ঋণের দায়ে কীটনাশক খেয়ে এক চাষি আত্মঘাতী হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার ভোরে মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল মৃত্যু হয় ওই চাষির। ঘটনাটি ঘটেছে মালদহের বামনগোলা ব্লকের জগদ্দলা গ্রাম পঞ্চায়েতের হাঁসপুকুর গ্রামে। ওই ঘটনায় গ্রামে ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম ভবেশ রায় (৩০)। তাঁর পাঁচ বিঘা চাষের জমি রয়েছে।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার তিনি পাঁচ বিঘা জমির মধ্যে তিন বিঘা জমিতে ভুট্টা ও দুই বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। মার্চের শুরুতে ঝড় হওয়ায় তাঁর সমস্ত ভুট্টা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। সেই সঙ্গে আলুতে ধসা রোগের আক্রমণ হওয়ায় জমিতে তেমন আলুও উৎপাদন হয়নি। ফলে, তিনি হতাশায় ভুগছিলেন। পরিবারের লোকেদের দাবি, চাষ করার জন্য গ্রামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। তবে জমিতে ঠিক মতো চাষ করতে না পারায় মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন।
মৃতের দাদা ঘেনুবাবু বলেন, “আমরা তিন ভাই। ছোট ভাই জমিতে চাষবাস করে। আমরা অন্য কাজ করি। এবার জমিতে সঠিক সময় কীটনাশক দিতে পারেনি। ফলে আলুতে ধসা রোগ হওয়ায় চাষে ক্ষতি হয়ে যায়। ঝড়ে ভুট্টাও নষ্ট হয়ে যায়। ভাই জানিয়েছিল, চাষ করার জন্য ৩০ হাজার টাকা ধার নিয়েছিল। কয়েকদিন ধরেই সে হতাশায় ভুগছিল।”
এ দিন দুপুরে মৃত চাষির পরিবারের সঙ্গে কথা বলতে যান এলাকার সিপিএম বিধায়ক খগেন মুর্মু। তিনি বলেন, “জমিতে তেমন চাষ করতে না পারায় আলুর উৎপাদন করতে পারেনি। যেটুকু আলুর উৎপাদন হয়েছে, তার দাম পাননি। ফলে মানসিক অবসাদে ভুগে আত্মহত্যা করেছেন। আমরা প্রশাসনকে জানাব।” মালদহের পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “ঘটনাটি শুনেছি। মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
বামনগোলা ব্লকের জগদ্দলা গ্রাম পঞ্চায়েতের হাঁসপুকুর গ্রামের বাসিন্দা ভবেশবাবু পাঁচ বিঘা জমিতে চাষ করেন। জমিতে আলু ও ভুট্টা চাষ করেছেন। ঝড়ের জন্য ভুট্টা চাষে ক্ষতি হয়ে যায়। আলুতেও ধসার প্রকোপ দেখা যায়। ফলে এ বার তিনি মাত্র ২ কুইন্টাল আলু উৎপাদন করতে পেরেছেন।
তিনি মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন বলে পরিবারের প্রায় সকলেই জানিয়েছেন। গত সোমবার সন্ধ্যে বেলা বাড়িতেই জমিতে দেওয়ার কীটনাশক খান ভবেশ। পরিবারের লোকেরা তাঁকে ঘরের মধ্যে কাতরাতে দেখে মদিপুকুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান। তার অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চিকিৎসকেরা স্থানান্তরিত করেন মালদহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে। এদিন ভোরে মৃত্যু হয় তাঁর। পুলিশ মৃতদেহটি ময়না তদন্তের জন্য পাঠিয়েছে।
অন্য দিকে, ধূপগুড়িতে চাষির অপমৃত্যুর পরে সরকারের তরফে আলুর সহায়ক মূল্য বাড়ানোর দাবিতে ফের সরব হল বামেরা। বুধবার গভীর রাতে ফটকটারি গ্রামের ওই আলুচাষি নিত্যগোপাল বর্মনের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। আজ, শুক্রবার বিধানসভার বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্র-সহ বাম দলের আরও তিন বিধায়ক মৃত চাষির বাড়িতে যাবেন।
ধূপগুড়ির সিপিএম বিধায়ক মমতা রায় বৃহস্পতিবার বলেন, “রাজ্য সরকার উদাসীন। দাম না পেয়ে যখন আলুচাষিরা আত্মহত্যা করছেন, সে সময় তাঁরা চুপ করে বসে রয়েছেন। এই মৃত্যু রোধ করতে সরকারকে আট টাকা মূল্যে সমস্ত কৃষকের আলু কিনতে হবে। সূর্যবাবু ফিরে যাবার পর আলুচাষিদের নিয়ে কৃষকসভার নেতৃত্বে বড়সড় আন্দোলন করা হবে।”
ভিন রাজ্যে দাম না থাকায় বর্তমানে জ্যোতি আলু ধূপগুড়ির পাইকারি বাজারে তিন টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বিঘা প্রতি ২৫-২৭ হাজার টাকা খরচ করে চাষ করলেও খরচের অর্ধেক টাকাও উঠবে না ভেবে মাথায় হাত পড়েছে চাষিদের।
মঙ্গলবার গভীর রাতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান নিত্যগোপালবাবু। পরে তাঁর ঝুলন্ত দেহ মেলে। তাঁর বাবা পূর্ণকান্তবাবু বলেন, “ছেলে বরাবর আলু চাষ করত। তবে বেসরকারি লগ্নি সংস্থার এজেন্ট হিসাবে লোকজনের টাকা শোধ করার কথা দিয়েছিল ও। আলু বিক্রি করে তা ফেরত দেবে ভেবেছিল। আলুচাষে ক্ষতি হওয়ায় আত্মহত্যা করবে বলে হুমকি দিয়েছিল। অনেক বুঝিয়েছিলাম, কাজ হল না। এখন কী ভাবে সংসার চলবে বুঝতে পারছি না।”