দেখা হচ্ছে।