কড়া পুলিশি ঘেরাটোপে মৌন মিছিল সিপিএমের

পুলিশের বিরুদ্ধে লাঠি চালানোর অভিযোগ এনে মৌন মিছিল করল দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সিপিএম। মঙ্গলবার দক্ষিণ দিনাজপুরের প্রতিটি ব্লকে সিপিএমের পক্ষ থেকে কর্মী সমর্থকেরা এলাকায় মুখে কালো ফিতে বেধে মৌনমিছিল করেন। সোমবার বালুরঘাটে জেলাশাসকের অফিসের সামনে সিপিএমের বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ লাঠি চালায় বলে অভিযোগ। লাঠির আঘাতে জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য অমিত সরকার সহ সিপিএমের নেতৃবৃন্দ ও কর্মীরা জখম হন বলে অভিযোগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

বালুরঘাট শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:০৬
Share:

পুলিশের লাঠি চালানোর প্রতিবাদে সিপিএমের মৌন মিছিল বালুরঘাটে।

পুলিশের বিরুদ্ধে লাঠি চালানোর অভিযোগ এনে মৌন মিছিল করল দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা সিপিএম। মঙ্গলবার দক্ষিণ দিনাজপুরের প্রতিটি ব্লকে সিপিএমের পক্ষ থেকে কর্মী সমর্থকেরা এলাকায় মুখে কালো ফিতে বেধে মৌনমিছিল করেন। সোমবার বালুরঘাটে জেলাশাসকের অফিসের সামনে সিপিএমের বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ লাঠি চালায় বলে অভিযোগ। লাঠির আঘাতে জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য অমিত সরকার সহ সিপিএমের নেতৃবৃন্দ ও কর্মীরা জখম হন বলে অভিযোগ। পাল্টা হামলায় তিন জন পুলিশকর্মীও আহত হন বলে অভিযোগ। জেলা পুলিশ সুপার শীশরাম ঝাঝারিয়া জানান, সোমবারের বিক্ষোভ মিছিল থেকে গোলমালের সৃষ্টি, পুলিশের উপর হামলা এবং সরকারি নির্দেশ অমান্যের মতো একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় সিপিএমের জেলা নেতা সহ মোট ১১০ জনের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু হয়েছে।

Advertisement

জেলাশাসক তাপস চৌধুরীর নির্দেশে পুলিশ বিনা প্ররোচনায় শান্তিপূর্ণ মিছিলের উপর লাঠিচার্জ করে বলে অভিযোগ তুলে এদিন মৌন মিছিল এবং আগামী ১৬ এপ্রিল জেলা জুড়ে পথ অবরোধের কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন দলের জেলা সম্পাদক নারায়ণ বিশ্বাস। তাঁর অভিযোগ, প্রশাসন নিরপেক্ষতা হারিয়েছে। গঙ্গারামপুরে অবাধ পুরভোটের দাবি করায় আমাদের উপর দমনপীড়ন নীতি নিয়ে সোমবার লাঠিচার্জ করে প্রতিবাদ আন্দোলনকে দাবিয়ে রাখা যাবে না। ইতিমধ্যে সিপিএমের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনের কাছে জেলাশাসকের বিরুদ্ধে নালিশ জানানো হয়েছে।

এদিন বিকলে বালুরঘাট শহরে মৌন মিছিলকে কেন্দ্র করে প্রশাসন মহলে ছিল সাজ সাজ রব। প্রশাসনিক ভবনের সামনে প্রচুর পুলিশবাহিনী মোতায়েন ছিল। মৌন মিছিল কোর্ট মোড় হয়ে প্রশাসনিক ভবনের সামনে দিয়ে থানা মোড় থেকে বাসস্ট্যান্ড হয়ে সাড়ে তিন নম্বর মোড়ে দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। বালুরঘাটে এদিনের মৌন মিছিলে জেলা স্তরের কোনও নেতাকে দেখা যায়নি।

Advertisement

সোমবার প্রশাসনিক ভবন চত্বরে বিক্ষোভের ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে জেলা সিপিএম নেতা অমিত সরকার, কমলেন্দু সরকার সহ মোট ১১০ জন সিপিএম কর্মী সমর্থকের বিরুদ্ধে পুলিশের উপর আক্রমণ, বেআইনি ভাবে জমায়েত করে রাস্তা অবরোধ, সরকারি কাজে বাধা, সরকারি নির্দেশ অমান্য করে বিনা অনুমতিতে মাইকের ব্যবহারের মতো একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় পুলিশ মামলা দায়ের করে অভিযুক্তদের ধরতে তদন্ত শুরু করেছে। সোমবার বিক্ষোভস্থল থেকে ধৃত ৬ সিপিএম সমর্থককে এদিন বালুরঘাট আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।

ধৃত সিপিএম সমর্থকেরা।

এ দিকে, গঙ্গারামপুরের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব হালদার পাড়ায় সিপিএম কর্মী প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক গৌরপদ সরকারের উপর হামলায় অভিযুক্ত দুই তৃণমূলকর্মীকে পুলিশ এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি। এই ঘটনায় অভিযুক্ত ওই দু’জনের সঙ্গে দলের কোনও যোগ নেই বলে এদিন সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডের তৃণমূল প্রার্থী অতনু রায় দাবি করেন। তিনি বলেন, ‘‘অভিযুক্ত দু’জনকে দলের হয়ে প্রচার মিছিলে কেউ দেখেননি। কিংবা ওয়ার্ডের নির্বাচনী কার্যালয়েও একদিনের জন্য তাদের বসতে দেখা যায়নি। ওরা তৃণমূলের কর্মী নন।’’

তবে বাসিন্দাদের একাংশ জানান, গৌরপদবাবুর তাঁর এক প্রতিবেশীর পুরনো একটি জমি সংক্রান্ত বিবাদ ছিল। তার জেরেই সোমবার ভোরে অভিযুক্ত ব্যক্তি নেশাগ্রস্ত হয়ে সিপিএমের পতাকা ফেস্টুন ছিঁড়ে পোড়াচ্ছিলেন বলে অভিযোগ। সঙ্গে ছিল এক সঙ্গীও। সে সময় বাড়ি থেকে বেরিয়ে গৌরপদবাবু আপত্তি জানালে পুরনো রাগের জেরে তাঁকে হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। দূর থেকে তাঁর গায়ে পেট্রোল ছিটিয়ে ছিটিয়ে ভয় দেখাতেই তিনি বাড়িতে ঢুকে পড়েন বলে অভিযুক্তদের দাবি। গৌরপদবাবু অবশ্য তাঁর গায়ে পেট্রোল ছিটিয়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার হুমকি দেওয়ার নালিশ জানিয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। এদিন গৌরপদবাবুদের কাউকেই বাড়িতে পাওয়া যায়নি। ফোনেও যোগাযোগ করা যায়নি। গঙ্গারামপুর থানার আইসি সমীর দেওসা বলেন, ‘‘অভিযুক্তদের সঙ্গে ওই শিক্ষকের পুরনো বিবাদ ছিল বলে প্রাথমিক ভাবে আমরা জানতে পেরেছি। অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু হয়েছে।’’

মঙ্গলবার অমিত মোহান্তের তোলা ছবি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন