Coronavirus

বাড়িতে খিদের জ্বালা, তাই রাস্তায়

মানুষ ঘরবন্দি হয়ে থাকলে করোনাভাইরাসের মোকাবিলা করা যাবে। কিন্তু পেট বড় বালাই। সোমবার সকালে তাই নিরুপায় হয়ে রিকশা নিয়ে ঘর থেকে সাত দিন পরে বের হলাম।

Advertisement
শেষ আপডেট: ৩১ মার্চ ২০২০ ০২:০৮
Share:

ধানজিৎ সাহা রিকশা চালক, ইংরেজবাজার চার্চপল্লির বাসিন্দা

বয়স ছিল ১৭ বছর। তখন থেকেই শুরু রিকশা চালানো। টানা ৪০ বছর কখনও থামেনি আমার রিকশার চাকা।

Advertisement

রিকশা রাস্তায় ঘুরেছে, আর চলেছে তিনটি পেট। স্ত্রী, এক মেয়েকে নিয়ে ছিল সংসার। এখন সংসার বড় হয়েছে। মেয়ের বিয়ে হয়েছে। ওর তিন ছেলে-মেয়ে। সবাই আমার কাছেই থাকে। রিকশা চালিয়েই পাঁচটি পেট চলে। অভাব হলেও দু’বেলা খাবার জুটে যেত। কিন্তু টানা লকডাউনে সব থম্‌কে গিয়েছে। বাড়িতে চাল বাড়ন্ত।

ইংরেজবাজার শহরের ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের চার্চপল্লিতে ভাঙাচোরা বাড়িতেই সারা দিন কাটাচ্ছি। করোনা রুখতে হলে নাকি ঘরেই বসে থাকতে হবে। মানুষ ঘরবন্দি হয়ে থাকলে করোনাভাইরাসের মোকাবিলা করা যাবে। কিন্তু পেট বড় বালাই। সোমবার সকালে তাই নিরুপায় হয়ে রিকশা নিয়ে ঘর থেকে সাত দিন পরে বের হলাম। না হলে খিদের জ্বালায় স্ত্রী, মেয়ে, নাতি-নাতনিদের সঙ্গে নিশ্চিত মরতেই হবে। খিদেতে নাতি-নাতনিরা কাঁদছে। ওদের কান্না দেখে বাড়িতে বসে থাকতে পারলাম না। রিকশা নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ি।

Advertisement

রাস্তায় লোকজন নেই। কয়েক জনই বের হয়েছেন। অনেককেই দেখছি মোটরবাইক, সাইকেলে। কেউ কেউ প্রচুর চাল, ডাল, তেল, ডিম বাজার থেকে কিনে বাড়ি নিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে ৮০০ টাকা দরের খাসির মাংস কিনতে ভিড় করছেন। অথচ, শহরে মাইকিং করে ঘোষণা করা হচ্ছে একসঙ্গে জমায়েত না হতে।

আমার মতো লোকেদের ঘরে থাকার উপায় নেই। আগে রিকশা চালিয়ে দিনে চারশো থেকে পাঁচশো টাকা রোজগার করেছি। তবে টোটো, ই-রিকশা আসার পরে আয় কমেছে। দিনে ২০০ টাকা রোজগারেই হিমসিম হতে হয়েছে। বছরচারেক আগেও ইংরেজবাজার শহরে প্রায় সাড়ে চার হাজার রিকশা চলাচল করত। টোটো, ই-রিকশা হওয়ার পরে সেই সংখ্যা অনেক কমেছে। আমার মতো কয়েক জন রয়েছেন যাঁদের রিকশা চালানো ছাড়া আর কিছুই পারে না।

শুনেছি পুরসভা, প্রশাসন থেকে গরিব মানুষদের বাড়ি বাড়ি চাল, আলু, পেঁয়াজ দেওয়া শুরু করেছে। রেশনে বিনা খরচে চাল, ডালও দেওয়া হবে। তবে আমাদের মতো গরিবের ভাগ্যে সেই সব কিছুই জুটেনি। প্রশাসন, পুরসভা আমাদের ঘরে খাবার পৌঁছে দিলে ৬০ ছুঁইছুঁই বয়সে করোনার ভয় নিয়ে রিকশা নিয়ে রাস্তায় বের হতাম না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন