লুঠ লক্ষাধিক টাকার সামগ্রী

পুলিশের সামনেই পালাল ডাকাতদল

পুলিশের সামনে দিয়েই বিনা বাধায় ডাকাত পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠল উত্তর দিনাজপুরের ইটাহারে। সোমবার রাত দুটো নাগাদ ইটাহার থানার চূড়ামণ বাসুদেবপুর এলাকায় অলঙ্কার ও ডেকোরেটর ব্যবসায়ী পাঁচ ভাইয়ের বাড়িতে চড়াও হয় ডাকাত দল। আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারাল অস্ত্র দেখিয়ে নগদ সহ লক্ষাধিক টাকার সামগ্রী লুঠ করে পুলিশের সামনেই তারা পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ২২ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৩৮
Share:

ডাকাতির পরে। ইটাহারে।

পুলিশের সামনে দিয়েই বিনা বাধায় ডাকাত পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠল উত্তর দিনাজপুরের ইটাহারে।

Advertisement

সোমবার রাত দুটো নাগাদ ইটাহার থানার চূড়ামণ বাসুদেবপুর এলাকায় অলঙ্কার ও ডেকোরেটর ব্যবসায়ী পাঁচ ভাইয়ের বাড়িতে চড়াও হয় ডাকাত দল। আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারাল অস্ত্র দেখিয়ে নগদ সহ লক্ষাধিক টাকার সামগ্রী লুঠ করে পুলিশের সামনেই তারা পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ। পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে প্রায় তিনঘন্টা বাসিন্দারা বাসুদেবপুর এলাকার চূড়ামণ-চাঁচল রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। বিক্ষোভ চলাকালীন পুলিশের সঙ্গে বাসিন্দাদের বচসা বেধে যায়। পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ঘটনাস্থলে গিয়ে দ্রুত দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে বেলা ১২টা নাগাদ অবরোধ ওঠে।

জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ ওয়াকার রেজা অবশ্য পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ মানতে চাননি। তাঁর দাবি, পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছনো মাত্রই দুষ্কৃতীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে একটি বোমা ছুড়ে পালানোর চেষ্টা করে। পুলিশ দুষ্কৃতীদের পিছু ধাওয়া করে তাদেরকে লক্ষ্য করে ছয় রাউন্ড গুলি চালায়। তবুও তাদের গ্রেফতার করতে পারেনি। দুষ্কৃতীরা জমির আল ও জঙ্গল দিয়ে পালিয়ে যায়। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশের সন্দেহ, দুষ্কৃতীরা মালদহের চাঁচল‌ের বাসিন্দা। পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। খুব শীঘ্রই তাদের গ্রেফতার করা হবে।’’

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, চুড়ামণ বাসুদেবপুর এলাকায় একই বাড়িতে থাকেন পাঁচ ভাই উদয় দাস, আনন্দ দাস, লাল্টু দাস, প্রবীর দাস ও কিঙ্কর দাস। তাঁদের সকলেরই অলঙ্কার ও ডেকোরেটরের ব্যবসা রয়েছে। স্থানীয় নতুনবাজারে উদয়বাবুর অলঙ্কারের দোকান রয়েছে। বাকিরা বাড়ি থেকেই অলঙ্কার ও ডেকোরেটরের ব্যবসা চালান। একটি দোতলা বাড়িতে উপর ও নিচতলার পাঁচটি ঘরে ওই পাঁচ ভাই স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের নিয়ে থাকেন। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এদিন ২৫ থেকে ৩০ জনের একটি দুষ্কৃতীর দল মুখে কাপড় বেঁধে উদয়বাবুদের বাড়ির পেছনের পাঁচিল ও দেওয়াল বেয়ে ছাদে ওঠে। এরপর দরজা ভেঙে বারান্দায় ঢুকে কুড়ুল দিয়ে মোট ৬টি ঘরের কাঠের দরজা ভেঙে ভিতরে ঢোকে। দুষ্কৃতীরা পাঁচ ভাইকে আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র দেখিয়ে পাঁচটি আলমারি ভেঙে নগদ ৮০ হাজার টাকা, ১৭ ভরি সোনার অলঙ্কার ও চারটি মোবাইল লুঠ করে ঘরের সমস্ত আলবাবপত্র লন্ডভন্ড করে দেয়। উদয়বাবু সহ তাঁর ভাইদের চিত্কারে এলাকার বাসিন্দারা তাঁদের বাড়ির সামনে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করতেই দুষ্কৃতীরা পালিয়ে যায়।

উদয়বাবু বলেন, ‘‘বাসিন্দাদের কাছ থেকে পুলিশ আমাদের বাড়িতে ডাকাতির খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। কিন্তু দুষ্কৃতীরা একটি বোমা ফাটিয়ে পুলিশের সামনে দিয়েই দৌড়ে পালিয়ে যায়। তারা পালিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ অন্ধকারে গুলি চালায়। পুলিশ সক্রিয় থাকলে দুষ্কৃতীরা পালাতে পারত না।’’

জেলা পুলিশের এক কর্তার অবশ্য দাবি, ডাকাতির খবর পেয়ে প্রথমে ১৩ জন পুলিশকর্মী ঘটনাস্থলে যান। কিন্তু দুষ্কৃতীরা সংখ্যায় বেশি থাকায় ও তাদের অনেকের হাতেই আগ্নেয়াস্ত্র, ধারালো অস্ত্র ও বোমা থাকায় পুলিশ প্রথমে হামলার আশঙ্কায় পিছু হটতে বাধ্য হয়। বোমার আঘাতে পুলিশের একটি গাড়ির লুকিং গ্লাস ভেঙে গিয়েছে।

ইটাহারের বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্য বলেন, বাসিন্দাদের অভিযোগ পুরোপুরি উড়িয়ে দেওয়া যায় না। পুলিশ আরেকটু সক্রিয় থাকলে দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করা সম্ভব হত। আমি অবিলম্বে দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কাছে দাবি জানিয়েছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন