Coronavirus Lockdown

চেনা সব পথঘাটও আতঙ্ক, গুজবে জেরবার

শুক্রবার বিকেলে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কনটেনমেন্ট জ়োনের পাশ দিয়েই হিলকার্ট রোডে যাচ্ছিলেন বৃদ্ধ মহম্মদ মনসুর।

Advertisement

কৌশিক চৌধুরী

শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২০ ০৪:৫৯
Share:

প্রতীকী ছবি।

বাণিজ্যনগরী যেন বদলে গিয়েছে আতঙ্কনগরীতে। পেটে এবং সংসারের টানে চতুর্থ লকডাউনে বাজারহাট কিছুটা খুললেও কেনাবেচা নেই বললেই চলে। ব্যবসায়িক আদানপ্রদানে ঘিরে থাকা শহরটায় সকাল থেকে চলছে করোনাকে ঘিরে আলোচনা। কিছু সত্যি, আবার কিছু গুজবও বটে। গত দু’মাসে অনেকটাই বদলে গিয়েছে শিলিগুড়ি শহরের সমাজ জীবন। আগে সকাল থেকে রাত অবধি যে সব রাস্তায় ভাল করে দাঁড়াতে সমস্যা হত, তা এখন ফাঁকা। পরপর কনটেনমেন্ট জ়োনের ঠেলায় সন্ধ্যা হতে না হতেই সুনসান শহর। স্বাস্থ্য থেকে শিক্ষা বা ব্যবসা, পর্যটন থেকে নগরজীবন— সবই বদলে গিয়েছে। সার্বিকভাবে শহরটার ছবিই যেন বদলে যাচ্ছে। আশার আলো বলতে, শহরের দূষণের মাত্রা তলানিতে এসেছে।

Advertisement

কলেজপাড়ার বাসিন্দা, পর্যটনমন্ত্রী গৌতম দেব বলেছেন, ‘‘এমন বিপর্যয় তো মানুষ আগে দেখেনি। চারদিকে করোনার ভয়, লকডাউন, নানা প্রতিবন্ধকতা, বিধিনিষেধ চলছে। শহরের পরিবেশ তো বদল হবেই।’’ আবার শহরের মেয়র তথা বিধায়ক অশোক ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘সামাজিক, অর্থনৈতিকভাবে বিরাট পরিবর্তন এসেছে। মানুষের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে রাখাটাই এখন চ্যালেঞ্জ।’’

শুক্রবার বিকেলে ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কনটেনমেন্ট জ়োনের পাশ দিয়েই হিলকার্ট রোডে যাচ্ছিলেন বৃদ্ধ মহম্মদ মনসুর। বাঁশের ব্যারিকেডের সামনে এসে বললেন, ‘‘কিছু দিন আগে সামান্য শরীর খারাপ হলেই হাসপাতালে চলে যেতাম। এখন করোনার ভয়ে ও দিকে মারাচ্ছি না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘শহরের হাসপাতাল, নার্সিংহোমের নাম বদলে সারি হাসপাতাল, কোভিড হাসপাতাল হয়েছে। এ সব তো আগে ছিল না।’’ জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘করোনার চিকিৎসা ঠিকই রয়েছে। শুধু কোয়রান্টিন বা নমুনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে নজর একটু বেশি দরকার।’’

Advertisement

লকডাউনের এই দু’মাসে পেটে টান পড়েছে অনেকেরই। টোটো, অটো চালক থেকে ছোট দোকানদার বা পাইকারি ব্যবসায়ী— কমবেশি সবাই আর্থিক ভাবে বিপাকে। অনিশ্চয়তার মুখে এসে দাঁড়িয়েছে শহরের অতি পরিচিত পর্যটন ব্যবসা। পর্যটন সংস্থা, ট্যুর অপারেটর, টিকিটের এজেন্ট বা গাড়ির মালিক— কেউ জানেন না ঋণ, বকেয়া, কর্মীদের বেতন দিয়ে ক’দিন ব্যবসা ছাড়া চলাতে পারবেন। পর্যটন সংগঠনের কর্তা সম্রাট সান্যালের কথায়, ‘‘আতঙ্ক, অনিশ্চয়তায় ভরে গিয়েছে জীবন।’’

নিত্যপণ্যের দোকানদার এবং পাইকারি ব্যবসায়ী, ওষুধ ব্যবসায়ীরা কিছুটা বাণিজ্য করলেও বাকিরা বিপাকে। গত দু’দিন ধরে হিলকার্ট রোড, সেবক রোড, স্টেশন ফিডার রোড, বর্ধমান রোডের মতো মূল রাস্তার গাড়ির সারি, দোকান, শো-রুম দিনের বেলা খোলা থাকলেও গ্রাহক খুবই কম। শুধুমাত্র খাবারের দোকান, স্টেশনারি, মুদিখানার দোকানে টুকটাক লোকের দেখা মিলেছে। হায়দারপাড়ায় মহিলাদের প্রসাধনী দোকানের মালিক মালবিকা সরকার বলেন, ‘‘এর আগে দোকান খুলে হাজার টাকা রোজগার হয়েছে। গত কাল (বৃহস্পতিবার) চার ঘণ্টায় দেড়শো টাকার বিক্রি হল। কী করব জানি না।’’ একই চালের পাইকারি ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ দাস বলেন, ‘‘লকডাউনে প্রথমে বন্ধের আতঙ্কে তো বস্তা বস্তা চাল বিক্রি হয়েছে। সবার বাড়িতেই চাল মজুত। আমাদের বেচাকেনা নেই।’’

শিলিগুড়ি শহর এডুকেশনাল হাব বলেও পরিচিত। কিন্তু গত দু’মাসে শতাধিক স্কুল কলেজের পরীক্ষা বন্ধ, ছাত্রছাত্রীরা অনলাইনে ক্লাস করছে। বাইরে বার হওয়া, মেলামেশা সব বন্ধ। ছোটদের মনোবিকাশে এর প্রভাব পড়তে পারে, বলছেন চিকিৎসকরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন