অসহায়: জ্বরের রোগীতে ভর্তি শিলিগুড়ি হাসপাতাল। শয্যা না পেয়ে মশারি ছাড়া মাটিতেই শুতে হচ্ছে অনেককে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক
ডেঙ্গিতে আক্রান্তদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে। সরকারি সূত্রের খবর, যত নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছে, ততই ডেঙ্গিতে আক্রান্তের বিষয়টি সামনে আসছে।
ফলে, শহরের হাকিমপাড়া, কলেজপাড়া, প্রধাননগর শুধু নয়, গোটা শহরেই ধীরে ধীরে ডেঙ্গির বাহক মশা ছড়াচ্ছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। হাসপাতালে তো জ্বরে আক্রান্তদের রোগীদের রাখার প্রায় জায়গা নেই। নার্সিংহোমেও ‘বেড’ পেতে দীর্ঘ লাইন দিতে হচ্ছে। শিলিগুড়ির নার্সিংহোম মালিকদের সংগঠন সূত্রের খবর, শহর ও লাগোযা এলাকায় গত সাত দিনে অন্তত ৪০০ জন নানা নার্সিংহোমে ভর্তি হয়েছেন। যাঁদের অনেকের রক্ত পরীক্ষায় এনএস ১ মিলেছে। হাসপাতাল সূত্রের দাবি, রবিবার ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছেছে ৩৪৯ জন। যা বৃহস্পতিবারে ছিল ৩১৫ জন।
মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত বিশ্বাস বলেন, ‘‘রক্ত পরীক্ষা আগে ১০০ জন করে করা হচ্ছিল। এখন বাড়ি লোক দিয়ে বেশি করে করা হচ্ছে। ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা কিছুটা বাড়ছে। হাসপাতাল থেকে রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট যাতে প্রতিদিন করে দেওয়া যায় সেই চেষ্টা চলছে।’’ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং স্বাস্থ্য দফতর জনিয়েছে, তাতে যাদের হয়নি তাঁরা কিছুটা নিশ্চিত হয়ে প্রয়োজনে বাড়িতে থেকে জ্বরের চিকিৎসা করাতে পারবেন।
এতদসত্ত্বেও পুরসভার একাংশের তেমন হেলদোল নেই। রবিবার পর্য়ন্ত পুরসভায় আলাদা করে ডেঙ্গি সেল খোলা হয়নি। বাসিন্দাদের দাবি, পুরসভায় ২৪ ঘম্টা সহায়তার জন্য সেল খোলা হোক। কারও জ্বর সারছে না কিংবা ভর্তির দরকার হলে পুরসভার পক্ষ থেকে পরামর্শ দেওয়ার ব্যবস্থা হোক। শুধু তাই নয়, শহরের নির্মীয়মান বহুতলের ছাদে যতেচ্ছ জল জমা রুখতে পুরসভা কেন কড়াকড়ি করছে না তা নিয়েও সন্দেহ দানা বাঁধছে। পুরসভার একাংশের সহ্গে একশ্রেণির প্রোমোটারের আঁতাতের জেরে যথেচ্ছ মশার বংশবৃদ্দি হচ্ছে কি না তা নিয়েও তদন্তের দাবি উঠেছে।
রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব ভীষণ উদ্বিগ্ন শিলিগুড়ি পুরসভার বেহাল দশা নিয়ে। মন্ত্রী বলেন, ‘‘যাঁর যা করণীয় তা না করার ফলেই শিলিগুড়িবাসীকে বিপদের মুখে পড়তে হচ্ছে।’’ তৃণমূলের তরফে পুরসভার বিরোধী দলনেতা রঞ্জন সরকার জানিয়েছেন, তাঁরাই জ্বরে আক্রান্তদের সবরকম সহায়তা করতে নিয়মিত হাসপাতালে তদারকি করছেন। প্রয়োজনে ২৪ ঘণ্টা একটি হেল্প ডেস্ক চালুর কথাও বাবছেন তৃণমূল কাউন্সিলররা। রঞ্জনবাবু বলেন, ‘‘মেয়র অশোক ভট্টাচার্যের ভূমিকা শহরের মানুষ দেখছেন। ডেঙ্গিতে মৃত্যুর দায় উনি এড়াতে পারেন না।’’
তবে মেয়র দাবি করেছেন, পুরসবার তরফে যথাসাধ্য কাজ করা হচ্ছে। মেয়র জানান, সকাল থেকে রাত পর্য়ন্ত ডেঙ্গি আক্রান্ত এলাকায় যাচ্ছেন। তিনি নার্সিংহোম, হাসপাতালে গিয়েও রোগী ও পরিবারের সঙ্গে কথা বলছেন। এদিন ৪ নম্বর ওয়ার্ডে শিলিগুড়ি ওয়েলফেয়ার অর্গানাইজেশনের তরফে সচেতনতা প্রচারে অংশ নেন মেয়র। এলাকায় ব্লিচিং ছড়ানো, মশা মারতে নর্দমাগুলোতে তেল স্প্রে করা হয়। বিকেলে ২ নম্বর ওয়ার্ডে একটি সচেতনতা প্রচার সভাও করেন বাসিন্দাদের নিয়ে। উপস্থিত ছিলেন মেয়র পারিষদ শঙ্কর ঘোষও। মেয়র বলেন, ‘‘শহরের নির্মীয়মান বহুতলে জল জমে মশার বাড়বাড়নম্ত হয়েছে দেখলেই কাজ বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। আরও কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।’’