Assam

ওরা কেমন আছে, কে জানে!

শিয়ালদহে একজন পুলিশ অফিসার মোবাইলে হিসেব করে বলেছিলেন, বাড়ি পৌঁছতে আমাকে প্রায় চোদ্দোশো কিলোমিটার হাঁটতে হবে।

Advertisement

বিষ্ণু শর্মা

শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০২০ ০৬:৫৫
Share:

নিজস্ব চিত্র।

দু’সপ্তাহ ধরে হেঁটেই যাচ্ছি। হাঁটতে হাঁটতে রাত হয়েছে। অচেনা জায়গায় রাস্তায় শুতে ভয় লাগে। আমার মতো অনেককে দল বেঁধে রাস্তার পাশে বসে থাকতে দেখেছি, সেখানে গিয়েই বসেছি। যেখানে যা পেয়েছি খেয়েছি। রাস্তায় মোবাইল হারিয়ে গিয়েছে। বাড়ির সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারছি না। জানি না বাড়ির সকলে কেমন আছে। বাড়ির টানেই তো এতটা রাস্তা হেঁটে যাচ্ছি।

Advertisement

শিয়ালদহে একজন পুলিশ অফিসার মোবাইলে হিসেব করে বলেছিলেন, বাড়ি পৌঁছতে আমাকে প্রায় চোদ্দোশো কিলোমিটার হাঁটতে হবে। আমার বাড়ি অসমের বরপেটায়। কাঠের কাজ করি। চার মাস আগে ভুবনেশ্বরে গিয়েছিলাম। কাঠের কাজ করছিলাম। হঠাৎ লকডাউন হয়ে গেল। বাড়ি ফেরার জন্য বাস-ট্রেন কিছুই তো ছিল না। তেরো দিন আগে রাস্তায় নেমে হাঁটতে শুরু করি। ভুবনেশ্বর থেকে কলকাতায় এসেছি, বিহার হয়ে ইসলামপুর হয়ে এখন জলপাইগুড়িতে। রাস্তায় অনেকে জিজ্ঞেস করেছে কেন ফিরছি? ভুবনেশ্বরে থেকে যেতে পারতাম। থেকেই হয়তো যেতে পারতাম।

কিন্তু লকডাউন কবে উঠবে জানি না। আমি যে সংস্থায় কাজ করতাম, তারা লোকসানে চলছে। লকডাউন উঠে গেলে কাজ থাকবে কিনা, জানি না। বরপেটার বাড়িতে স্ত্রী আছে ছেলে-মেয়ে আছে। স্ত্রী একটা কাজ করত বরপেটায়। সেই কাজ বন্ধ। আমিও টাকা পাইনি। বাড়িতে টাকা পাঠাতেও পারিনি। কী ভাবে যে সংসার চলছে! ভুবনেশ্বরেও সব ঠিক ছিল না। বাইরে থেকে কাজ করতে গিয়েছি বলে, ওখানকার সবাই যেন সন্দেহের চোখে দেখতে শুরু করেছিল। ওখানকার লোকেরা বাজারে যেত, লুকিয়ে চুরিয়ে কেউ কেউ কাজও করছিল। কিন্তু আমরা যারা বাইরে থেকে গিয়েছি, তাদের কোথাও যাওয়া মানা ছিল। আমরা ভুবনেশ্বরে একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতাম। একদিন সেই বাড়ির সামনে এসে স্থানীয়রা বিক্ষোভও দেখাল। খুব ভয় করছিল। তার পরে আর থাকতে চাইনি ওখানে।

Advertisement

কোথাও কোথাও ছোট গাড়ি পেয়েছি, কিন্তু হাঁটতেই হয়েছে বেশিটা। আরও অনেকটা পথ বাকি। পা ফুলে গিয়ে, ফোস্কা পড়েছে। মাঝেমধ্যে পা ফেটে রক্ত বের হচ্ছে। মনে হচ্ছে পা-টা যেন পচেই যাবে। কলকাতায় পৌঁছতে পৌঁছতে এক পাটি চটি ছিঁড়ে গিয়েছিল। সেখানে এক পাটি কুড়িয়ে পাই। একই ভাবে ইসলামপুরে পাই অন্য পাটি।

অনেক সময়ে ক্লান্ত হয়ে রাস্তাতেই শুয়ে পড়েছি। কিন্তু ছেলেমেয়ের মুখটা মনে পড়তেই আবার হাঁটতে শুরু করি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন