coronavirus

তৈরি টিম উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল

টিম মেডিক্যালের হাতে করোনা যুদ্ধে সেনানায়ক কারা, অস্ত্রশস্ত্রই কী রয়েছে?

Advertisement

সৌমিত্র কুণ্ডু

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২০ ০৩:৪১
Share:

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল।

কলকাতার আইডি হাসপাতালের মতোই করোনার বিরুদ্ধে লড়াইতে ময়দানে টিম উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল। করোনা রুখতে, আক্রান্ত সন্দেহভাজনদের চিকিৎসা পরিষেবা দিতে টিম মেডিক্যালই মূল ভরসা উত্তরবঙ্গের। অন্যান্য জেলা হাসপাতালে কিছু আইসোলেশন বিভাগ থাকলেও সেখান থেকে কোনও রোগী রেফারে ভরসা সেই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালই।

Advertisement

নামমাত্র পরিকাঠামো নিয়ে এই লড়াইয়ে মূলত সামিল উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের মেডিসিন ও মাইক্রোবায়োলজি বিভাগ। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে আইসোলেশন ওয়ার্ডে ১৫টি শয্যা রয়েছে। নানা উপর্সগ নিয়ে এ পর্যন্ত মেডিক্যালের আইসোলেশনে ১৮ জনের মতো ভর্তি হয়েছেন। তাঁদের সোয়াবের নমুনা নাইসেড থেকে পরীক্ষা করিয়ে কিছু না মেলায় অধিকাংশকে ছুটি দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে ৮ জন ভর্তি রয়েছেন। তাঁদেরও চিকিৎসা চলছে। বৃহস্পতিবার থেকে মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধীনে তৈরি ভাইরাল রিসার্চ অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ল্যাবরেটরিতে উত্তরবঙ্গে একমাত্র করোনা সংক্রমণ নির্ণয়ের পরীক্ষা ব্যবস্থা শুরু হওয়ার কথা ছিল। প্রযুক্তিগত কারণে তা সম্ভব হয়নি। তবে শীঘ্রই তা চালু হবে। এবং নমুনা গাড়ি করে নিয়ে যাওয়া হবে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি করোনা সন্দেহভাজন রোগীদের তো বটেই, উত্তরবঙ্গের অন্যান্য জেলা হাসপাতালে ভর্তি সন্দেহভাজনদের নমুনাও এবার নাইসেডের পরিবর্তে এখানেই পরীক্ষা করা হবে।

টিম মেডিক্যালের হাতে করোনা যুদ্ধে সেনানায়ক কারা, অস্ত্রশস্ত্রই কী রয়েছে? হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, ভিআরডিএল ব্যবস্থা ছাড়াও চিকিৎসা পরিষেবা দিতে তৈরি করা হয়েছে ৯ জনের কুইক রেসপন্স টিম। মেডিসিন বিভাগের প্রধান দীপাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়, মাইক্রোবায়লজি বিভাগের প্রধান অরুণাভ সরকার, সঞ্জয় মল্লিকরা রয়েছেন। হাসপাতাল সুপার কৌশিক সমাজদার, অ্যাসিস্ট্যান্ট সুপার সুদীপ্ত মণ্ডল, ডেপুটি নার্সিং সুপার, আরও তিন চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত ওই দলটি সামগ্রিক ভাবে করোনা সংক্রমণের চিকিৎসায় কোথায় কী দরকার, কী পরিকাঠামো প্রয়োজন, কোথায় কী লাগবে, সমস্তটাই নজরদারি করছেন। চিকিৎসা পরিষেবা উন্নত করতে ১৫ জনের একটি মেডিক্যাল টিমও তৈরি করা হয়েছে।

Advertisement

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের সুপার জানান, আইসোলেশনে ভর্তি সন্দেহভাজন রোগীদের কার জন্য কী চিকিৎসা ব্যবস্থা, তা ওই টিম দেখবে। বৃহস্পতিবারের মধ্যে প্রস্তুত করে তোলা হয়েছে করোনা আক্রান্তদের জটিল পরিস্থিতি হলে যে ক্রিটিক্যাল কেয়ারে নেওয়া হবে, সেই ‘রেসটিরেটরি ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট’। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে জরুরি বিভাগের ভবনের দোতলায় প্রস্তাবিত ট্রমা সেন্টারের ওয়ার্ডটিকেই ওই কাজে লাগানো হচ্ছে। সেখানে ১০টি করে ছেলে এবং মেয়েদের শয্যা রয়েছে। আপাতত ১০টি শয্যা ব্যবহার করা হবে। চারটি ভেন্টিলেটর ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য দফতর থেকে তাদের দেওয়া হয়েছে। ট্রমা কেয়ারের জন্য আরও কিছু ভেন্টিলেটর সেখানে রয়েছে। আপৎকালীন পরিস্থিতি হলে তা দরকারে লাগানো যেতে পারে।

এছাড়াও পুরুষ এবং মহিলাদের অর্থোপেডিকের অন্তর্বিভাগ অন্যত্র সরিয়ে সেখানে ১০০টির মতো শয্যার বন্দোবস্ত করা হয়েছে করোনা আক্রান্ত বা সন্দেহভাজনদের আলাদা করে রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে। ইতিমধ্যেই জরুরি বিভাগের কাছে কোভিড-১৯ স্ক্রিনিং সেন্টার চালু হয়েছে। জুনিয়র চিকিৎসকরাও সেখানে পরিষেবা দিচ্ছেন। করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, সাফাই কর্মীদের জন্য এন-৯৫ মাস্ক এবং পার্সনাল প্রোটেকটেড ইকুইপমেন্ট পোশাক জরুরি। তা পর্যাপ্ত না থাকায় সমস্যা অবশ্য কিছুটা বেড়েছে। তার মধ্যেই নিজেদের জীবনের কথা ভুলে, পরিবার ভুলে তাঁরা পরিষেবা দিচ্ছেন। হাসপাতালের সুপার বলেন, ‘‘চিকিৎসকরা তো আছেনই। নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, সাফাই কর্মী, যাঁরা খাবার দেন, সকলেই করোনার বিরুদ্ধে এই লড়াইয়ে সামিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন