(বাঁ দিকে) পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখিয়ে আটক। (ডান দিকে) পুলিশ সুপারের হাতে ‘আক্রান্ত’। —ফাইল চিত্র।
কোচবিহারের পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের ঘটনায় ধৃতদের মধ্যে তিন জনকে জামিনে মুক্তি দিল আদালত। বাকিদের পাঁচ জনের পুলিশি হেফাজত এবং দু’জনকে জেল হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
দীপাবলির রাতে গভীর রাত পর্যন্ত বাজি ফাটানোর বিরুদ্ধে পুলিশ সুপারের পদক্ষেপ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসীদের একাংশ। বিক্ষুব্ধদের অভিযোগ, বাংলো থেকে বেরিয়ে বেশ কয়েকজনকে ‘মারধর’ করছেন পুলিশ সুপার। এর প্রতিবাদে মঙ্গলবার এসপির বিরুদ্ধে বিক্ষোভও দেখান তাঁরা। যদিও সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এসপি। মঙ্গলবারের বিক্ষোভের ঘটনায় ১০ জনকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। বুধবার তাঁদের কোচবিহার আদালতে হাজির করানো হলে তিন জনকে জামিন দেয় আদালত।
ধৃতদের আইনজীবী শিবেন রায় জানান, আদালত তিন জনের জামিন মঞ্জুর করেছে। পাঁচ জনের পুলিশি হেফাজত এবং দু’জনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। আইনজীবী আরও জানান, আদালতে ইতিমধ্যে একটি ভিডিয়ো ফুটেজ পেশ করা হয়েছে। সেটি বিবেচনা করে দেখার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। আইনজীবীর দাবি, ওই সিসি ক্যামেরার ফুটেজে মাথায় ফেট্টি বাঁধা, হাফ প্যান্ট, স্যান্ডো গেঞ্জি পরা এক ব্যক্তিকে শিশু এবং মহিলাদের মারধর করতে দেখা গিয়েছে। ওই ব্যক্তি কে, তা শনাক্ত করে পুলিশ যাতে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়, সেই আবেদনও জানান তিনি।
কোচবিহার শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে রেলঘুমটি এলাকায় পুলিশ সুপারের বাংলো। অভিযোগ, সোমবার দীপাবলির রাতে হঠাৎ বাংলো থেকে বেরিয়ে এসে কয়েক জনের উপর ‘চড়াও হন’ তিনি। ‘আক্রান্তদের’ এক জন দাবি করেছেন, ‘‘পুলিশ সুপার হাফ প্যান্ট, স্যান্ডো গেঞ্জি আর মাথায় ফেট্টি বাঁধা অবস্থায় এলাকার কয়েকটি শিশু, একজন মহিলা এবং এক জন স্কুলশিক্ষককে মারধর করেছেন।’’ যদিও পুলিশ সুপার মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, গভীর রাত পর্যন্ত শব্দবাজি ফেটেছে। তাঁর নিরাপত্তারক্ষীরা বাধা দিয়েছেন মাত্র।
সোমবার রাতের ওই ঘটনার প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার এসপির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান এলাকাবাসীরা। পথ অবরোধ করে পুলিশ সুপারের বদলির দাবি তোলেন তাঁরা। উত্তেজনা ছড়ালে ঘটনাস্থলে যায় কোতায়ালি থানার পুলিশ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কয়েক জনের উপর লাঠিচার্জ করে তারা। আটক হন বেশ কয়েক জন। পরে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়। ধৃতদের আইনজীবী জানান, মঙ্গলবার বিক্ষোভের ঘটনায় ধৃতদের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা, খুনের উদ্দেশে পুলিশকে মারধর, সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি, অবৈধ জমায়েতের অভিযোগে যথাযথ ধারায় এফআইআর রুজু করেছে পুলিশ।
বুধবার আদালতের নির্দেশের পরে কোচবিহারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কৃষ্ণগোপাল মিনা জানান, মঙ্গলবারের ঘটনায় তিন মহিলা-সহ ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। বুধবার আদালত তিন মহিলাকে জামিন দিয়েছে। বাকিদের মধ্যে পাঁচ জনের পুলিশি হেফাজত এবং দু’জনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। বর্তমানে এলাকা শান্তিপূর্ণ রয়েছে বলেই জানিয়েছেন তিনি।
কোচবিহারে সোমবার রাতের ওই ঘটনায় আগেই নিন্দা জানিয়েছেন বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এ বার পুলিশ সুপারের বদলের দাবিতে পথে নামল জেলা বিজেপি। বুধবার কোচবিহার দক্ষিণের বিজেপি বিধায়ক নিখিলরঞ্জন দে-র নেতৃত্ব জেলা বিজেপির তরফে কোতোয়ালি থানা ঘেরাও করে বিক্ষোভও দেখানো হয়।