রসিক বিলে পর্যটকদের আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্র এই পাখিরালয়টি। — নিজস্ব চিত্র
জানলা খুললেই বিশাল জলাশয়। রকমারি পাখির কলতান। মাঝেমধ্যে ভেসে আসে চিতাবাঘের গর্জন। কয়েক পা এগোলেই হরিণ, ঘড়িয়াল, ময়ূর দর্শনের সুযোগ। তার ওপর নতুন চেহারায় সাজিয়ে তোলা বন উন্নয়ন নিগমের বাংলো। সব মিলিয়ে এ বার পুজোর ছুটিতে ভিড় উপচে পড়ল কোচবিহারের রসিকবিলে।
নিগম সূত্রের খবর, এমন ছবি শুধু রসিকবিলের নয়। রাজ্যজুড়েই পুজোর মাসে বাংলো ভাল ব্যবসা করেছে। গত অক্টোবর মাসে রাজ্যজুড়ে ব্যবসা হয়েছে ৬৫ লাখ টাকার।
রাজ্যের বন উন্নয়ন নিগমের চেয়ারম্যান উদয়ন গুহ বলেন, “পুজোর মরসুমে এ বার নিগমের কোন বাংলো খালি ছিলনা। আমি নিজে পরিস্থিতি সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে মূর্তিতে গিয়েছিলাম। একটি ঘরে কিছু সময় বিশ্রাম করব ভেবেছিলাম। কিন্তু পর্যটকদের ভিড় থাকায় সেটাও সম্ভব হয়নি।”
প্রাথমিক হিসেব অনুযায়ী আলিপুরদুয়ার ডিভিশনের আওতায় বড়ডাবরি, রাজাভাতখাওয়া, রসিকবিল প্রভৃতি এলাকা মিলিয়ে অক্টোবর মাসে বাংলো বুকিং বাবদ নিগমের আয় হয়েছে প্রায় ৬ লক্ষ টাকা। কোচবিহারের রসিকবিলে নতুন করে সাজিয়ে তোলা দুই শয্যার দু’টি কটেজ, আট শয্যার ডরমেটরিতে শুধুমাত্র রাত্রিবাসের ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানেও মাসের শেষে বুকিং খাতে জমা পড়েছে ৫০ হাজার টাকা। নিগমের কয়েক জন আধিকারিক জানিয়েছেন, গত বার রাজ্যজুড়ে পুজোর মাসে প্রায় ৬০ লক্ষ টাকার ব্যবসা হয়েছিল। এ বছর তা অনেকটাই বেড়েছে। যদিও কিছু বাংলোর ভাড়াও বাড়ানো হয়েছিল।
রাজ্যে নিগমের রাত্রিবাসের স্থান রয়েছে ৩২টি। তালিকায় বাংলো ছাড়াও রয়েছে নদীক্যাম্প। রাজাভাতখাওয়া বড়ডাবরি, মূর্তি ছাড়াও ওই তালিকায় উত্তরের জলঢাকা, সুনতালেখোলা, প্যারেন, মংপং, লাভা, লোলেগাঁও, লেপচাজগত, থেকে দক্ষিণবঙ্গের মুকুটমণিপুরও ছিল। নিগম সূত্রেই জানা গিয়েছে, সর্বত্রই এক অবস্থা। ছুটির মরসুম শেষ হওয়ার পরেও বুকিং করেছেন আগ্রহীরা।
নিগম কর্তৃপক্ষের দাবি, উন্নত পরিষেবা, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য দেখার সুযোগ যেমন রয়েছে তেমনই নিজেদের পছন্দ মতো ‘লোকেশন’ বেছে নেওয়ার ‘অপশন’ ঘিরেও আকর্ষণ বেড়েছে। কিছু বাংলোয় নিখরচায় দেওয়া হচ্ছে প্রাতরাশ। একাধিক রেস্তোরাঁ চালু করা হয়েছে। নিগমের আলিপুরদুয়ারের ডিভিশন্যাল ম্যানেজার অসিতাভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রসিকবিল বাংলো-সহ সর্বত্র পুজোর মাসে পর্যটকদের ব্যাপক ভিড় হয়েছে।’’
যদিও পর্যটন ব্যবসায়ীদের একাংশের ধারণা, পাহাড়ের পাশাপাশি ডুয়ার্সের আকর্ষণ বরাবরের। তবে পুজোর মরসুমে সাধারণত পাহাড়মুখী হওয়ার প্রবণতা বেশি ছিল। পাহাড় ঘুরে দেখার পর অনেকেই ডুয়ার্সে আসতেন। এখন শুধু ডুয়ার্স বেড়ানোর পরিকল্পনা নিয়ে বহু পর্যটক আসছেন। ইস্টার্ন হিমালয়ান ট্র্যাভেল ট্যুর অপারেটর্স অ্যাসোসিয়েশনের কর্তা সম্রাট স্যানাল বলেন, “প্রযুক্তির সুবিধেয় ঘরে বসে অনলাইনে বাংলো বুকিং, সরকারি ও বেসরকারি দুই উদ্যোগের প্রচারে পর্যটকদের ভিড় অনেক বেড়েছে।” কয়েক জন বাসিন্দা জানান, এ বার বন নিগমের বাংলোর ভাড়া বাড়ানো না হলে ওই চাহিদা আরও বাড়ত।