মিরিক যাওয়ার পথে দুধিয়া লৌহসেতু ক্ষতিগ্রস্ত। ছবি: রয়টার্স।
এক রাতের বৃষ্টিতে প্রকৃতির তাণ্ডবের পর দার্জিলিঙে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে। সকাল থেকে নতুন করে খুব বেশি বৃষ্টি আর হয়নি। আকাশ খানিকটা পরিষ্কার হওয়ায় দার্জিলিং শহর থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তবে মৃতের সংখ্যা আরও বেড়েছে। রবিবার পর্যন্ত সরকারি হিসাবে ২০ জনের মৃত্যুর কথা বলা হয়েছিল। পরে আরও দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এখনও বহু জায়গায় উদ্ধারকাজ চলছে। মৃতের সংখ্যা ২৫ ছাড়িয়ে গিয়েছে বলেই সূত্রের দাবি। তাঁদের মধ্যে অন্তত পাঁচ জন নেপালের বাসিন্দা। সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
দার্জিলিঙের দুর্যোগে বহু পর্যটক আটকে পড়েছিলেন। বৃষ্টি থামতেই তাঁরা দ্রুত পাহাড় থেকে নেমে আসতে শুরু করেছেন। সোমবার সকাল থেকে বহু পর্যটক শিলিগুড়ির দিকে রওনা দিয়েছেন। প্রধান রাস্তা বন্ধ। পর্যটকদের সহায় তাই বিকল্প দু’টি রাস্তা। তিনধারিয়া রোড আপাতত খোলা আছে। অনেকে ফেরার জন্য সেই রাস্তা ধরছেন। অনেকে বেছে নিচ্ছেন পুরনো দার্জিলিঙের দুর্গম পাঙ্খাবাড়ি রোড। এই রাস্তা দার্জিলিঙের অন্যতম দুর্গম রাস্তা হিসাবে পরিচিত। কার্যত নিরুপায় হয়েই পর্যটকেরা ফেরার জন্য এই রাস্তা বেছে নিচ্ছেন।
মিরিকের রাস্তা এবং পাহাড়ে ওঠার রোহিণী রোড রবিবার থেকে বন্ধ। যে সমস্ত পর্যটক নেমে আসার চেষ্টা করছেন, তাঁদের কারও ট্রেন হয়তো সন্ধ্যায়, কারও রাতে। কিন্তু কেউ আর ঝুঁকি নিতে রাজি নন। প্রকৃতি যত ক্ষণ শান্ত রয়েছে, তার মধ্যেই তাঁরা পাহাড় থেকে নিরাপদে নামার জন্য মরিয়া।
শনিবার সন্ধ্যা থেকে দার্জিলিঙে প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। চলেছে রবিবার সকাল পর্যন্ত। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২৪ ঘণ্টায় ২৬১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে শুধু দার্জিলিঙে। এ ছাড়া, কোচবিহার, জলপাইগুড়িও প্রকৃতির তাণ্ডব দেখেছে। বৃষ্টিতে তিস্তা, তোর্সা, জলঢাকার মতো নদী ফুঁসে উঠেছিল। জলস্তর ছাড়িয়ে গিয়েছিল বিপদসীমা। এমনকি বনাঞ্চলেও জল ঢুকে পড়েছিল। জঙ্গলের অনেক পশুর দেহ ভেসে যেতে দেখা গিয়েছে তিস্তার জলের তোড়ে। সোমবার সকাল থেকে নদীগুলির জল নামতে শুরু করেছে।
দুর্যোগে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মিরিক। দুধিয়া থেকে মিরিকের পথে লোহার সেতু ভেঙে অনেকের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া, দার্জিলিং জেলার অনেক জায়গায় ধস নেমে রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। রোহিণী রোডের একাংশ ধসে নেমে গিয়েছে নদীর দিকে। তিস্তার জল রবিবার উঠে এসেছিল ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর। ওই রাস্তাও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। দার্জিলিং শহরের সঙ্গেও সাময়িক ভাবে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল।
উত্তরবঙ্গের দুর্যোগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এবং অন্য রাজনৈতিক নেতৃত্ব শোকপ্রকাশ করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রবিবার সকালে নবান্নের কন্ট্রোল রুম থেকে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছিলেন। পাহাড়ের পাঁচ জেলার জেলাশাসকের সঙ্গে তিনি ভার্চুয়াল মাধ্যমে বৈঠকও করেন। সোমবার তাঁর উত্তরবঙ্গে যাওয়ার কথা।