মহকুমা শহর মালবাজার পর্যটনের কারণেই রাজ্যে অত্যন্ত পরিচিত নাম। পর্যটনের প্রসারে দীর্ঘদিন ধরেই গরুমারা জাতীয় উদ্যানের একটি পৃথক টিকিট কাউন্টার মালবাজার শহরে তৈরির দাবি দীর্ঘদিনের। এ বারে পুরভোটের আগে মহকুমা শহরের বিভিন্ন সংগঠন এবং পর্যটন ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে ফের এই পৃথক টিকিট কাউন্টার স্থাপনের দাবি উঠে এসেছিল। পুরভোটে এই প্রথমবার নিরঙ্কুশ ক্ষমতা নিয়ে ফিরেছে তৃণমূল। পর্যটনের স্বার্থেই তাই এ বারে দীর্ঘদিনের সেই দাবি পূরণের আশায় বুক বাঁধছেন মালবাজারের বাসিন্দারা।
উল্লেখ্য মালবাজার মহকুমার মধ্যে গরুমারা জাতীয় উদ্যানের সিংহভাগ এলাকা অবস্থিত। যাত্রাপ্রসাদ, মেদলা, চন্দ্রচূড়, চুকচুকি এবং চাপড়ামারি গরুমারা জাতীয় উদ্যানের এই পাঁচটি নজরমিনারই পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। ভোর ছটা থেকে বিকেল সাড়ে তিনটে পর্যন্ত মোট চারটি পর্যায়ে পর্যটকদের টিকিট দেওয়া হয়। প্রতিটি পর্যায়ে দেড় ঘণ্টার জন্যে নজরমিনারগুলিতে পর্যটকেরা প্রবেশ করার অনুমতি পান। সর্বাধিক একটি পর্যায়ে মাত্র ২৫ জন পর্যটককে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। গরুমারা লাগোয়া লাটাগুড়ির প্রকৃতি বীক্ষণ কেন্দ্রের একটি মাত্র কাউন্টার থেকেই সবগুলি নজরমিনারের ঢোকার টিকিট দেওয়া হয়। যেহেতু টিকিট সীমাবদ্ধ, সে কারণে কাউন্টারের সামনে দীর্ঘ লাইন দিয়ে অপেক্ষা করেন পর্যটকেরা। ভোরবেলা বুনোদের দেখার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে বলে ভোর সাড়ে চারটা থেকেই পর্যটকেরা ভিড় জমান লাটাগুড়ির কাউন্টারে। কাউন্টার খোলার আগে থেকেই পর্যটকদের শেষরাতে উঠে দাঁড়িয়ে টিকিটের জন্যে দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হয়।
তবে যেসব পর্যটকেরা ডুয়ার্স বেড়াতে এসে মালবাজার শহরেরই কোনও রিসর্ট বা হোটেলে ওঠেন তাঁদের পক্ষে ভোর চারটেয় লাটাগুড়িতে গিয়ে টিকিট কাটা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়ে। কারণ লাটাগুড়ির বিভিন্ন হোটেল এবং রিসর্টে থাকা পর্যটকেরাই লাইনে সবার আগে থাকায় অনেক সময় মালবাজারের পর্যটকেরা টিকিটের লাইনে দাঁড়িয়েও পর্যটকদের সংখ্যা ২৫ পেরিয়ে যাওয়ায় তাঁদের হতাশ হয়েই ফিরতে হয়। পর্যটকদের এই সমস্যার জন্যেই মালবাজারে গরুমারা জাতীয় উদ্যানের একটি বর্ধিত টিকিট কাউন্টার মালবাজারে খোলার দাবি এলাকাবাসীদের।
মালবাজার ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশন এর অন্যতম কর্মকর্তা শুভাশিস রায়ের কথায়, ‘‘আমরা বছরের পর বছর ধরে মালবাজারে গরুমারার পৃথক টিকিট কাউন্টারের দাবি জানিয়ে এসেছি। অনেক পর্যটকই লাভা, লোলেগাঁও মালবাজারে থেকেই ঘোরেন। তাঁরা জঙ্গলে যেতে চাইলে কাউন্টারের অভাবে সমস্যায় পড়েন। সে কারনেই আমরা প্রশাসনিক স্তরে একাধিকবার ওই দাবি জানিয়েছি।’’ মালবাজার শহরের ট্যুর অপারেটর রঞ্জন প্রসাদ, সন্তু চৌধুরীদের কথায়, ‘‘কলকাতা থেকে ডুয়ার্সের একমাত্র ট্রেন কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস মালবাজারের নিউ মাল জংশনে দাঁড়ায়। প্রচুর পর্যটক মালবাজারের স্টেশনে নেমে শহরের ওপর দিয়েই জঙ্গল ভ্রমণে যান। মালবাজারে পৃথক কাউন্টার তৈরি হলে তাঁদের সময় এবং অর্থ দুইই বাঁচবে।’’
তবে মালবাজার পুর এলাকায় গরুমারার পৃথক কাউন্টারের দাবিটি সম্বন্ধে রাজ্যের বনমন্ত্রী বিনয় বর্মন ওয়াকিবহাল বলে জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘মালবাজারের তরফে শহরে পৃথক কাউন্টার তৈরির দাবির বিষয়টি আমি জানি। কাউন্টারটি তৈরি করতে গেলে পৃথকভাবে কর্মী নিয়োগ করতে হবে। সেজন্যে সরকারি বেশ কিছু স্তরের অনুমোদন প্রয়োজন। মালবাজারে যাতে পৃথক কাউন্টার তৈরি করা যায় সেজন্যে বন দফতর সদর্থক চেষ্টাই করবে।’’